ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এখন চলছে ৪ ঘণ্টার অনুষ্ঠান, ডিসেম্বর থেকে চলবে টানা ৬ ঘণ্টা

বিটিভির চট্টগ্রাম কেন্দ্র স্যাটেলাইট সম্প্রচারে, দেশ ছাড়িয়ে বহির্বিশ্বে

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ১৬ অক্টোবর ২০১৬

বিটিভির চট্টগ্রাম কেন্দ্র স্যাটেলাইট সম্প্রচারে, দেশ ছাড়িয়ে বহির্বিশ্বে

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) চট্টগ্রাম কেন্দ্রটি এখন আর আঞ্চলিক নয়। পুরো দেশের গ-ি ছাড়িয়ে বহির্বিশ্বেও এ কেন্দ্রের অনুষ্ঠান দর্শকরা দেখতে পাচ্ছেন। ১৯৯৬ সালে এক ঘণ্টার জন্য শুধু চট্টগ্রামের দর্শকদের দেখার টার্গেট নিয়ে এ কেন্দ্রের উদ্বোধনের দীর্ঘ বিশ বছর পর সম্প্রতি অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচারের সময়সীমা চার ঘণ্টায় উন্নীত হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর নাগাদ অনুষ্ঠান সম্প্রচার ৬ ঘণ্টায় উন্নীত করার যাবতীয় তৎপরতা চলছে। চট্টগ্রাম নিয়ে বর্তমান সরকার বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক উদ্যোগে যে বিশাল উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের উন্নয়নও এর একটি অংশ বলে জানিয়েছেন জেনারেল ম্যানেজার মনোজ সেনগুপ্ত। উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালের ১৯ ডিসেম্বর বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের যাত্রা শুরু হয়। উদ্বোধন করেছিলেন ওই সময়ের সরকার প্রধান শেখ হাসিনা। নগরীর পাহাড়তলীতে সবুজে ঘেরা প্রাকৃতিক নৈসর্গিক শোভায় জাকির হোসেন সড়ক সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে প্রতিষ্ঠা হয়েছে বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ কেন্দ্রের কার্যক্রম নিয়ে চট্টগ্রামবাসীর মাঝে যে আশা আকাক্সক্ষা প্রোথিত ছিল সে অনুযায়ী এর বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। জন্মের পর থেকেই এ কেন্দ্রটি অনেকটা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলেছে। শুরুতে যে পরিমাণ উন্নতি ঘটে পরবর্তী সময়ে ক্ষেত্রবিশেষে এর অবনতি ঘটে। নানাভাবে কৌলিন্য হারায় এই কেন্দ্রের সামগ্রিক কর্মকা-। দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির নানা অভিযোগ উঠে এ কেন্দ্রের কার্যক্রম নিয়ে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে কেন্দ্রটি রীতিমতো দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়। শিল্পী, কলাকুশলীদের পরিবর্তে তথাকথিত শিল্পীসহ অনুষ্ঠান পরিচালনা ও অংশগ্রহণকারীদের আধিক্য ঘটে। ফলে এ কেন্দ্রের অনুষ্ঠানমালার প্রতি চট্টগ্রামবাসী আস্থা হারিয়ে ফেলার পাশাপাশি দেখার আগ্রহও নষ্ট হয়ে যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বিটিভি চট্টগ্রাম স্টেশনের ইতিবৃত্ত সরকারের উচ্চপর্যায়ে অবহিত করা হয়। যা তথ্য মন্ত্রণালয় হয়ে শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দফতরেও পৌঁছায়। চট্টগ্রামের নেতৃত্বকারী বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের দফায় দফায় দৃষ্টি আকর্ষণের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কেন্দ্রের উন্নয়নের ঘোষণা দেন। তিনি চট্টগ্রাম ভিত্তিক এক ঘণ্টার অনুষ্ঠানমালা জাতীয় ও বহির্বিশ্ব ভিত্তিক ছয় ঘণ্টায় উন্নীত করার ঘোষণা দেন। এরই আলোকে এ কেন্দ্রের অভ্যন্তরে সংশ্লিষ্ট পয়েন্টগুলোতে পরিবর্তন আসতে শুরু করে। ইতোমধ্যে নিয়োগ দেয়া হয়েছে নতুন জিএম। কয়েক কর্মকর্তাকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। বিটিভির মহাপরিচালক হারুনুর রশীদ গুরুত্বের সঙ্গে এ স্টেশনের সামগ্রিম কার্যক্রম দেখভাল করছেন। জিএম মনোজ সেনগুপ্তের তত্ত্বাবধানে গত ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে এ কেন্দ্রের অনুষ্ঠানমালা চার ঘণ্টার জন্য স্যাটেলাইট সম্প্রচার শুরু হয়েছে। যা পুরো দেশ ছাড়াও বহির্বিশ্বেও দেখা যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জিএম মনোজ সেনগুপ্ত জনকণ্ঠকে জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বর নাগাদ এ কেন্দ্রের অনুষ্ঠান ৬ ঘণ্টায় উন্নীত হবে। প্রধানমন্ত্রী সময় দিতে পারলে সে অনুযায়ী জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশে এ স্যাটেলাইট সম্প্রচার অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হবে। তিনি জানান, ইতোমধ্যে অনুষ্ঠানমালার উন্নয়নে প্রকৃত শিল্পী ও কলাকুলশীদের প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। এ স্টেশন সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। অভিযোগ বক্স স্থাপন করা হয়েছে। দুর্নীতির যে কোন অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে তিনি কুণ্ঠাবোধ করবেন না। সূত্র জানায়, এ কেন্দ্রে লোকবলের সঙ্কট বহুদিনের পুরনো। সংশ্লিষ্ট পয়েন্টগুলোতে লোকবল নিয়োগের একটি প্রস্তাব বর্তমানে বিবেচনাধীন রয়েছে। আশা করা হচ্ছে এক্ষেত্রে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসবে। জিএম মনোজ সেনগুপ্ত স্বীকার করেন, ইতোমধ্যে এ কেন্দ্রে দুর্নীতি, লুটপাটসহ অনিয়ম, স্বজনপ্রীতির অভিযোগ এত ব্যাপক রূপ নেয় যে, বিষয়টি বিটিভিসহ রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার জন্য বিব্রতকর হয়ে দাঁড়ায়। সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে বিটিভি কর্তৃপক্ষের সুপারিশ বিবেচনায় এনে প্রধানমন্ত্রী এ কেন্দ্রের সম্প্রচার ছয় ঘণ্টায় উন্নীতকরণ এবং এই অনুষ্ঠান শুধু চট্টগ্রামভিত্তিক না করে দেশে এবং বিদেশে দর্শকদের কাছে পৌঁছে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সে অনুযায়ী বর্তমানে কার্যক্রম এগিয়ে চলেছে। সূত্র জানায়, বর্তমানে সংবাদ, সংবাদ শিরোনাম দশ মিনিটের স্থলে পনের মিনিট করা হয়েছে। এর পাশাপাশি রয়েছে সংবাদ বুলেটিন। বর্তমান সরকারের এগিয়ে যাওয়ার যে ভিশন তা প্রাধান্য দিয়ে সামগ্রিক অনুষ্ঠানমালা সাজানো হয়েছে এবং তা আরও ব্যাপক করা হচ্ছে। জিএম মনোজ সেনগুপ্ত জানান, এখন অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রতিদিন পবিত্র কোরান পাঠ করা হচ্ছে। এছাড়া সপ্তাহে চারদিন গীতা ও দুই দিন ত্রিপিটক, একদিন বাইবেল পাঠ করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়নের যে দশটি উদ্যোগ নিয়েছেন প্রতিদিন একটি করে সম্প্রচার করা হচ্ছে। আগে এ কেন্দ্রে আজান প্রচার করা হতো না। এখন আজান প্রচার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও প্রধানমন্ত্রীর ভিশন বাস্তবায়নে বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের ভূমিকা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। নতুন নতুন অনুষ্ঠানের পাশাপাশি পরিচালনার ক্ষেত্র এবং এ কেন্দ্রের অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জায় ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে ইতোমধ্যে। গত বিশ বছর এ কেন্দ্রের যে বেহাল দশা বিরাজমান ছিল আশা করা হচ্ছে নতুন প্রশাসনিক কার্যক্রমে এতে আমূল পরিবর্তন আসবে এবং চট্টগ্রামবাসীর আশা-আকাক্সক্ষা পূর্ণতা পাবে স্থানীয় শিল্পী, কলাকুশলীদের অংশগ্রহণে সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের প্রচারকে প্রাধান্য দিয়ে।
×