ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

লাভবান হবে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ১৭ অক্টোবর ২০১৬

লাভবান হবে বাংলাদেশ

তৌহিদুর রহমান ॥ চীনের ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড’ উদ্যোগে যোগদানে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অবকাঠামো উন্নয়নে বাংলাদেশের আমূল পরিবর্তন আসবে। ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড উদ্যোগে যোগ দেয়ায় বাংলাদেশ এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের ৩৪ দেশের বিশাল এক নেটওয়ার্কে যুক্ত হবে। ওয়ান বেল্ট উদ্যোগ সফলের লক্ষ্যে চীন ইতোমধ্যেই এক ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার তহবিল রেখেছে। বাংলাদেশ এ উদ্যোগে যোগ দেয়ায় চীনের এ বিশাল তহবিলের সুবিধাও লাভ করবে। এছাড়া বিসিআইএমও এ উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হবে। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ঢাকা সফরকালে দেশটির ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড’ উদ্যোগে আনুষ্ঠানিক যোগ দিয়েছে বাংলাদেশ। চীনের প্রস্তাবিত এ রুটে বাংলাদেশ যোগ দেবে কিনা তা নিয়ে অনেকদিন ধরেই জোর আলোচনা চলছিল। শেষ পর্যন্ত শি জিনপিংয়ের ঢাকা সফরকালে বাংলাদেশ এ কর্মসূচীতে যোগ দেবে বলে জানিয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চীনের এ উদ্যোগকে বাংলাদেশ ইতিবাচক দেখছে। ’২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশে এবং ’৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছানোর যে লক্ষ্য ঠিক করেছে তা অর্জনে এটা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ নিয়ে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। চীনা প্রেসিডেন্টের সফরকালে দুই দেশের মধ্যে যে যৌথ বিবৃতি দেয়া হয়েছে, সেখানেও বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১৩ সালে চীনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড’ উদ্যোগ ঘোষণা করেন। এরপর থেকে এ উদ্যোগকে ঘিরেই চলছে দেশটির অর্থনৈতিক কূটনীতি। এ উদ্যোগ শুরুর পর থেকে বিদেশে অবকাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করে আসছে চীন। প্রাচীন সিল্ক ও মেরিটাইম সিল্ক রোড বাস্তবায়ন করতে চায় শি জিনপিং সরকার। এ রোড বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে একটি বাণিজ্য ও অবকাঠামো নেটওয়ার্কে সম্পৃক্ত করতে চাইছে চীন। এর মধ্য দিয়ে কার্যত প্রাচীন সিল্ক মেরিটাইম রুটকে ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশা করছে দেশটি। তবে মেরিটাইম সিল্ক রুটের সঙ্গে কোন কোন দেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাকেও যুক্ত করবে চীন। সূত্র জানায়, চীনের এ নতুন উদ্যোগে ইতোমধ্যে শতাধিক দেশ সমর্থন দিয়েছে। আর বাংলদেশ ছাড়াও আরও ৩৩ দেশ ইতোমধ্যেই এ প্রক্রিয়ায় চীনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে সিল্ক রুট ফান্ডের জন্য প্রায় এক ট্রিলিয়ন (এক হাজার কোটি) মার্কিন ডলারের তহবিল রেখেছে চীন। সে কারণে এতে যুক্ত হয়ে অবকাঠামো উন্নয়নে সহযোগিতা পাবে বাংলাদেশ। চীনের ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড উদ্যোগ বাস্তবায়ন এগিয়ে চলেছে। যেসব দেশ তাদের এ উদ্যোগে যোগ দেবে, তাদের অবকাঠামো উন্নয়নে বিশেষ সহযোগিতা দেবে দেশটি। চীনের এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে সদস্য দেশগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে সহায়তা চাইলে তা দিতে প্রস্তুত দেশটি। চীনের নেতৃত্বে এ বাণিজ্যিক রুটে যুক্ত হলে একদিকে যেমন বাণিজ্যিক সুবিধা পাওয়া যাবে, অন্যদিকে সদস্য দেশগুলোর অবকাঠামো উন্নয়নেও সহায়তা দেবে। বিশেষ করে সমুদ্রবন্দর উন্নয়ন ও নৌ যোগাযোগ খাতে চীন সদস্য দেশগুলোকে সহায়তা দেবে। সে কারণে এ উদ্যোগে যোগ দেয়ায় বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে আমূল পরিবর্তন আসবে। সূত্রমতে, চীনের এ রুটে যোগ দেয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে বাণিজ্যিক সুবিধাও লাভ করবে। এ রুটের সঙ্গে যুক্ত দেশগুলোর মধ্যে একটি নেটওয়ার্ক গড়ে উঠবে। এ নেটওয়ার্কের সুবিধা লাভ করবে বাংলাদেশ। ফলে অনেক দেশেই ডিউটি ফ্রি ও কোটা ফ্রি সুবিধাও পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। চীনের ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড উদ্যোগ অভিনব হলেও বাস্তবসম্মত। এ উদ্যোগ থেকে বাংলাদেশ বিশেষ উপকৃত হবে। ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড হচ্ছে চীনের একটি বৃহৎ উদ্যোগ, যার মাধ্যমে সড়ক ও সমুদ্রপথে গোটা এশিয়া ও ইউরোপের সঙ্গে চীনের যোগাযোগ তৈরি করা সম্ভব হবে। তবে সড়কপথে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চীনের যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করাটা কঠিন হবে। সেজন্য বাংলাদেশ সমুদ্র রুটেই যুক্ত হবে। তবে বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও মিয়ানমার (বিসিআইএম) করিডর উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে। এ বিসিআইএম উদ্যোগকে কিভাবে ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড়ের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনা চলছে। ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড ও বিসিআইএম উদ্যোগের মাধ্যমে চীন ও বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও বৃদ্ধি পাবে। দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা ও বিনিয়োগ বাড়বে। সূত্র জানায়, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যখন ২০১৩ সালে ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড’ উদ্যোগ গ্রহণ করেন, সে সময় চীনা প্রেসিডেন্ট ইন্দোনেশিয়া সফরকালে সে দেশের পার্লামেন্টে দেয়া এক বক্তৃতায় এ উদ্যোগের ঘোষণা দেন। তখনই সেটা বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এ উদ্যোগ চীনের প্রাচীন সমুদ্র ও সড়কপথের সিল্ক রোড পুনরুদ্ধারের প্রয়াস। প্রায় দুই হাজার বছর আগে চীন এ রুটের মাধ্যমেই পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছিল। তবে চীনের এ উদ্যোগে সড়কপথের চেয়ে নৌ রুট বাস্তবায়নে দেশগুলোর আগ্রহ বেশি। ইতোমধ্যেই এ উদ্যোগে বাংলাদেশসহ ৩৪ দেশ শামিল হয়েছে। অবশ্য উদ্যোগটির বাস্তবায়ন চীনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জও। বাণিজ্যিক রুট হিসেবে চীন ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রুট চালু করতে চায়। এ রুটের মধ্য দিয়ে এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক বলয় তৈরি করতে চায় দেশটি। এ রুটে যোগ দেয়া দেশগুলোর মধ্যে নতুন নতুন ও উন্নততর অবকাঠামো নির্মাণের মধ্য দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের প্রসার হবে বলে আশা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, গত ১৪-১৫ অক্টোবর চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ঢাকা সফর করেন। সে সময় ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড উদ্যোগে যোগ দেবে বলে ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ।
×