ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ ফুটবল ॥ চট্টগ্রাম আবাহনী ৩-১ মুক্তিযোদ্ধা

দাপুটে জয়ে শীর্ষে চট্টগ্রাম আবাহনী

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১৬ অক্টোবর ২০১৬

দাপুটে জয়ে শীর্ষে চট্টগ্রাম আবাহনী

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ জমে উঠেছে ‘জেবি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ’ ফুটবলের লড়াই। গিরগিটি যেভাবে ক্ষণে ক্ষণে নিজের রং পাল্টায়, তেমনি লীগের পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ স্থান দখল করা দলও একেক দিন পাল্টে যাচ্ছে। কখনও বারিধারা, কখনও শেখ জামাল, কখনও ঢাকা আবাহনী, কখনও মুক্তিযোদ্ধা, আবার কখনও রহমতগঞ্জ ... তালিকার সর্বশেষ সংযোজন চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেড। শনিবার লীগের দশম রাউন্ডের (ম্যাচ নম্বর ৫৭) দিনের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে হারিয়েছে বন্দর নগরীর দলটি। এ জয়ে রহমতগঞ্জকে টপকে তারাই এখন পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ স্থানটি দখল করে নিল। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে চট্টলার দলটি খেলার প্রথমার্ধে ১-০ গোলে এগিয়ে ছিল। বিজয়ী দলের উইঙ্গার জাহিদ হাসান করেন জোড়া গোল। চেষ্টা করলে হ্যাটট্রিকটাও আদায় করে নিতে পারতেন। কিন্তু তার আগেই মাঠ থেকে তাকে উঠিয়ে নেয়া হয়। মনে হতে পারে ইনজুরির কারণেই বুঝি মাঠ ছেড়েছেন তিনি। কিন্তু ম্যাচ শেষে এই খেয়ালি ফুটবলারের জবাব ছিল বিস্ময়কর, ‘হ্যাটট্রিক করতে গিয়ে যদি ব্যথা পাই, তাই রিস্ক না নিয়ে কোচকে বলে মাঠ থেকে উঠে গিয়েছি!’ মুক্তিযোদ্ধার অধিনায়ক-ডিফেন্ডার সাইদুল হক বলেন, ‘আমরা ম্যাচে ভাল খেলেও জিততে পারিনি। এটাকে দুর্ভাগ্যই বলতে হবে। আর আমাদের ভুলের সুযোগগুলো প্রতিপক্ষ কাজে লাগিয়েছে।’ ম্যাচ শেষে অঝোর ধারায় কাঁদতে কাঁদতে মাঠ থেকে বের হয়ে যেতে দেখা যায় বিজয়ী আবাহনীর গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানাকে। কি হয়েছিল? অনুসন্ধানে জানা যায়, খেলায় রানা একটি গোল হজম করলে গ্যালারি থেকে চট্টগ্রাম আবাহনীর কিছু সমর্থক রানাকে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করে। এরপর আবারও রানাকে গালিগালাজ করা হয়। তবে এবার সেটা করেন খোদ চট্টগ্রাম আবাহনীরই কিছু অফিসিয়াল! বিষয়টা দারুণ কষ্ট দেয় রানাকে। কোনমতে খেলা শেষ করে ও দলকে বিজয়ী করে তিনি আর আবেগ ধরে রাখতে পারেননি। দর্শকরা তখনও ঠিকমতো তাদের আসনেও বসতে পারেননি, ম্যাচের ২ মিনিটেই আচমকা গোল করে এগিয়ে যায় আবাহনী। মামুনুলের ফ্রি কিকের বল বক্সে পেয়ে হাইতিয়ান ফরোয়ার্ড লিওনেল সেইন্ট প্রিয়ক্স শট নিতে ব্যর্থ হন। তবে জটলা থেকে আচমকা শটে গোলরক্ষক মামুন খানকে বোকা বানান জাহিদ হোসেন (১-০)। ৮ মিনিটে মুক্তিযোদ্ধার ফরোয়ার্ড তৌহিদুল আলম তৌহিদের স্কয়ার পাস রিসিভ করে দূরপাল্লার শট নেন নাইজিরিয়ান ফরোয়ার্ড আহমেদ কোলো মুসা। কিন্তু তার শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ২১ মিনিটে মুক্তিযোদ্ধার বক্সের বাইরে থেকে প্রিয়ক্সের ডান পায়ের দূরপাল্লার শট চলে যায় মাঠের বাইরে। ২৩ মিনিটে বল নিয়ে দ্রুতগতিতে মুক্তিযোদ্ধার সীমানায় ঢুকে পড়েন চট্টগ্রাম আবাহনীর ফরোয়ার্ড মোঃ ইব্রাহিম। বাঁ প্রান্ত থেকে দূরপাল্লার শট নেন তিনি, কিন্তু বল চলে যায় মাঠের বাইরে। পরের মিনিটেই একইভাবে আবারও বল নিয়ে ডান পায়ে চমৎকার এক কৌণিক শট নেন। কিন্তু বলটা অল্পের জন্য জালে জড়ায়নি। বরং বল পোস্টে লেগে চলে যায় মাঠের বাইরে। ৪৬ মিনিটে তারিক আল জানাবির থ্রু পাস থেকে পোস্টে শট নেন আবাহনীর জাহিদ। কিন্তু বল অল্পের জন্য গোল হয়নি। ৫১ মিনিটে সমতায় ফেরে মুক্তিযোদ্ধা। আবাহনীর বক্সের ডানদিক থেকে মুক্তিযোদ্ধার সোহেল রানার শট বারে লেগে ফেরত আসে। বাঁ প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা আহমেদ কোলো মুসা সময় নষ্ট না করে গড়ানো শটে বল পাঠান জালে (১-১)। ৫৯ মিনিটে মুক্তির বক্সের ডানপ্রান্ত থেকে মামুনুলের ফ্রি কিক বক্সে চলন্ত বলে ভলি নেন জাহিদ। বল চলে যায় জালে (২-১)। ইনজুরি টাইমের শেষ মিনিটে (৯০+৩) প্রায় মাঝ মাঠ থেকে বল নিয়ে একক প্রচেষ্টায় গোলরক্ষক ও এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে অসাধারণ তৎপরতায় গোল করে আবাহনীর জয় নিশ্চিত করেন লিওনেল সেইন্ট প্রিয়ক্স। নিজেদের ১০ খেলায় এটা চট্টগ্রাম আবাহনীর ষষ্ঠ জয়, ২১ পয়েন্ট নিয়ে তারা চলে গেল পয়েন্ট টেবিলের এক নম্বরে। পেছনে ফেলল রহমতগঞ্জকে (১৯)। পক্ষান্তরে এটা মুক্তিযোদ্ধার তৃতীয় হার। ১৫ পয়েন্ট নিয়ে তারা আছে আগের মতোই পঞ্চম স্থানে।
×