ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পঞ্চম সাক্ষীর জবানবন্দী

ঘোড়ামারা আজিজরা আমার ভাইকে গুলিতে হত্যা করে ॥ যুদ্ধাপরাধীর বিচার

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১৭ অক্টোবর ২০১৬

ঘোড়ামারা আজিজরা আমার ভাইকে  গুলিতে হত্যা করে ॥ যুদ্ধাপরাধীর বিচার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ জামায়াতের সাবেক এমপি আব্দুল আজিজ ওরফে ঘোড়ামারা আজিজসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের পঞ্চম সাক্ষী আজিজুল হক সরকার জবানবন্দী দিয়েছেন। জবানবন্দীতে তিনি বলেছেন রাজাকাররা আমার ফুফাত ভাই বয়েজউদ্দিনসহ ১৪ জনকে আর্মি ক্যাম্পে ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করেছে। জবানবন্দী শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য আজ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে পটুয়াখালীর রাজাকার ইসহাক সিকদারসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয়া হবে কি না সে বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী ১৭ নবেম্বর ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল। ইসহাক সিকদার ছাড়া মামলার অন্য আসামিরা হলো আব্দুল গণি হাওলাদার, আব্দুল আওয়াল ওরফে মৌলবী আওয়াল, আব্দুস সাত্তার প্যাদা ও সুলাইমান মৃধা। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদসের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ রবিবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালে এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী, জেয়াদ আল মালুম, হৃষিকেশ সাহা, রিজিয়া সুলতানা বেগম চমন, সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ও শেখ মুসফেক কবির। সাক্ষী জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম আজিজুল হক সরকার। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৮৮ বছর। আমার ঠিকানা : গ্রাম-পাঁচগাছি শান্তিরাম, থানা-সুন্দরগঞ্জ, জেলা-গাইবান্ধা। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি ব্যবসা করতাম। একাত্তরে আমরা চার ভাই ও দুই বোন ছিলাম। একাত্তরের এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে পাক আর্মি গাইবান্ধা মহকুমা সদর দখল করে হেলাল পার্ক ও সুন্দরগঞ্জ সিও অফিসে তাদের ক্যাম্প স্থাপন করে। জামায়াত নেতা আব্দুল জব্বার শেখ (বর্তমানে মৃত) মাঠেরহাট প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাজাকার ক্যাম্প স্থাপন করে। রাজাকার আসামি আবু সালেহ মোঃ আব্দুল আজিজ মিয়া ওরফে ঘোড়ামারা আজিজ, রাজাকার মোঃ রুহুল আমিন ওরফে মঞ্জু মোঃ আব্দুল লতিফ, আবু মুসলিম মোঃ আলী ব্রিজ পাহারা দিত এবং আশপাশের গ্রামগুলোতে লুটপাট করত। সাক্ষী আরও বলেন, একাত্তরের ৯ অক্টোবর রাজাকাররা আমার ভাই বয়েজ উদ্দিনকে ধরে নিয়ে যায়। পরদিন ১০ অক্টোবর ভাইকে ছাড়াতে আসামি আবু সালেহ মোঃ আব্দুল আজিজকে অনুরোধ করি। এ সময় রাজাকার বয়েজ উদ্দিনের সঙ্গে লোকজন দেখে ফাঁকা গুলি করে। রাজাকাররা পরে আমার ভাইকে ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যায়। ১১ অক্টোবর সংবাদ পাই যে, স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারদেরও ধরে নেয়া হয়েছে। আটকদের মধ্যে ছিল শান্তিরামপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সইম উদ্দিন, মেম্বার মনসুর আলী সরকার, মেম্বার লুৎফর রহমান প্রামানিক, ৯ নম্বর ছাপরহাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নবী বক্স, মেম্বার আকবর আলী, মেম্বার মমতাজ আলী, মেম্বার মুসলিম আলী, মেম্বার আব্দুল জলিল ছিল। সাক্ষী বলেন, ১৩ অক্টোবর আমি আলিম উদ্দিনের বাড়ির পশ্চিম পাশে ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে থাকি। এ সময় দেখতে পাই আটক চেয়ারম্যান, মেম্বারগণ ও আমার ভাই বয়েজ উদ্দিনসহ মোট ১৪ জনকে কোমরে দড়ি বেঁধে রাজাকার আবু সালেহ মোঃ আব্দুল আজিজ ওরফে ঘোড়ামারা আজিজ ও অন্যান্য রাজাকার উক্ত আর্মি ক্যাম্প থেকে তিস্তা নদীর তীরে নিয়ে সবাইকে গুলি করে হত্যা করে। পটুয়াখালীর পাঁচ রাজাকার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে পটুয়াখালীর রাজাকার ইসহাক সিকদারসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয়া হবে কি না সে বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী ১৭ নবেম্বর ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল। ইসহাক সিকদার ছাড়া মামলার অন্যান্য আসামি হলো আব্দুল গণি হাওলাদার, আব্দুল আওয়াল ওরফে মৌলবী আওয়াল, আব্দুস সাত্তার প্যাদা ও সুলাইমান মৃৃধা। রবিবার চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মামলার পরবর্তী দিন ঠিক করে এ আদেশ দেন। এর আগে গত ১৩ অক্টোবর এই পাঁচজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। ২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনাল এই ৫ রাজাকারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর ৫ জনকেই গ্রেফতার করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সত্যরঞ্জন রায় জানান, তাদের সকলের বয়স ষাট বছরের বেশি। আসামিদের বিরুদ্ধে একাত্তরে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে একাত্তরে হত্যা ও ১৭ জনকে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে ৮ বীরাঙ্গনা এখনও জীবিত আছেন।
×