ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

‘বিস্ময়কর কিছু প্রত্যাশা করবেন না’

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১৬ অক্টোবর ২০১৬

‘বিস্ময়কর কিছু প্রত্যাশা করবেন না’

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ শিরোনামেই বোঝা যাচ্ছে, টেস্ট সিরিজ নিয়ে আশা করার মতো কিছু নেই। প্রধান কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহে শনিবার চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বলেছেন, ‘বিস্ময়কর কিছু প্রত্যাশা করবেন না।’ এতেই বোঝা যায়, হাতুরাসিংহেও টেস্ট জয়ের কোন ভাবনা করছেন না! হাতুরাসিংহে যে এমন কথা বলেছেন, এটার পেছনে যৌক্তিক কারণও দেখিয়েছেন। সেই কারণগুলো আসলেই যৌক্তিক। সেই গতবছর জুলাই-আগস্টে সর্বশেষ টেস্ট সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। ১৪ মাস পর আবার টেস্ট খেলতে নামছে। প্রতিপক্ষ আবার টেস্টের পরাক্রমশালী দলগুলোর মধ্যে অন্যতম ইংল্যান্ড। কেউই আসলে জয় পাওয়ার আশা করছে বলে মনে হয় না। তবে ভাল খেলার সম্ভাবনা কেউই উড়িয়ে দিচ্ছে না। কিন্তু হাতুরাসিংহে যে যুক্তিগুলো দেখাচ্ছেন তাতে মনে হচ্ছে ভালও খেলা কঠিন! হাতুরাসিংহে বলেছেন, ‘আমরা দীর্ঘ পরিসরে খেলিনি। এমনকি অনেকদিন ধরে ঘরোয়া পর্যায়েও খেলা হয় না। মূল খেলোয়াড়রা এই মৌসুমেও এনসিএল (জাতীয় ক্রিকেট লীগ) খেলার সুযোগ পায়নি। আমি এটাকে কোন অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করতে চাই না। এটা যতই বড় কিংবা ছোট হোক ব্যক্তি বিশেষে এবং মানসিকভাবে কতটা প্রস্তুত হবে সেটার ওপর তা নির্ভরশীল। ম্যাচের পরিস্থিতি অনুসারে এটাকে শারীরিকভাবে উপস্থাপন করতে হবে। ম্যাচের জন্য নিজের আসল খেলাটার প্রস্তুতি থাকতে হবে। টি২০ ক্রিকেটে যেভাবে শুরু করা হয়, ওয়ানডে কিংবা টেস্টে সেটা ভিন্ন হয়। একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে আপনার খেলাটার জন্য যদি প্রস্তুত থাকেন তাহলে মানিয়ে নেয়াটা দ্রুততর হবে। বোলারদেরও দীর্ঘ সময় একই লেন্থে বল ফেলার ধারাবাহিকতা রাখা চ্যালেঞ্জের। আর ব্যাটসম্যানদের মানসিকতা নিয়ে খেলা আরেকটা চ্যালেঞ্জ।’ওয়ানডের সাফল্য টেস্টেও রূপান্তর করার মধ্যে কোন সম্পর্ক খুঁজে পাচ্ছেন না হাতুরাসিংহে, তিনি জানান, ‘ওয়ানডের সাফল্যকে টেস্টে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সম্পর্ক করা কঠিন। আমরা ওয়ানডে ক্রিকেটে ভাল করছি। কারণ আমরা সঠিক সমন্বয়ের খেলোয়াড় পেয়েছি। টেস্ট ক্রিকেটে সঠিক সমন্বয়টা আমরা পাইনি। টেস্টে ২০ উইকেট নিতে পারে এমন বোলার খুঁজে পেতে আমি অনেক লড়াই করছি। আমরা একজন লেগস্পিনার খুঁজছিলাম যে কিনা উইকেটগুলো নিতে পারে। কিন্তু সে হারিয়ে গেছে। তবে আমাদের যে স্পিনাররা আছে তারা অনেক ভাল। কিন্তু আমাদের সেই সমন্বয় নেই যারা ২০ উইকেট নিতে পারে।’ হাতুরাসিংহে যেন প্রতিপক্ষের ২০ উইকেট তুলে নেয়ার মতো বোলার না থাকায় অসহায়ত্বই প্রকাশ করলেন। নতুন খেলোয়াড় নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরীক্ষা চালাতে পারেননি বলেও কষ্ট আছে হাতুরাসিংহের মনে। নিজেই জানালেন, ‘আমি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলোয়াড়দের নিয়ে পরীক্ষা চালাতে পারি না। এটাই বাংলাদেশ ক্রিকেটের দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার। যার সম্মুখীন আমরা হচ্ছি। আমরা আসলে জাতীয় পর্যায়ে খেলোয়াড়দের পরীক্ষা করছি। এমনটা ঘটতে পারে না। এটা যে কোন কিছুর চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আমাদের অনেকগুলো ইনজুরি সমস্যা আছে এবং খেলোয়াড়রা ফর্ম হারায়। কারণ দীর্ঘদিন আমরা খেলিনি। আমি জানি না, এখন ফাস্ট বোলাররা কোন পর্যায়ে আছে। এখন বিষয়টা দাঁড়িয়েছে আমাদের মধ্যে খেলোয়াড়দের ওপর যে আস্থা সেটার ওপরই নির্ভর করতে হবে এবং ধৈর্যশীল হতে হবে।’বোলিংয়ের চেয়ে ব্যাটিংয়ে বেশি মনোযোগী হওয়ার ব্যাপারেও হাতুরাসিংহে জানান, ‘আপনার কাছে যদি রসদ না থাকে তাহলে আপনি পরিকল্পনা করতে পারবেন না। যা নেই সেটাকে পরিচালনা করা যায় না, আর এটা নিয়েই আমরা ভাবছি। দীর্ঘ সময় ধরে আমরা আমাদের কৌশলগুলো রপ্ত করতে থাকব। আমাদের কাছ থেকে সরাসরি বিস্ময়কর কিছু প্রত্যাশা করবেন না। আমরা যদি খেলায় বিজয় ঘটাতে পারি, সেটা হবে দারুণ এবং ভাল। আমরা পথেই আছি। এটাই আমাদের অনেক আত্মবিশ্বাস জোগাবে। আমার যেটা নেই সেটা নিয়ে আমি খুব বেশি দুঃশ্চিন্তা করছি না। আমি চেষ্টা করছি আমাদের যা আছে সেটাকে বর্ধিত করতে।’ লেগ স্পিনার হিসেবে হঠাৎ জাতীয় দলে এসে আবার হারিয়েও গেলেন যেন জুবায়ের হোসেন লিখন। এ নিয়ে হতাশ হাতুরাসিংহে, তিনি বলেন, ‘এটা খুবই হতাশাজনক। তার দক্ষতা ছিল এবং যখন সে গোড়ার দিকে ছিল তখন দেখেছিলাম সে ছন্দে আছে। সে আমাদের জন্য ম্যাচ জিতিয়েছে। তার দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় ম্যাচেই ৫ উইকেট নিয়েছে। ভারতের বিরুদ্ধে টেস্টে সে দুটি বড় উইকেট নিয়েছিল। খুবই হতাশার যে আমরা যথেষ্ট সময় ও শক্তি ব্যয় করে তাকে ফলপ্রসূ করে তুলতে পারিনি। এটা অবশ্যই কিছুটা আশাভঙ্গের ব্যাপার।’ টেস্ট সিরিজে পেসার শঙ্কটে তাসকিন আহমেদের দলে থাকার গুঞ্জনও শোনা যায়। কিন্তু হাতুরাসিংহের কথাতেই মনে হচ্ছে, সেই পথে এখনই হাঁটতে রাজি নন। হাতুরাসিংহে বলেছেন, ‘সে কি কোন চারদিনের ম্যাচ খেলেছে? তাহলে কি আপনি মনে করছেন কোন লোক সরাসরি জাদু দেখাবে? না। তারা সবাই মানুষ। আপনি যদি জীবনে চারদিনের ক্রিকেট না খেলেন সেক্ষেত্রে চারদিন মাঠে থাকা এবং ১৫ ওভার বোলিং করা তার জন্য অবশ্যই একেবারে নতুন হবে। আমি কারও ক্যারিয়ার ধ্বংস করতে চাই না।’ এবার নতুন বোলিং আক্রমণই দেখা যেতে পারে। আর তাতে করে কি জয় সম্ভব? হাতুরাসিংহে ‘বোনাস’ শব্দটিই ব্যবহার করলেন, ‘জয়টা হবে বোনাস।’ তাতেই বোঝা যাচ্ছে, জয় পাওয়ার মতো পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ দল নেই। আর তাইতো হাতুরাসিংহে বলেই দিয়েছেন, যেন কেউ বাংলাদেশ দল থেকে বিস্ময়কর কিছু প্রত্যাশা না করে।
×