ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রামে সরবরাহকারীদের ২৬ কোটি টাকা আটকে রেখেছে রেল

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১৭ অক্টোবর ২০১৬

চট্টগ্রামে সরবরাহকারীদের ২৬ কোটি টাকা আটকে রেখেছে রেল

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে সরবরাহকারীদের প্রায় ২৬ কোটি টাকা আটকে রেখেছে প্রধান অর্থ উপদেষ্টা ও হিসাব অধিকর্তার দফতরের আওতায় থাকা পলোগ্রাউন্ডস্থ টিএ ব্রাঞ্চ। অর্থ মন্ত্রণালয় গত অর্থবছরে ৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও এ বছর দিয়েছে মাত্র ৪৩ কোটি টাকা। যা নিয়ে বেকায়দায় অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা। উল্লেখ্য, গত অর্থবছরে রেলের পূর্বাঞ্চলে সরবরাহকারীদের কাছ থেকে টেন্ডারের মাধ্যমে প্রায় ৮২ কোটি ক্রয়াদেশ/চুক্তিপত্র সম্পন্ন হয়েছে। গত বছরের বাকি প্রায় ১৫ কোটি টাকা চলতি অর্থবছরের বরাদ্দ থেকে পরিশোধ দেখানো হয়েছে। ফলে সরবরাহকারীদের মাত্র ৪ মাসে আটকে পড়া বিলের ২৬ কোটি টাকা কিভাবে পরিশোধ হবে তা নিয়ে রয়েছে তর্ক। এদিকে, এডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল (এডিজি) ফিন্যান্স এ বিষয়ে মন্তব্য করতে নারাজ। তাই তার মুঠোফোনে প্রতিবেদকের কল বাতিল করার ঘটনাও ঘটেছে বারবার। অভিযোগ উঠেছে, গত মাসের শেষের দিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে রেল ভবনে প্রেরিত নিষেধাজ্ঞা চিঠির কারণে সরবরাহকারীদের চেক প্রদান করছে না চট্টগ্রামের টিএ ব্রাঞ্চ। আবার অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি না নিয়ে সরবরাহকারীদের বিলের অর্থ পরিশোধ না করার সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে ঋণের মাধ্যমে ব্যবসা করা কয়েক সরবরাহকারী। তবে রেলের মতো বৃহদায়তন সরকারী প্রতিষ্ঠানে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করার পেছনে যারা কাজ করছে তারা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করতে এমন পাঁয়তারা করছে বলেও অভিযোগ করেছে। অথচ চুক্তি অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ না করলে বা চুক্তিকৃত পণ্য সরবরাহে দেরি হলে জরিমানা বা নিরাপত্তা জামানত কেটে রাখার মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু অর্থ বিভাগ সরবরাহকারীদের ২৬ কোটি টাকার চেক প্রদান না করায় উল্টো ঋণকৃত অর্থের সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে। এতে মুনাফার পরিবর্তে লোকসানের খেসারত দিতে হবে সরবরাহকারীদের। এ ব্যাপারে বিভাগীয় অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অধিকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জনকণ্ঠকে জানান, অর্থবছরে বাজেট প্রাপ্তির ওপর নির্ভর করে সরবরাহকারীদের বিল পরিশোধের ক্ষমতা। সরবরাহকারীদের টাকা আটকে আছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অভাবে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ছাড়পত্র না নিয়ে কোন বিল পরিশোধ করা যাবে না। এ বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে রেল ভবন থেকে। এদিকে, রেলের চাহিদা ও চুক্তি অনুযায়ী পণ্য ও যন্ত্রাংশ সরবরাহ করে বেকায়দায় পড়েছে সরবরাহকারীরা। পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান অর্থ উপদেষ্টা ও হিসাব অধিকর্তার অধীনে থাকা টিএ ব্রাঞ্চ বাজেট স্বল্পতার দোহাই দিয়ে সরবরাহকারীদের ঠেকিয়ে রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অতিরিক্ত অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অধিকর্তার (স্টোর) দফতরে বার বার ধরনা দিয়েও বিলের অর্থ আদায় করতে পারছে না। অথচ লিখিত চুক্তিতে পণ্য সরবরাহের পর পণ্যের গুণগত মান যাচাই বাছাইপূর্বক ব্যবহারকারী কর্তৃক টেস্ট রিপোর্ট প্রদানের পর বিলের অর্থ পরিশোধের বিধান রয়েছে। ঠিকা চুক্তিতে পণ্যের মূল্য পরিশোধে কোন ধরনের বিলম্ব বা সময়ক্ষেপণের নির্দেশনাও নেই। অথচ মাসের পর মাস ধরনা দিয়েও অর্থ আদায় করতে পারছে না সরবরাহকারীরা। অভিযোগ রয়েছে, সরবরাহকারীদের প্রায় ২৬ কোটি টাকা আটকা পড়েছে অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অধিকর্তার দফতরে। তবে বিভিন্ন তেল কোম্পানির অর্থ পরিশোধ করতে গিয়ে বাজেটের প্রায় ৮০ শতাংশ টাকা খরচ হয়ে যায়। বাকি ২০ শতাংশ অন্যান্য পণ্য ক্রয়ের বিপরীতে পরিশোধ করা হয়। ফলে তেল সরবরাহকারী ব্যতীত অন্যদের বিল আটকা পড়ে যায়। মাসের পর মাস বিল বকেয়া পড়ায় সরবরাহকারীদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পূর্বাঞ্চলীয় পলোগ্রাউন্ডস্থ বিভাগীয় অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অধিকর্তার টিএ দফতর সূত্রে জানা গেছে, প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকের (সিসিএস) আওতায় ‘৯৫০০ কোডে’ অর্থ বরাদ্দের মাধ্যমে ঠিকাদারদের সরবরাহকৃত পণ্যের বিল পরিশোধ করা হয়। সে অনুযায়ী ঠিকা চুক্তি সম্পাদন করা হয় সিসিএস দফতর থেকে।
×