ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

খুলনা কারাগারে জেএমবি জঙ্গী আরিফের ফাঁসি কার্যকর

প্রকাশিত: ০৮:০১, ১৭ অক্টোবর ২০১৬

খুলনা কারাগারে জেএমবি জঙ্গী আরিফের ফাঁসি কার্যকর

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ ঝালকাঠিতে দুই বিচারককে বোমা মেরে হত্যার দায়ে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত জেএমবি নেতা আসাদুল ইসলাম ওরফে আরিফের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। তাকে নিয়ে এ হত্যা মামলায় সাতজনের ফাঁসি হলো। রবিবার রাত সাড়ে দশটায় খুলনা জেলা কারাগারে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়। ২০০৪ সালের ১০ মে কুখ্যাত নরঘাতক এরশাদ শিকদারের ফাঁসির পর খুলনার এ কারাগারে জেএমবি জঙ্গী আরিফের ফাঁসি কার্যকর হলো। ২০০৮ সাল থেকে ফাঁসির দ-প্রাপ্ত আরিফ (৪২) খুলনা জেলা কারাগারে ছিল। কারাগার সূত্রে জানা গেছে, ঝালকাঠি আদালতের সিনিয়র সহকারী জজ সোহেল আহম্মেদ ও জগন্নাথ পাঁড়ে হত্যা মামলায় মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামি জেএমবি জঙ্গী আসাদুল ইসলাম আরিফের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে রবিবার রাত সাড়ে দশটায়। ফাঁসি কার্যকরের সময় ডিআইজি প্রিজন টিপু সুলতান, খুলনার ডিসি নাজমুল আহসান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নুর-ই আলম, সিভিল সার্জন ডাঃ আব্দুর রাজ্জাক, খুলনা মেট্রোপলিটন ও জেলা পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তা, র‌্যাবের কর্মকর্তা, কারা সুপার কামরুল ইসলাম, জেলার জান্নাতুল ফরহাদসহ ১২ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এর আগে খুলনা জেলা কারাগার মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতি আতাউল্লাহ আসামিকে তওবা পড়ান। রবিবার দুপুর একটার দিকে ফাঁসির আসামি আসাদুল ইসলাম ওরফে আরিফের সঙ্গে শেষবারের মতো দেখা করতে তার স্ত্রী, দুই মেয়ে এবং বোন-ভগ্নিপতি, আত্মীয়সহ ১৮ সদস্য খুলনা কারাগারে আসে। কথাবার্তা শেষে বিকেল চারটার দিকে তারা বের হয়ে যায়। তার একাধিক আত্মীয় জানায়, আসাদুল ইসলাম ওরফে আরিফ তার কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত নয় এবং তার মৃত্যুতে স্বজনদের শোকাহত না হতে বলেছে। এছাড়া ফাঁসি কার্যকরের পর তার মরদেহ নিজ বাড়ি বরগুনার বান্দরগাছী না নিয়ে বাগেরহাটের মোল্লাহাটের উদয়পুর গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে দাফন করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছে। আরিফের ফাঁসি কার্যকর করতে আগে থেকে খুলনা জেলা কারাগারে ফাঁসির মঞ্চ ও জল্লাদ প্রস্তুত রাখাসহ সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রাখা হয়েছিল। কারাগারের ভেতরে কারারক্ষী ও বাইরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়। শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়। জেএমবি জঙ্গীর ফাঁসির খবরে বিপুলসংখ্যক উৎসুক মানুষ রবিবার সন্ধ্যা থেকে কারাগার এলাকায় ভিড় জমায়। কারাগারসংলগ্ন রাস্তাগুলোতে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। সূত্র জানায়, ২০০৫ সালের ১৪ নবেম্বর ঝালকাঠি আদালতে যাওয়ার পথে সিনিয়র সহকারী জজ সোহেল আহম্মেদ ও জগন্নাথ পাঁড়ের গাড়িতে বোমা হামলা চালিয়ে তাদের হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় বোমা হামলাকারী ইফতেখার হোসেন মামুন, জেলা জজ আদালতের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী আবদুল মান্নান ও দুধ বিক্রেতা বাদশা মিয়া আহত হন। ২০০৬ সালের ২৯ মে এ হত্যা মামলার রায়ে ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ রেজা তারিক আহম্মেদ সাতজনকে অভিযুক্ত করে ফাঁসির দ-াদেশ দেন। এ মামলায় ইতোপূর্বে ছয় আসামির ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। এরা হলোÑ জেএমবির শীর্ষনেতা শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলাভাই, শায়খ আব্দুর রহমানের ভাই আতাউর রহমান সানি, জামাতা আবদুল আউয়াল, ইফতেখার হোসেন মামুন, খালেদ সাইফুল্লাহ ওরফে ফারুক। ২০০৭ সালের ৪ মার্চ রাষ্ট্রপতি এ ছয় জঙ্গীর প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করে দিলে একই বছরের ২৯ মার্চ রাতে তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। একই মামলায় মৃত্যুদ-প্রাপ্ত অপর আসামি জেএমবি জঙ্গী আরিফ পলাতক অবস্থায় ২০০৭ সালের ১০ জুলাই ময়মনসিংহ থেকে গ্রেফতার হয়। এরপর অরিফ আপীল করে। ২৮ আগস্ট প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ জেএমবি জঙ্গী আসাদুল ইসলাম ওরফে আরিফের রিভিউ আবেদন খারিজ করে মৃত্যুদ- বহাল রাখেন।
×