ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য কাউকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হিসেবে মানবে না জাতীয় কমিটি

মন্ত্রী-এমপিদের সতর্ক করলেন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৭:৫১, ১৬ অক্টোবর ২০১৬

মন্ত্রী-এমপিদের সতর্ক করলেন প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য কাউকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হিসেবে মানবে না দলের জাতীয় কমিটি। তবে মন্ত্রী-এমপি ও জেলার নেতাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ঝেড়েছেন জাতীয় কমিটির নেতারা। তাদের অভিন্ন বক্তব্য জাতীয় কমিটির নেতা শুধু নয়, তৃণমূলের কাউকেই মূল্যায়ন করা হয় না। শনিবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির বৈঠকে নেতারা এসব বক্তব্য তুলে ধরলে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে এমপি-মন্ত্রীদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করা, বিতর্কিত কর্মকা-ে জড়ানোসহ যে কোন ধরনের অভিযোগ আসলে আগামীতে তাদের মূল্যায়ন করা হবে না। দলের কোন পদ এবং নমিনেশনও দেয়া হবে না। বৈঠক সূত্র জানায়, সভায় জাতীয় কমিটির কিছু সদস্য তাদের বক্তৃতায় স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে কর্মীদের অবমূল্যায়ন-নিজ দলের পরিবর্তে জামায়াত-বিএনপির লোকদের সঙ্গে সখ্যের অভিযোগ তোলেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার কাছে সব তথ্যই আছে। আমরা এত উন্নয়ন করলাম, সেসব তথ্য প্রচার নেই। কমিউনিটি ক্লিনিক করেছি, ইউনিয়ন পর্যায়ে তথ্য সেবা চালু করেছি, দেশ আজ অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে চলেছে। বিশ্ব আমাদের স্বীকৃতি দিচ্ছে। এগুলোর তৃণমূলে প্রচার নেই। আপনারা নিজেদের সমালোচনা না করে সরকারের উন্নয়নগুলো জনগণের মধ্যে তুলে ধরুন। এমপি-মন্ত্রীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, তৃণমূলের নেতাকর্মীরাই আমাদের প্রাণ। সংগঠন ছাড়া কেউ এমপি-মন্ত্রী হতে পারবেন না। নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করুন। সম্পর্ক ভাল রাখুন। আগামীতে অভিযোগের সত্যতা মিললে দলীয় মনোনয়নসহ দলের কোন স্থানে জায়গা হবে না। জাতীয় কমিটির এক নেতা আওয়ামী লীগ সভাপতির উদ্দেশে বলেন, নেত্রী ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর অনেককেই দেখা যায়নি। তারা সরে দাঁড়িয়েছিল। এবারের কাউন্সিলে সেইসব মুখ যেন নেতৃত্বে না আসে সে বিষয়টি লক্ষ্য রাখবেন-এটা আমাদের অনুরোধ। সূত্র জানায়, বৈঠকে দিনাজপুর, পঞ্চগড়, বাগেরহাট, সিলেট ও খুলনা জেলার জাতীয় কমিটির সদস্যরা বক্তব্যে শেখ হাসিনাকে পুনর্বার আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করার দাবি জানিয়ে বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ তিন বার ক্ষমতায় এসেছে। বাংলাদেশ বিশ্ববাসীর চোখে একটি রোল মডেল হিসেবে অবস্থান করছে। দেশ ও জাতির উন্নয়নের স্বার্থে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে আবারও দলের সভানেত্রী হিসেবে দেখতে চাই। এর কোন বিকল্প নেই বলেও তারা মত প্রকাশ করেন। এ সময় উপস্থিত সকল সদস্য এ ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করে ঐক্যবদ্ধভাবে দাবি জানান। দুর্ভাগ্য-ওদের কাছ থেকে আজ গণতন্ত্রের ছবক শুনতে হয় ॥ এর আগে দীর্ঘ চার বছর পর শনিবার সন্ধ্যায় গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, যে দলটির (বিএনপি) জন্মই অবৈধভাবে, যারা ভোট চুরি করে, জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানিয়ে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানী করেছে- সেই দলটির কাছে গণতন্ত্রের ছবক শুনতে হয়। এর থেকে জাতির দুর্ভাগ্য আর কী হতে পারে। তাদের মুখে গণতন্ত্রের কথা হাস্যকর ছাড়া আর কিছুই নয়। তিনি প্রশ্ন করে বলেন, এই দলটি কোন গণতন্ত্রের পথে চলে? তারা তো শুধু ধ্বংস ও মানুষকে হত্যা করতে জানে। কোন বিদেশী মেহমান এলেই তাঁদের কাছে গিয়ে নালিশ করে, কান্নাকাটি করে বলে দেশে নাকি গণতন্ত্র নেই! বিদেশীদের কাছে নালিশ বা কান্নাকাটি করে কোন লাভ হবে না। দেশবাসী ওই দলটিকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে, যুগ যুগ ধরেই তাদের প্রত্যাখ্যান করে যাবে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দেশে গণতন্ত্র আছে বলেই বাংলাদেশ আজ সব দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে, সারাবিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সারাবিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের মানুষ শান্তি ও সুখে রয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচনে সারাবিশ্বে বাংলাদেশ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বিশ্ব নেতারা আমাদের কাছে জানতে চান কীভাবে এটা সম্ভব? এর পেছনে ম্যাজিক কী? আমি তাদের বলেছি আমাদের ম্যাজিকই হচ্ছে দেশপ্রেম আর দেশের মানুষের কল্যাণের চিন্তা। এ কারণেই বাংলাদেশ এতো সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় কমিটির সভায় প্রারম্ভিক বক্তব্য রাখেন দলটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এরপর রুদ্ধদ্বার বৈঠকে আগামী ২২-২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক জাতীয় কাউন্সিলের বাজেট এবং দলের আয়-ব্যয়ের হিসাব নিয়ে আলোচনার পর তা সর্বসম্মতক্রমে গৃহীত হয়। দীর্ঘ চার বছর পর জাতীয় কমিটির বৈঠকে উপস্থিত সারাদেশের প্রবীণ নেতারা তাঁদের নানা অভিযোগ এবং পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী তা সমাধানের ব্যাপারে আশ্বাস দেন। যুদ্ধাপরাধীদের মদদদাতা, আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যাকারী, দেশের সম্পদ বিনষ্টকারী এবং দেশ থেকে অর্থপাচারকারীদের বিচারের ব্যাপারে তাঁর দৃঢ় অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানিয়ে তাদের হাতে রক্তস্নাত জাতীয় পতাকা তুলে দিয়ে ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানী করেছে, তাদেরও বাংলার মাটিতে বিচার হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। যুদ্ধাপরাধীদের মদদদানকারী, শত শত জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যাকারী, যারা ক্ষমতায় থাকতে দেশের অর্থ-সম্পদ লুন্ঠন করে বিদেশে পাচার করেছে, যারা এতিমের টাকা আত্মসাত করেছে- তাদের বিচার অবশ্যই বাংলার মাটিতে হবে। যতই বিদেশীদের কাছে গিয়ে কান্নাকাটি করুক, কোন লাভ হবে না। জনগণ জানে একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই দেশের উন্নয়ন হবে। নানা ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবেলা করে আওয়ামী লীগ এখন মহীরুহু সংগঠনে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক ঘাত-প্রতিঘাত ও ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করেই আওয়ামী লীগকে এই অবস্থায় আসতে হয়েছে। আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। ভাষা থেকে স্বাধীনতা এবং পরবর্তীতে গণতন্ত্র বাঙালী জাতির যা অর্জন বা যেটুকু পেয়েছে তার সবই আওয়ামী লীগের কাছ থেকেই পেয়েছে। আওয়ামী লীগ জন্মলগ্ন থেকেই দেশের মানুষকে দিয়ে যাচ্ছে। দেশের মানুষের অধিকার আদায় ও কল্যাণে অসংখ্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী জীবন দিয়ে গেছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর দীর্ঘ ২১টি বছর আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া আওয়ামী লীগের শিকড় অত্যন্ত মজবুত ও গভীরে। দলের নেতাকর্মীরা নীতি-আদর্শে বিশ্বাস করে বলেই অনেক ঝড়-ঝাপটা মোকাবেলা করেই আওয়ামী লীগ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। যে দল স্বাধীনতার নেতৃত্ব দেয়, সেই দল ক্ষমতায় থাকলে যে দেশের প্রকৃত উন্নয়ন হয় আমরা তা প্রমাণ করেছি। তিনি বলেন, ’৭৫ পরবর্তী সরকারগুলো ক্ষমতায় থেকে শুধু নিজেদের ভাগ্যের উন্নয়ন করেছে, দেশের মানুষ হয়েছে শোষিত-বঞ্চিত। