ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তিনদিনের লালন উৎসব শুরু

বাড়ির পাশে আরশীনগর সেথা একঘর পড়শী বসত করে...

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ১৭ অক্টোবর ২০১৬

বাড়ির পাশে আরশীনগর সেথা একঘর পড়শী বসত করে...

এমএ রকিব ॥ ‘বাড়ির পাশে আরশীনগর সেথা একঘর পড়শী বসত করে, আমি একদিনও না দেখিলাম তাঁরে..., ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়..., কিংবা ‘সব লোকে কয় লালন কীজাত সংসারে, লালন বলে জাতের কীরূপ দেখলাম না এ নজরে...’। এমনই সব অসংখ্য মরমী গানের স্রষ্টা, আধ্যাত্মিক সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ’র ১২৬তম তিরোধান দিবস পালন করা হলো রবিবার ১ কার্তিক। ‘পারে লয়ে যাও আমায়...’ লালনের অমর এ বাণীকে স্মরণ করে দিনটি পালন উপলক্ষে প্রতিবছরের মতো এবারও লালন শাহের চারণভূমি কুষ্টিয়ায় আয়োজন করা হয়েছে ১৬ থেকে ১৮ অক্টোবর তিনদিনব্যাপী অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠানকে ঘিরে পুরো ছেঁউড়িয়া গ্রামটিই যেন সেজেছে উৎসবপল্লীতে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সহযোগিতা ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের আয়োজনে প্রতিদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে এসব অনুষ্ঠানে থাকছে লালন মেলা, লালনের জীবনাদর্শন ও স্মৃতিচারণ করে আলোচনা সভা ও লালন সঙ্গীতানুষ্ঠান। প্রথমদিন কুষ্টিয়া লালন একাডেমির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক জহির রায়হানের সভপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি। আলোচনা পর্ব শেষে বসে মনোজ্ঞ লালন সঙ্গীতের আসর। এদিকে লালনের তিরোধান দিবসকে ঘিরে ইতোমধ্যেই ভক্ত, অনুসারী, দর্শক-শ্রোতা ও বাউল-বাউলানীর পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে লালনের আঁখড়াবাড়ী। লালন একাডেমির সাবেক সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) সেলিম হক বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও দেশের দূর-দূরান্ত থেকে নারী-পুরুষ সমন্বয়ে গুরু, শিষ্য, লালনভক্ত-অনুসারীরা ছুটে এসেছেন সাঁইজির পুণ্যভূমি ছেঁউড়িয়ায়। তাদের জন্য অর্ধাবাস (রাত ১২টার পর খাবার), বাল্যসেবা (সকালের নাস্তা) ও পূর্ণসেবার (ভাত, সবজি, মাছ ও দইসহ দুপুরের খাবার) ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে লালন একাডেমির পক্ষ থেকে। অনুষ্ঠানে অসংখ্য মানুষের সমাগম ঘটে বলে তিনি জানান। লালনের তিরোধান দিবসে পাবনা থেকে আসা লালনভক্ত করিম বলেন, ‘গুরু কিংবা লালন যাই বলুন; ওনারাতো ধীয়ানলোকে বিরাজ করেন। হাত দিয়ে দেখানোর কিছু নাই। তাঁর ভাষায়- ‘গুরুকেই আমি লালন ভাবি। গুরুভাবনায় থাকতে থাকতে কখনও আবার নিজের মধ্যেই লালন প্রতিষ্ঠা হয়ে যায়। তখন মন অন্যরকম হয়ে যায়। গানের সুর ভালো হয়। মনে হয় যার গান সেই গাইছে, আমি খালি খালি মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছি’। বিশিষ্ট লালন গবেষক অধ্যাপক ড. আবুল আহসান চৌধুরী বলেন, বাউলগানের বিপুল লোক-প্রিয়তার মূলে লালনের অবদান সর্বাধিক ও সর্বশ্রেষ্ঠ। বাঙলার অপর কোন মরমীসাধক বা লোককবি লালনের মতো এত বিপুল পরিচিতি, ঈর্ষণীয় জনপ্রিয়তা ও অসামান্য প্রতিষ্ঠা অর্জনে সক্ষম হননি। তাঁর পরিচয় ও প্রতিষ্ঠার পরিধি আজ দেশের গ-ি পেরিয়ে বিশ্বের ভূগোলকে স্পর্শ করেছে।
×