ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচী

৪৮ বিঘা জমির মালিকের নামেও কার্ড

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ১৮ অক্টোবর ২০১৬

৪৮ বিঘা জমির মালিকের নামেও কার্ড

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ১৭ অক্টোবর ॥ কখনও ঝি’র কাজ আবার কখনও এর-ওর কাছে হাত পেতে চলছে ছাহেরার জীবন-জীবিকা। এরপরও স্বামীহারা এ মানুষটি একমাত্র ছেলেকে পড়াচ্ছেন। ছেলে নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। চাকামইয়া ইউনিয়নের নিশাবাড়িয়া গ্রামে বাড়ি। হতদরিদ্র এ নারীর ভাগ্যে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর সুযোগ জোটেনি। পায়নি ১০ টাকা কেজি দরের চাল কেনার সুবিধা। একই দশা নাছিমার। স্বামী থেকেও নেই। দীর্ঘ অসুখে ঘরের বোঝা হয়ে গেছেন উপার্জনক্ষম মানুষ সিদ্দিক ফকির। তিনজনের সংসারের ঘানি এখন বইছেন নাছিমা। কখনও ঝি’র কাজ আবার কখনও প্লাস্টিকের বোতল-শিশি বিক্রি করে যা পায় তা দিয়ে জোড়াতালির সংসার। চুঙ্গাপাশা গ্রামে বাড়ি। এ নারীর ভাগ্যেও জোটেনি ১০ টাকা কেজি দরে চাল কেনার সুযোগ। এক শতক জমি নেই। বাঁধের সেøাপে বসবাস। জানালেন, ঈদের সময় ১০ কেজি চালও তার ভাগ্যে জোটেনি। বঞ্চিত রয়েছেন কাছিমখালী গ্রামের হতদরিদ্র কাদের মাঝি। অথচ সম্পদশালী শান্তিপুর গ্রামের মতিউর রহমান, নুর ইসলাম, আলী আকবর হাওলাদার, আব্দুস- সালাম এরা ১০ টাকা কেজিতে চাল কেনার সুযোগ পেয়েছেন। পূর্ব চাকামইয়া গ্রামের আলাউদ্দিন হাওলাদার যিনি ৪৮ বিঘা কৃষিজমির মালিক। সারা বছরের খোরাকি রয়েছে ঘরে। কোন অভাব নেই। অবস্থাপন্ন পরিবার। সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর ১০ টাকা কেজি দরের চাল কেনার সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু পূর্ব চাকামইয়া গ্রামের আব্দুস সালাম, আব্দুল কালাম, দুলাল সিকদার, বারেক হাওলাদার, কালাম হাওলাদার, সোহাগ, আব্দুল হক- এরা কেউ কার্ড পায়নি। এরা ভূমিহীন কিংবা হাইলা-কামলা। একই দশা দিন আনে দিন খায় অবস্থা ৭৫ বছর বয়সী বুর্জুগ চৌকিদারের। বৃদ্ধা স্ত্রীসহ পাঁচজনের সংসারে যোগান দিতে বয়োবৃদ্ধ এ মানুষটি এখনও কামলা দেন। বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়া এ মানুষটির ভাগ্যে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর সুবিধা জোটেনি। তালিকা তৈরিতে নিয়োজিতদের বান্ধব হতে পারেননি। ইউপি মেম্বার জাকির মৃধার নেক দৃষ্টির বদৌলতে এভাবেই তালিকা হয়েছে বলে এখানকার বঞ্চিতদের অভিযোগ। অবস্থাপন্নরা পেয়েছেন ফেয়ার প্রাইস কার্ড। কলাপাড়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের এক নম্বর ইউনিয়নের এ কর্মসূচীর দুই নম্বরি কর্মকা-ের খ-চিত্র মাত্র। সীমাহীন অনিয়ম আর স্বজনপ্রীতি হয়েছে খাদ্যবান্ধব এ কর্মসূচীর তালিকা তৈরিতে। প্রধানমন্ত্রীর দারিদ্র্য বিমোচনের যুগান্তকারী এ উদ্যোগকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। শুধু তালিকা তৈরি নয়, বিতরণে নিয়োজিত ডিলাররা করছেন যাচ্ছেতাই অবস্থা। সর্বোচ্চ ২৫ কেজি করে চাল দেয়া হচ্ছে। স্থানীয়রা জানায়, ২৫ কেজিরও কম দেয়া হয়েছে সেপ্টেম্বর মাসের বিতরণে।
×