ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে ট্যানারিপল্লীর নির্মাণ কাজ

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১৭ অক্টোবর ২০১৬

দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে  ট্যানারিপল্লীর নির্মাণ কাজ

রহিম শেখ, সাভার থেকে ফিরে ॥ দ্রুতগতিতে চলছে পাইলিং, দেয়াল, ছাদ ঢালাইসহ বিভিন্ন ধরনের নির্মাণ কাজ। দুটি ট্যানারিতে চামড়া বোঝাই ড্রাম ঘুরছে। অধিকাংশ ট্যানারিতে যন্ত্র স্থাপনে ব্যস্ত শ্রমিকরা। বর্জ্য পরিশোধনাগারের দুটি মডিউল চালুর প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। রবিবার সাভারের হরিণধরা মোড় পেরিয়ে চামড়া শিল্পনগরীতে এই চিত্র দেখা যায়। দেরিতে হলেও শেষ পর্যন্ত সাভারমুখী হচ্ছেন ট্যানারি মালিকরা। আর এর মূল কারণ আদালতের জরিমানা আরোপ। হাজারীবাগে থাকায় সেখানকার ১৫০ ট্যানারিকে গুনতে হচ্ছে প্রতিদিন মোট ১৫ লাখ টাকার জরিমানা। তাই তারা সাভারে আসার জন্য তৎপর হয়ে উঠেছেন। ইতোমধ্যে ১৫৪টি ট্যানারির মধ্যে সেখানে ৬৬টি ট্যানারির ভবনের প্রথম থেকে পঞ্চম তলা পর্যন্ত ছাদ নির্মিত হয়েছে। বিদ্যুত ও পানি সংযোগ পেয়েছে ২৫টি ট্যানারি। শিল্পমন্ত্রী জানিয়েছেন, আগামী ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে যে সকল ট্যানারি সাভারে স্থানান্তর করতে পারবে না তাদের ১ জানুয়ারি থেকে গ্যাস ও বিদ্যুত সংযোগ বিছিন্ন করে দেবে সরকার। রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে সাভার চামড়া শিল্পনগরীতে ট্যানারি স্থানান্তরে ১৩ বছর ধরে সরকার চেষ্টা চালাচ্ছে। সব শেষে গত ১০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে সরকার হাজারীবাগে কারখানা বন্ধ করার আলটিমেটাম দেয়। গত মাসে উচ্চ আদালতের রায়ে স্থানান্তরিত না হলে প্রত্যেক ট্যানারিকে প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। সেই থেকে হাজারীবাগের ১৫০ ট্যানারি প্রতিদিন ১৫ লাখ টাকা জরিমানা দিচ্ছে। রবিবার সরেজমিনে সাভার চামড়া নগরী ঘুরে দেখা গেছে, পুরোদমে চলছে বেশিরভাগ ট্যানারির কাজ। ২০৫টি প্লটে বরাদ্দ পেয়েছে ১৫৫ ট্যানারি। ইতোমধ্যে ১০টি ট্যানারি শিল্প প্রতিষ্ঠান উৎপাদন শুরু করেছে। প্রকল্পে ডাম্পিং স্থাপন করেছে ৪৭টি ট্যানারি। ১৫৪টি ট্যানারির মধ্যে সেখানে ৬৬টি ট্যানারির ভবনের প্রথম থেকে পঞ্চম তলা পর্যন্ত ছাদ নির্মিত হয়েছে। এর মধ্যে দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম তলার ছাদ নির্মাণ করতে পেরেছে ২৩ ট্যানারি। ওয়েট ব্লু করার জন্য ড্রাম বসিয়েছে অথবা বসানোর কাজ চলছে এমন ট্যানারির সংখ্যা প্রায় ৭০টি। অবশ্য ড্রাম চালানোর জন্য ভারি বিদ্যুত সংযোগ পেয়েছে ১৩ ট্যানারি। ৪৩টি ট্যানারি পানির মিটার স্থাপনের জন্য আবেদন করেছে। এর মধ্যে ১২ ট্যানারিকে পানির মিটার বসিয়ে দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি চালু হয়েছে মারসন্স ট্যানারি। রিলায়েন্স লেদার দু’মাস ধরে উৎপাদন করছে। মেশিন স্থাপন করে চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে এপেক্স, ঢাকা হাইড, ফরচুন, প্রিন্স, আজমেরি, ফেন্সি, সাথী, মদিনা, আমিন, সামিনা, বে, নবারুণসহ প্রায় ৩০টি ট্যানারি। তবে সব ট্যানারির কাজ শেষে চালু করতে ছয় মাসের বেশি সময় লাগবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। সিইটিপির দুটি মডিউল চালু করতে প্রতিদিন ১০ হাজার ঘনমিটার বর্জ্যের প্রয়োজন হবে। এ জন্য ৪৮টি ট্যানারির উৎপাদনে যাওয়া দরকার বলে মনে করেন