ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ সুইফট কোড শনাক্ত করতে কেন ব্যর্থ হলো তার সুরাহাও পাওয়া যায়নি

ইকোনমিস্ট বলছে রিজার্ভ চুরির প্রতিবেদন চাপা দেয়া হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ১৮ অক্টোবর ২০১৬

ইকোনমিস্ট বলছে রিজার্ভ চুরির প্রতিবেদন চাপা দেয়া হচ্ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ গত ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংকে সাইবার ডাকাতি হয়। নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনাটি আধুনিক যুগে সবচেয়ে মনোযোগ আকর্ষণকারী ব্যাংক ডাকাতিগুলোর একটি। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ঘটনাটি ব্যাপক আলোচনায় আসে। অথচ বাংলাদেশে ওই সাইবার ডাকাতির ঘটনার পর গঠিত তদন্ত কমিটি যে প্রতিবেদনটি দিয়েছে তা এখনও প্রকাশ করেনি সরকার। সর্বশেষ গত মাসে প্রতিবেদনটি প্রকাশের কথা থাকলেও তা হয়নি। এমন প্রেক্ষাপটে প্রতিবেদনটি আদৌ প্রকাশ হবে কিনা তা নিয়েও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে সংশয় প্রকাশ করা হচ্ছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সাক্ষাতকার গ্রহণের ভিত্তিতে ব্রিটিশ সংবাদ ম্যাগাজিন দ্য ইকোনমিস্ট দাবি করেছে, ‘প্রতিবেদনটি কখনও প্রকাশ্যে আসার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে’। প্রতিবেদনটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলছে বলে গুঞ্জন থাকার কথাও জানানো হয়েছে। এ ব্যাংক ডাকাতিকে রহস্যময় হিসেবে উল্লেখ করে ‘এ রহস্য রহস্যই থেকে যাবে’ বলে উদ্বেগ জানিয়েছে দ্য ইকোনমিস্ট। চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি হয়। প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার চুরির চেষ্টা করা হলেও শেষ পর্যন্ত হ্যাকাররা ৮১ মিলিয়ন ডলার ফিলিপিন্সে স্থানান্তরে সক্ষম হয়। ওই অর্থ ফিলিপিন্সের আরসিবিসি ব্যাংকের জুপিটার ব্রাঞ্চের চারটি এ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়। ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, তখন থেকে সাইবার ডাকাতি সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশের চেষ্টা দুইবার থামিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। সর্বশেষ গত মাসে প্রতিবেদনটি প্রকাশের কথা থাকলেও তা হয়নি। ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরির ঘটনায় সাবেক গবর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনকে আহ্বায়ক করে গত ১৫ মার্চ তদন্ত কমিটি গঠন করে সরকার। কমিটিকে ৩০ দিনের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন এবং ৭৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। সময়মতো প্রতিবেদন জমা দেয় মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি। কমিটির অপর দুই সদস্য ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব গকুল চাঁদ দাস। এ কমিটি গত ৩০ মে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। এ সময় অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যে আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। এরপর গত ২১ জুলাই অর্থমন্ত্রী সংসদে বলেন, কয়েক দিনের মধ্যে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। কিন্তু প্রতিবেদন জমা দেয়ার চার মাস পরও প্রকাশ্যে আসেনি সেটি। ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক কেন এক মাস পর্যন্ত সাইবার ডাকাতির তথ্যটি গোপন করেছিল, ব্যাংক কর্মকর্তারা এর সঙ্গে জড়িত ছিল কিনা, ভবিষ্যতে কিভাবে এ ধরনের সাইবার ডাকাতি ঠেকানো যাবে তা নির্ধারণ করাই ছিল ওই তদন্ত কমিটির কাজ। ইকোনমিস্টের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সাবেক গবর্নর ফরাসউদ্দিন তদন্ত প্রতিবেদনের ব্যাপারে কোন মন্তব্য করবেন না। আর প্রতিবেদনটি প্রকাশ না করায় গুঞ্জন উঠেছে যে প্রতিবেদনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুর্বলতা উঠে আসায় এবং ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় তা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলছে। ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সাইবার ডাকাতির পর থেকে সরকার অবিরতভাবে বহিরাগত হ্যাকার, নিউইয়র্ক ফেডারেল এবং সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন বা সুইফটকে দায়ী করে আসছে। কিন্তু কিভাবে সাইবার ডাকাতরা সুইফট কোড ব্যবহার করে নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ থেকে টাকা সরিয়ে নিতে পারল সে ব্যাখ্যা এখনও কেউ দিতে পারেনি। কিংবা নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভও সেই কোড শনাক্ত করতে কেন ব্যর্থ হলো তার সুরাহাও পাওয়া যায়নি।
×