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে তাদের শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্তি দিয়েছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতিই হচ্ছে তৃণমূল মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করা। প্রধানমন্ত্রী তাঁর টানা দুই মেয়াদে সরকারের সফলতা ও অর্জনগুলো তুলে ধরে বলেন, মাত্র এই সোয়া সাত বছরে সারাবিশ্বে বাংলাদেশ এখন অত্যন্ত সম্মানজনক অবস্থায় উঠে এসেছে। আগামী নির্বাচনের আর দুই বছর ২ মাস বাকি, এর মধ্যে দেশের মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো আমাদের পূরণ করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা দারিদ্র্যের হার ১১ ভাগে কমিয়ে এনেছি। দেশের অর্থনীতি অত্যন্ত শক্তিশালী ও মজবুত। আগে বাংলাদেশ মানেই ছিল ভিক্ষার ঝুলি, অন্যের করুণা নিয়ে বেঁচে থাকা। অতীতের সরকারগুলো দেশের মানুষকে ভিক্ষুকের জাতি করে রেখে দিয়েছিল। কিন্তু আমরা বিজয়ী জাতি, ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে চলব না। নিজেদের যেটুকু সম্পদ আছে তাই নিয়েই আমরা বিশ্বের সামনে মাথা উঁচু করে চলব। নিজেদের পায়ে দাঁড়াব। কারোর কাছে হাত পেতে, করুণা নিয়ে কিংবা মাথানত করে আমরা চলব না। ‘দেশে গণতন্ত্র নেই’-বিএনপি নেতাদের এমন অভিযোগের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির জন্মই হচ্ছে অবৈধভাবে, তাদের মুখে গণতন্ত্রের কথা শুনলে জাতির হাসি পায়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করা জেনারেল জিয়ার হাতে গড়া সংগঠনই হচ্ছে এই বিএনপি। এই জিয়াই স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি করার অধিকারই শুধু ফিরিয়ে দেননি, তাদের প্রধানমন্ত্রী-উপদেষ্টা বানিয়ে পুনর্বাসন করেছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে সবাইকে মুক্তি দিয়ে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি বলেন, সেই জিয়ার স্ত্রী খালেদা জিয়া একাত্তরের গণহত্যাকারী-যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানিয়ে তাদের হাতে রক্তস্নাত জাতীয় পতাকা তুলে দিয়ে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তের সঙ্গে বেইমানী করেছেন। ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনে ভোট কারচুপি করে বঙ্গবন্ধুর খুনী রশিদ-হুদাকে এমপি বানিয়ে সংসদে বসিয়েছিলেন। কিন্তু ভোটচুরির অপরাধে তীব্র গণরোষের মুখে খালেদা জিয়া পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন। আজ তাঁদের মুখ থেকে গণতন্ত্রের ছবক শুনতে হয়। যারা ভোটচুরির দায়ে আন্দোলনের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিল, তাদের মুখে আর যাই হোক গণতন্ত্রের কথা মানায় না। প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, কোন বিদেশী মেহমান এলেই নালিশ করেন দেশে গণতন্ত্র নেই। উনি (খালেদা জিয়া) গণতন্ত্রের অর্থ কী বোঝেন? গণতন্ত্রের অর্থ তো দূরের কথা, ভাল করে গণতন্ত্র বানান করে বলতে পারবেন কি না জানি না। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করছি। আর উনি বলেন, ক্ষমতায় এলে নাকি দুইটা পদ্মা সেতু করবেন! যিনি এতিমের টাকা আত্মসাত করেন, লুটপাট করে বিদেশে অর্থ পাচার করেন, যার ছেলে অর্থ পাচারের অভিযোগে বিদেশের আদালতে দ-িত হয়েছে- তাঁর মুখে এসব কথা শোভা পায় না। তিনি বলেন, দেশে গণতন্ত্র আছে বলেই সব দিক থেকে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, উন্নত-সমৃদ্ধ হচ্ছে, দারিদ্র্য উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে, নিজেদের টাকায় আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পারছি। