ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের টাকা আত্মসাত

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ১৭ অক্টোবর ২০১৬

বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের টাকা আত্মসাত

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ হাকিমপুর উপজেলার আলিহাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম রসুল বাবু এবং স্থানীয় সোনালী ব্যাংক শাখার ম্যানেজার এস এম সাখাওয়াত হোসেন ১২৮ জন বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর প্রায় ৭ লাখ টাকা আত্মসাত। এ ঘটনায় উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা এ ভাতাভোগীদের কার্ডগুলো (বই) জব্দ করেছেন। জানা গেছে, এ বছর আলীহাট ইউনিয়নে ২৪ বিধবা, ৫২ প্রতিবন্ধী ও ৫২ জনকে বয়স্ক ভাতার জন্য নির্বাচিত করা হয়। বছরে বিধবরা প্রত্যেকেই পাবেন ৪ হাজার ৮০০ টাকা, প্রতিবন্ধীদের মধ্যে ১৬ জন পাবেন ১২ হাজার টাকা ও ৩৬ জন পাবেন ৬ হাজার টাকা করে। বয়স্ক ভাতাভোগী প্রত্যেকেই পাবেন ৪ হাজার ৮০০ টাকা করে। গত জুলাই মাসে এসব ভাতাভোগীর এক বছরের বরাদ্দের টাকা সোনালী ব্যাংকের হাকিমপুর শাখায় আসে। ৮ সেপ্টেবর সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক আনুষ্ঠানিকভাবে পৌরসভা ও আলীহাট ইউনিয়নের ভাতাভোগীদের মাঝে কার্ড বিতরণ করেন। সেই সঙ্গে ঈদ-উল-আযহার আগেই ভাতাভোগীরা যেন টাকা উত্তোলন করতে পারেন, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেন। উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় সূত্রমতে, চেয়ারম্যান বাবু এবং সোনালী ব্যাংক ম্যানেজার এসএম সাখাওয়াত সমাজসেবা কর্মকর্তার কাছে তথ্য গোপন করে এসব ভাতাভোগীর বরাদ্দের ৬ লাখ ৭৬ হাজার ৬০০ টাকা অবৈধভাবে উত্তোলন করেন। এরপর চেয়ারম্যান ও ব্যাংক ম্যানেজারের টাকা আত্মসাত ও জালিয়াতির বিষয়টি জানতে পেরে, চেয়ারম্যান বাবুর কাছ থেকে ১২৮ জনের কার্ড জব্দ করে নেয়া হয়। উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, চেয়ারম্যানের কাছ থেকে জব্দ করা ভাতাভোগীদের কার্ডগুলোতে ব্যাংক হতে লাল কালি দিয়ে টাকার পরিমাণ বসানো রয়েছে। কিন্তু তাতে টাকা প্রাপ্তি এসব বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীদের কোন টিপসই নেই। হাকিমপুর সোনালী ব্যাংক শাখার কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ভাতাভোগী ১২৮ জনের টাকা ব্যাংক থেকে অবৈধভাবে উত্তোলন করা হয়। এরপর চেয়ারম্যান বাবু এবং ব্যাংক ম্যানেজার সাখাওয়াত গত ১০ সেপ্টেম্বর স্থানীয় আবাসিক হোটেল ‘ক্যাপিলায়’ বসে এসব টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন। সরেজমিনে আলীহাট ইউনিয়নে গেলে নতুন ভাতাভোগীদের মধ্যে আমজাদ আলী এবং আব্বাস আলী জানান, ব্যাংকে বয়স্ক ভাতার টাকা আসার কথা লোকমুখে শুনে ব্যাংকে যাই। ব্যাংক থেকে জানানো হয়, চেয়ারম্যান বাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করতে। আমরা কয়েকজন চেয়ারম্যান বাবুর কাছে গেলে তিনি বলেন, টাকা আসেনি, আসলে জানানো হবে। তখন কার্ডও পাবেন, টাকাও পাবেন বলে চেয়ারম্যান তাদের ফিরিয়ে দেন। চেয়ারম্যান বাবু ও ব্যাংক ম্যানেজারের শাস্তি দাবি করেন এসব ভুক্তভোগী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আলীহাট ইউনিয়ন পরিষদের কয়েক ইউপি সদস্য জানান, তারা উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীদের জন্য আসা টাকা বাবু চেয়ারম্যান ব্যাংক থেকে তুলে নিয়েছেন। তিনি এবং ব্যাংক ম্যানেজার এই টাকা আত্মসাতের মাধ্যমে ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন। তখন সমাজসেবা কর্মকর্তা জানান, ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। পরে বিষয়টি ভাতাভোগীদের জানানো হয়। এদিকে প্রতিবন্ধী শাপলা বেগম জানান, আমাদের টাকা বাবু চেয়ারম্যান গ্রাস করেছে। আমরা তার বিচার চাই? কেন তিনি আমাদের টাকা মারলেন। হাকিমপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মইনুল হক জানান, ভাতার টাকা সমাজসেবা কার্যালয়ের এ্যাকাউন্ট থেকে সরাসরি ভাতাভোগীদের এ্যাকাউন্টে যাবে। ব্যাংক ভাতাভোগীদের ছবি দেখে চিহ্নিত করে চেকের মাধ্যমে বা চেক ছাড়া সমাজসেবা কার্যালয়ের দেয়া বইয়ে এবং ব্যাংকে রক্ষিত হিসাবের বইয়ে টিপ-সই নিয়ে টাকা দেবে। কিন্তু এখানে তা করা হয়নি। ভাতাভোগীদের টাকা চেয়ারম্যান তুলে নেয়ার অভিযোগ পেয়ে তারা বইগুলো জব্দ করেছেন। সেখানে ভাতাভোগীদের কোন টিপ-সই নেই। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম রসুল বাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তিনি ব্যাংক থেকে টাকা তুলেছেন ঠিকই। কিন্তু টাকা তার কাছে রেখেছেন। ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে পারেন না এবং এটি আত্মসাতের পর্যায়ে পড়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে জানান, টাকা আত্মসাত করা হয়নি। সময়মতো বিতরণ করা হবে। আরেক অভিযুক্ত হাকিমপুর সোনালী ব্যাংক শাখার ম্যানেজার এসএম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, দেখুন এগুলো হিসাবের অনেক বিষয় রয়েছে। তাই আপনারা এমন কিছু করেন না, যা ব্যাংকের ইমেজ নষ্ট হয়। হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শুকরিয়া পারভীন জানান, ইউপি চেয়ারম্যান ভাতাভোগীদের এ্যাকাউন্ট থেকে কিভাবে টাকা তুললেন, তা আশ্চর্য হওয়ার বিষয়। তিনি তো টাকা তুলতে পারেন না। এটি আত্মসাত বা জালিয়াতির পর্যায়ে পড়ে। এ ঘটনায় জড়িত প্রত্যেকের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান তিনি।
×