কর্মকর্তারা। কিন্তু এ পর্যন্ত উৎপাদনে যেতে পেরেছে ১০টি ট্যানারি। ফলে সিইটিপির একটি অংশ চালু করতে যে পরিমাণ বর্জ্য দরকার, তা পাওয়া নিয়ে সংশয় আছে। অবশ্য সব সংশয় নাকচ করে দিয়ে চামড়া শিল্পনগরীর প্রকল্প পরিচালক আবদুল কাইউম বলেন, আমরা সিইটিপি চালু করব। পানির ব্যবস্থাও করব। এ ব্যাপারে শিল্পনগরীর প্রকল্প পরিচালক আবদুল কাইয়ুম বলেন, কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারের (সিইটিপি) দুটি মডিউলের কাজ প্রায় ৯৩ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। ট্যানারি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস এ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) সাবেক সভাপতি আবু তাহের বলেন, সাভারে দ্রুত কারখানা চালুর চেষ্টা করছেন সব ট্যানারি মালিকরা। তিনি বলেন, ট্যানারিগুলোর হাতে থাকা অর্থ ইতোমধ্যেই বিনিয়োগ করা হয়েছে। এখন অর্থ সংকটে অনেকে কাজ করতে পারছেন না। তিনি জানান, সব ট্যানারি স্থানান্তরের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ পেতে প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন করবেন তারা। কারখানাটির লেদার টেকনোলজিস্ট সোহেল রানা বলেন, এক ট্রাক বর্জ্য ঢাকায় নিতে প্রায় ৭ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হচ্ছে, যা হাজারীবাগে ছিল ১ হাজারের কাছাকাছি। উৎপাদন শুরু করেছে বা প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে এমন কয়েকটি ট্যানারি কর্মকর্তারা অভিযোগ করলেন, সাধারণ বর্জ্য যাওয়ার যে পাইপ বসানো হয়েছে, সেটি প্রয়োজনের চেয়ে সরু। সব ট্যানারি চালু হলে বর্জ্য উপচে সড়কে চলে আসার আশঙ্কা আছে। বর্তমানে ১১টি কারখানা উৎপাদন করছে, তাতেই ওই পাইপ ভরে আছে। রিলায়েন্সের সামনের সড়কে সেই পাইপের একটি ঢাকনা (ম্যানহোলের মতো) খুলে দেখা গেছে, পাইপ ভরে আছে বর্জ্য। এ ছাড়া কারখানায় পানি সরবরাহের লাইনটি দেয়া হয়েছে মাত্র ২ ইঞ্চি ব্যাসের। এই পাইপ দিয়ে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার জন্য যে বিপুল পানির প্রয়োজন, তা দেয়া যাবে না বলে অভিযোগ ট্যানারির কর্মকর্তাদের। ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে ট্যানারি স্থানান্তর না করলে গ্যাস ও বিদ্যুত সংযোগ বিছিন্ন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেছেন, ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকা থেকে সকল ট্যানারি সাভারে স্থানান্তর করতে হবে। আমরা সবাই মিলে আলোচনার ভিত্তিতে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছি। এরপরে এর কোন ব্যতিক্রম আর হবে না, হতে দেয়া যাবে না। এ সময়ের মধ্যে যে সকল কাজ বাকি রয়েছে, সেগুলো সম্পন্ন করা হবে। রবিবার দুপুরে সাভারের হেমায়েতপুরের হরিণধরা এলাকায় বাংলাদেশ বিসিক শিল্প নগরী ট্যানারি পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে যে সকল ট্যানারি সাভারে স্থানান্তর না হবে, পহেলা জানুয়ারি থেকে ওই সকল ট্যানারির গ্যাস ও বিদ্যুত সংযোগ বিছিন্ন করে দেবে সরকার। ট্যানারির মালিকরাও এর সাথে একমত হয়েছেন। পহেলা জানুয়ারি থেকে সারা বিশে^র কাছে আমরা মাথা উঁচু করে দেখাতে পারবা যে, আমাদের ট্যানারি শিল্প একটি পরিবেশবান্ধব শিল্প নগরীতে পরিণত হয়েছে। পরে মন্ত্রী ট্যানারির কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার পরিদর্শন করেন। এ সময় মন্ত্রীর সাথে শিল্প সচিব মোশারফ হোসেন ভুঁইয়াসহ কারখানার মালিকরা উপস্থিত ছিলেন।
×