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে তাঁর দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সারাবিশ্বের সামনে এখন অত্যন্ত সম্মানজনক অবস্থানে রয়েছে, এই সম্মানটা আমাদের ধরে রাখতে হবে। নেতৃত্ব ছেড়ে দিতে চাই, প্রবীণ নেতাদের ‘না’ ॥ বক্তব্যের এক পর্যায়ে আগামী সম্মেলনে তাঁর স্থলে নতুন নেতৃত্ব খুঁজে নেয়ার জন্য দলটির জাতীয় কমিটির নেতাদের প্রতি আহ্বান জানলে সব নেতারাই একযোগে ‘না’ বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি তাঁদের পূর্ণ আস্থার অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৩৫ বছর ধরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি, আর কত? বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের যে চারা রোপণ করে গিয়েছিলেন, তা আজ মহীরুহে পরিণত হয়েছে। চীনের রাষ্ট্রপতির বাংলাদেশ সফরকে অত্যন্ত ফলপ্রসূ হিসেবে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় কমিটির বৈঠকে উপস্থিত হওয়ার পরপরই অভ্যর্থনা উপ-কমিটির আহ্বায়ক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ও সদস্য সচিব ডাঃ দীপু মনি সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মেলনের কার্ড হস্তান্তর করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী সানন্দে তা গ্রহণ করেন। প্রসঙ্গত, আগামী ২২ ও ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ২২ অক্টোবর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরদিন ২৩ অক্টোবর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে মূল কাউন্সিল অধিবেশন। এ সময় কাউন্সিলরদের ভোটে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হবে। এদিকে বৈঠকে আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রীদের সদস্যদের নিয়মিত দলীয় চাঁদা পরিশোধ করার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। বৈঠকে আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলনে ২ লাখ ৬৫ টাকার সম্ভাব্য বাজেট অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এছাড়া বৈঠকে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে অত্যাধুনিক পার্টি অফিসের নির্মাণের জন্য সম্ভাব্য ৫ কোটি টাকার বাজেট পাস করা হয়েছে। আগে আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য চাঁদা ১০ টাকা ছিল। শনিবারের বৈঠকে তা বাড়িয়ে ২০ টাকা করা হয়েছে। কাউন্সিলরদের বার্ষিক চাঁদা ১শ’ টাকার স্থলে বাড়িয়ে ২শ’ টাকা, দলীয় সংসদ সদস্যদের বার্ষিক চাঁদা ৫শ’ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ হাজার টাকা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য এবং সভাপতি মনোনীত ২১ জন সদস্য এবং প্রত্যেক সাংগঠনিক জেলা থেকে মনোনীত বা নির্বাচিত একজন করে সদস্য নিয়ে আওয়ামী লীগ জাতীয় কমিটি। বর্তমানে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির মোট সদস্য সংখ্যা ১৬৬ জন। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেই আওয়ামী লীগের ত্রয়োদশ সম্মেলনে তাকে দলীয় প্রধান নির্বাচিত করা হয়। ওই বছরের ১৭ মে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নেন শেখ হাসিনা। তারপর তিনি ১৯৯১ সালে ভোটে হারের পর সভানেত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেয়ার ঘোষণা দিলেও নেতাকর্মীদের চাপে পদে থেকে যান। তার নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এখন তৃতীয় মেয়াদে সরকার প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। ১৯৮১ সালের পর ১৯৮৭, ১৯৯২, ১৯৯৭, ২০০২, ২০০৯ এবং ২০১২ সালের সম্মেলনে শেখ হাসিনা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত হন।
×