ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিশিষ্টজনদের হত্যার হুমকি- জঙ্গীদের নতুন ছক, না অপকৌশল!

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ১৬ অক্টোবর ২০১৬

বিশিষ্টজনদের হত্যার হুমকি- জঙ্গীদের নতুন ছক, না অপকৌশল!

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একের পর এক দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে। সর্বশেষ জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ও সিলেটের শাবি অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল এবং তাঁর স্ত্রী অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হককে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে সিলেটের জালালাবাদ থানায় একটি জিডি হয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, পুলিশ ও র‌্যাবের তরফ থেকে বেশ কয়েকটি জঙ্গী আস্তানায় অপারেশনে অনেক জঙ্গী নিহতের পর অধিকহারে এমন হুমকি বার্তা আসছে। হত্যার হুমকি দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি ভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে রেখে জঙ্গীরা বড় ধরনের কোন নাশকতার ছক কষছে কিনা সে বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। এছাড়া অব্যাহত হুমকি দিয়ে জঙ্গীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তাদের আস্তানায় আর অভিযান না চালানোর জন্য অনেকটা প্রচ্ছন্ন হুমকি দিচ্ছে। এটি জঙ্গীদের কৌশল হতে পারে। আবার কোন গোষ্ঠী বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করতে পরিকল্পিতভাবে এমন হুমকিবার্তা দিয়ে দেশে জঙ্গীবাদের শক্ত ভিত থাকার অপপ্রচার চালাতে পারে। শুক্রবার জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ও সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও তাঁর স্ত্রী অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হককে হত্যার হুমকি দিয়ে মোবাইলে মেসেজ পাঠানো হয়। এ ব্যাপারে সিলেটের জালালাবাদ থানার ওসি আকতার হোসেন জানান, মোবাইল ফোনে হত্যার হুমকির বিষয়ে শুক্রবার থানায় অধ্যাপক জাফর ইকবাল ও তাঁর স্ত্রী ইয়াসমিন হক একটি জিডি করেছেন। তাদের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে পুলিশ সতর্ক রয়েছে। জানা গেছে, গত বুধবার জাফর ইকবাল দম্পতি ঢাকায় অবস্থানকালে তাদের মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে হুমকি দেয়া হয়। নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম পরিচয়ে এ হুমকি দেয়া হয়। এর আগে গত বৃহস্পতিবার বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খানকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়। এ ঘটনায় শনিবার দুপুরে শাহবাগ থানায় বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে একটি জিডি করা হয়েছে। বাংলা একাডেমির সচিব আনোয়ার হোসেন জানান, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ভারতে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় চিকিৎসাপরবর্তী বিশ্রামে রয়েছেন। এর আগে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির, ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের সঙ্গে জড়িত অনেককে এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদসহ দেশের বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিকে হত্যার হুমকি দেয়া হয় বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের তরফ থেকে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় দুই পুলিশ কর্মকর্তা ও ১৭ বিদেশীসহ ২০ জনকে হত্যার পর দেশের বিভিন্ন জায়গায় একের পর এক অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সম্প্রতি এসব অভিযানে অন্তত ৩৩ জঙ্গী নিহত হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে অন্তত দুশ’ জঙ্গী। কল্যাণপুর ও নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায় জঙ্গী বিরোধী অভিযানে অনেক জঙ্গী নিহত হয়। সর্বশেষ ঢাকার সাভারের আশুলিয়া, গাজীপুর, টাঙ্গাইলে পাঁচটি জঙ্গী আস্তানায় অভিযান চালায় পুলিশ ও র‌্যাব। এতে ১২ জঙ্গী নিহত হয়। নিহতদের মধ্যে নব্য জেএমবির মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরীসহ অনেকেই নিহত হয়। পুলিশ ও র‌্যাবের উর্ধতন কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, জঙ্গীদের শতকরা প্রায় নব্বইভাগই দমন করা সম্ভব হয়েছে। অভিযান অব্যাহত আছে। এমন অভিযানের মুখে জঙ্গী সংগঠনগুলো দিশেহারা হয়ে পড়েছে। তাই তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিভ্রান্ত করতে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের একের পর এক হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি ভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে রেখে বড় ধরনের নাশকতা চালাতে এমন হুমকি দিয়ে যাচ্ছে কিনা সে বিষয়ে তারা সতর্ক রয়েছে। তবে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ধারণা করা হচ্ছে, কোন গোষ্ঠী দেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে নষ্ট করতেই এমন অপতৎপরতা চালিয়ে যেতে পারে। এছাড়া দেশে জঙ্গীবাদের শক্ত ভিত রয়েছে বলেও ওই গোষ্ঠী নানাভাবে প্রচার চালানোর চেষ্টার অংশ হিসেবেই এসব কর্মকা- চালাতে পারে।
×