ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সম্পর্কের নতুন দিগন্ত

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৭ অক্টোবর ২০১৬

সম্পর্কের নতুন দিগন্ত

বিশ্বের সর্ববৃহৎ জনসংখ্যার দেশ চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের দুই দিনব্যাপী বাংলাদেশ সফরটি এক কথায় বলা চলে সফল ও ফলপ্রসূ। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্টের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর ঘোষিত বাংলাদেশ-চীন ২৩ দফা যৌথ বিবৃতিতে এর সম্যক প্রমাণ মেলে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, অবকাঠামো উন্নয়ন, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধ, সমুদ্রসীমা রক্ষায় ঢাকা-বেজিং একযোগে কাজ করার কথা বলা হয়েছে। এর পাশাপাশি দু’দেশ দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার করতে সম্মত হয়েছে। মোট কথা, দুটি দেশের মধ্যে অংশীদারিত্বমূলক সম্পর্ক এখন উন্নীত হয়েছে কৌশলগত সম্পর্কে। যে কারণে ২০১৭ সালকে ঘোষণা করা হয়েছে মৈত্রী ও বিনিময়ের বছর হিসেবে। বাংলাদেশের উত্তরোত্তর অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির গতিধারার প্রেক্ষিতে এটি ছিল অপরিহার্য ও অত্যাবশ্যক। এর মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে একটি জ্ঞানভিত্তিক মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়ে চূড়ান্তভাবে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়া বাংলাদেশের জন্য সহজতর হবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি উল্লেখও করেছেন তাঁর বক্তৃতায়। চীন বাংলাদেশের বিদ্যুত, জ্বালানি, যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তিসহ অবকাঠামো খাতে প্রায় ২ হাজার ৪০০ কোটি বা ২৪ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন করতে সম্মত হয়েছে। এসব বিষয়ে স্বাক্ষরিত হয়েছে ২৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক। এর মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য দেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদনে প্রথমবারের মতো চীনের সহযোগিতার বিষয়টি। এর আওতায় দু’দেশের সমান অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে পটুয়াখালীর পায়রায় এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণাধীন। এক হাজার ২২৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন অন্য বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মিত হবে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে বেসরকারী শিল্প উদ্যোক্তার সঙ্গে। এর বাইরেও চীন কর্ণফুলী নদীর নিচে টানেল নির্মাণ, ছয়টি জাহাজ ক্রয়, রাজধানী ঢাকার পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার আধুনিকায়নসহ পোশাক, ওষুধ ও চামড়া শিল্পে বিনিয়োগে সম্মত হয়েছে, যা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। এসবই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে সূচনা করবে নতুন দিগন্তের। বাংলাদেশের নিজ উদ্যোগে নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুসহ নানা প্রকল্পে চীন ইতোমধ্যে কারিগরি সহায়তা প্রদান করছে। সোনাদিয়া ও পায়রায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণেও চৈনিক সহযোগিতার বিষয়টি বিবেচনাধীন। এর বাইরেও বাংলাদেশ চীনের প্রেসিডেন্টের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ বা ওবোর নামে পরিচিত উন্নয়ন কৌশল ও রূপরেখায় সংযুক্ত হতে পারে। এই উদ্যোগে শামিল হলে চীনের সরকারী তহবিল থেকে স্বল্পসুদে ও সহজশর্তে ঋণ পাওয়া যায়। সড়ক ও সমুদ্রপথে ঐতিহাসিক ‘সিল্ক রুটের’ পুনরুজ্জীবনে বাংলাদেশ শরিক হলে এ অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণসহ অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি যে নতুন যুগে প্রবেশ করবে তাতে সন্দেহ নেই। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়Ñ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। সেই প্রেক্ষাপটে দুই বৃহৎ অর্থনীতির দেশ চীন ও ভারতের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর মাধ্যমে বাংলাদেশ নিজের অবস্থান সুদৃঢ় ও সংহত করতে পারে। এতে জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণসহ অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি সুনিশ্চিত হবে।
×