ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

খুলনা-মংলা রেললাইনের কাজ ’১৮ সালের মধ্যে সম্পন্ন করার টার্গেট

নেপালে যৌথ জলবিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করবে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১৭ অক্টোবর ২০১৬

নেপালে যৌথ জলবিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করবে বাংলাদেশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ নেপালে যৌথভাবে জলবিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। প্রাথমিকভাবে দুটি জলবিদ্যুত কেন্দ্রের মাধ্যমে ১৫শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সহায়তায় এ বিদ্যুত বাংলাদেশে নিয়ে আসা হবে। এছাড়া দু’দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে আগামী ২০১৮ সালের মধ্যে খুলনা-মংলা রেললাইনের কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে দুই দেশ রেলের মাধ্যমে মংলা বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রফতানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রবিবার দুপুরে সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে এ ঘোষণা দেন বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও নেপালের বাণিজ্যমন্ত্রী রমি গাউচান থাকলি। ওই সময় তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমরা উভয় দেশ ভারতকে সঙ্গে নিয়ে জলবিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনে একমত হয়েছি। কারণ ভারতের সহায়তা ছাড়া ভারতের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এ বিদ্যুত আনা সম্ভব নয়। এছাড়াও ২০১৮ সালের মধ্যে খুলনা-মংলা রেললাইনের কাজ সমাপ্ত হওয়ার পর দুই দেশ রেলের মাধ্যমে মংলা বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রফতানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, নেপালের সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপন হলে দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য সম্পর্ক আরও জোরদার হবে। নেপাল থেকে পণ্য আমদানি যেমন সহজ হবে, তেমনি নেপালে রফতানিও বাড়বে। নেপালে যৌথভাবে জলবিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, প্রাথমিকভাবে দুটি জলবিদ্যুত কেন্দ্রের মাধ্যমে ১৫শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদিত হবে। রমি গাউচান থাকলি সাংবাদিকদের বলেন, বিবিআইএনের আওতায় জলবিদ্যুতসহ সড়ক ও রেল যোগাযোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে আমদানি-রফতানি বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশ নেপালের পরীক্ষিত বন্ধু হিসেবে নেপালীদের জন্য ভিসা সহজীকরণসহ সড়কপথে অন এ্যারাইভাল ভিসার দাবি জানিয়েছি। এদিকে, নেপালের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বা কানেকটিভিটি করতে ভারতের ভূখ- ব্যবহার করতে চায় বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে ভারতকে ইতোমধ্যে ট্রানজিট চুক্তি করার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। এ চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হবে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ থাকলেও ভুটান ও নেপালের সঙ্গে নেই। কিন্তু ভারতের সঙ্গে আবার এ দুটো দেশের সড়ক যোগাযোগ রয়েছে। তাই নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে হলে অবশ্যই ভারতের ভূখ- ব্যবহার করতে হবে। এজন্য এ চার দেশের মধ্যে ট্রানজিট চুক্তি করার বিষয়ে কাজ চলছে। আশা করা হচ্ছে, বিবিআইএন কার্যকর হলে দ্রুত এ ধরনের একটি চুক্তি করা যাবে। বাংলাদেশ-নেপালের সঙ্গে ভারতের ৫৪ কিলোমিটার সড়কপথ দিয়ে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হলে দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসত বলে মনে করা হচ্ছে। আর এ সুযোগ কাজে লাগাতে ভারতের সঙ্গে মোটর ভেহিক্যাল ও ট্রানজিট চুক্তি ও তা কার্যকর করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। গত অর্থবছরে নেপালে রফতানি হয়েছে ১৭ দশমিক ৮৯ মিলিয়ন ডলারের পণ্য, বিপরীতে আমদানি হয়েছে ০৯ দশমিক ৪০ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ বাণিজ্য ঘাটতি বাংলাদেশের অনুকূলে রয়েছে। তাই বাংলাদেশের স্বার্থেই নেপালের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। জানা গেছে, শিল্পের কাঁচামাল, রাসায়নিক উপাদান, তৈরি পোশাক, পাট ও পাটজাত পণ্য এবং খাদ্য ও পানীয়সহ নেপালে বাংলাদেশী পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। পাশাপাশি নেপাল থেকে অনেক শিক্ষার্থী বাংলাদেশে পড়তে চায়। আবার স্থলপথে সরাসরি যোগাযোগ করা গেলে বাংলাদেশ থেকে অনেক পর্যটক যাবে নেপালে। কিন্তু কিছু সমস্যা থাকার কারণেই এ বিপুল সম্ভাবনা বাস্তব রূপ পাচ্ছে না। বাংলাবান্ধা বন্দর থেকে নেপালের দূরত্ব মাত্র ৫৪ কিলোমিটার। স্থলপথে মাত্র এক ঘণ্টার দূরত্ব। কিন্তু এত স্বল্প দূরত্বে হওয়া সত্ত্বেও দেশটির সঙ্গে স্থলপথে বাংলাদেশের সরাসরি কোন যোগাযোগ নেই। কারণ মাঝখানে এ ৫৪ কিলোমিটার ভারতীয় ভূখ-। ফলে বাংলাদেশ থেকে একটা গাড়ির ব্যাটারি নেপালে রফতানি করতে গড়ে লেগে যাচ্ছে ২৯ দিনের বেশি। এতে খরচও বাড়ছে অস্বাভাবিক হারে। অথচ এ করিডরটা পাড়ি দিতে ঘণ্টাখানেকের বেশি সময় লাগার কথা নয়। বাংলাদেশ ও নেপালের মাঝে ভারতের করিডর ব্যবহার করতে না দেয়ায় বাণিজ্য সম্প্রসারণ করা যাচ্ছে না।
×