আজ যা বর্তমান
পরে তাই হয়ে উঠবে অতীত
যা কিছু পুরাতন
মিলিয়ে যাচ্ছে দ্রুত
আর এখন যে প্রথম
পরে সেই হয়ে উঠবে শেষ
কেননা, সময়ে পরিবর্তন আসে।
‘দি টাইমস দে আর আ-চেঞ্জিং’ একটি শাশ্বত গান। যার অবস্থান দেশ, কাল ও স্থানিক চেতনার উর্ধে। একে গণসঙ্গীত বা লোকসঙ্গীত জাতীয় গান হিসেবে ক্যাটাগোরাইজ করা যায়। এ গানে ষাটের দশকের সমাজ প্রেক্ষাপটকে তুলে ধরা হলে বর্তমান সময়ের জন্যও এটি সমান গুরুত্ব বহন করছে। রাজনৈতিক ম্যাসেজ যেমন রয়েছে তেমনি শোষিত মানুষের কথাও বলা হয়েছে। ডিলানের তৎকালীন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি ফুটে উঠেছে এ গানে। রক্ষণশীলদের জন্য ম্যাসেজ দেয়া হয়েছে যে, পরিবর্তনটাই চিরন্তন সত্য। ডিলান অধিকার আদায় আন্দোলনের অন্যতম অগ্রদূত।
সমাজের পরিবর্তনশীলতার রীতি কেউ যদি গ্রহণ না করে তবে সে সেই পরিবর্তনশীলতার ঢেউয়ের তোড়ে ভেসে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। পরিবর্তনশীলতা একটা প্রবাহমান নদীর মতো। ক্রমেই তা পরিব্যাপ্ত হয়। পরিবর্তনের ভরা জোয়ারের সঙ্গে যত দ্রুত খাপ খাওয়ানো বা মানিয়ে নেয়া যায় ততই মঙ্গল। নদীতে স্রোতের অনুকূলে সাঁতার কাটাই শ্রেয়। প্রতিকূলে সাঁতার কাটা বিপজ্জনক। জলে ডুবে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মৃত্যুর ভয় থাকে। পাথরই কিন্তু পানিতে ডুবে যায় সবার আগে। পাথর এখানে হতে পারে রক্ষণশীলতার রূপক।
গানের দ্বিতীয় স্তবকে লেখক ও সমালোচকদের ভূমিকার কথা বলা হয়েছে যারা কলমের ভাষায় কথা বলে। তাদের দেয়া পূর্বাভাসগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আবার এমনও বলা যায়, যে কোন ঘটনা ঘটার যেমন সম্ভাবনা থাকে তেমনি অনিশ্চিয়তাও থাকে। জীবন একটা ধাঁধার মতো। প্রতিটা জীবনেরই আছে অসীম সম্ভাবনা। এখানে ডিসিসন মেকিংয়ের ব্যাপারটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বুঝে শুনে ধীরে সুস্থে সিদ্ধান্ত নেয়াই শ্রেয়। যে কোন মুহূর্তে ঘুরে যেতে পারে ভাগ্যের চাকা, হতে পারে অপ্রত্যাশিত বিজয়।
তৃতীয় প্যারাটা আমেরিকান কংগ্রেসম্যান আর সিনেটরদের জন্য চপেটাঘাতস্বরূপ। যুদ্ধবাজ পলিটিশিয়ানদের স্বার্থ রক্ষা করা মানবতার জন্য বড় হুমকি। গানের এই অংশে এ কথারই সুর ভেসে আসে। ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে এখানে। এমন হতে পারে যে, রাজনীতিবিদরা আজ যাদের বন্ধু ভাবছে অদূর ভবিষ্যতে তারাই হবে শত্রু।
গানের চতুর্থ অংশ ‘রক আন্ড রোল’ বিষয়ক। এখানে অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের ইচ্ছাকে মূল্য দেয়ার কথা এসেছে। প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি নয়, বরং এই পরিবর্তনকে গ্রহণ করে এই অগ্রযাত্রার পথকে সুগম করার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, গানটির প্রেক্ষাপট ষাটের দশক।
শেষ প্যারাতে পর্যায়ক্রমিতা আর পরিবর্তনপ্রবণতার কথা এসেছে। বিফলতা-সফলতা, সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা এগুলো পর্যায়ক্রমে আসে। যদিও এসব ঘটনা সবসময়ই অনিশ্চিত। জীবনের চাকা ঘুরতেই থাকবে। কেউ সফলতার শীর্ষে উঠবে আবার কারও পতন ঘটবে।
গত পঞ্চাশ বছর ধরে এসব জীবনমুখী গানের সৃষ্টিকর্তা রবার্ট এ্যালেন জিমারম্যান (জন্ম ২৪ মে, ১৯৪১)। তবে তিনি পরিচিত বব ডিলান নামের একটি ধার করা নামে। এ বছর সাহিত্যে নোবেল পাওয়া ডিলানের গানের কথা মূলত রাজনীতি, মানবতা, যুদ্ধবিরোধী, সমাজ, দর্শন ও সাহিত্যিক প্রভাব সংবলিত। তবে এগুলো তখনকার জনপ্রিয় ধারার কথিত নিয়ম বহির্ভূত ছিল এবং এ ধারার বিপরীত হিসেবে ধরা হত। নিজস্ব সঙ্গীত ধারা প্রসারের পাশাপাশি তিনি আমেরিকার বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীতের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করেছেন। ফোক রকের কথা বললেই বব ডিলানের নামটা চলে আসে। তিনি আমেরিকান লোকগীতি ও কান্ট্রি, ব্লুজ থেকে রক এ্যান্ড রোল, ইংরেজী, স্কটিশ, আইরিশ লোকগীতি, এমনকি জ্যাজ এবং গসপেলও গেয়েছেন। বব ডিলান তো আসলে একজন কবি। যিনি তার কবিতাকে গিটারের আশ্রয়ে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন। সাহিত্যে এ বছর তিনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: