ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সাভার স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা চীনা প্রেসিডেন্ট ঢাকা থেকে গোয়া গেছেন

প্রকাশিত: ০৫:১১, ১৬ অক্টোবর ২০১৬

সাভার স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা চীনা প্রেসিডেন্ট ঢাকা থেকে গোয়া গেছেন

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ জাতীয় স্মৃতিসৌধে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ঢাকা ত্যাগ করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। শনিবার সকালে চীনা প্রেসিডেন্ট ভারতের গোয়ার উদ্দেশে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। তার এই সফর বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন মাত্রায় উন্নীত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এদিকে চীনা প্রেসিডেন্টের সফরে নানা আলোয় সেজেছিল ঢাকার রাজপথ। শনিবার সকালে বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টার্মিনালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফুলের তোড়া দিয়ে চীনা প্রেসিডেন্টকে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানান। প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের একটি দল চীনা প্রেসিডেন্টকে সামরিক কায়দায় বিদায়ী অভিবাদন জানায়। এরপর লাল গালিচার ওপর দিয়ে চীনা প্রেসিডেন্টকে উড়োজাহাজ পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে বিদায় জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল ১০টা ২০ মিনিটে চীনের প্রেসিডেন্টকে বহনকারী উড়োজাহাজটি ওড়ার আগে বিমান বাহিনীর চারটি বিমান বিমানবন্দর থেকে ওড়ে। এগুলো বাংলাদেশের আকাশসীমা পর্যন্ত চীনা প্রেসিডেন্টকে পাহারা দেয়। বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম, পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক। বিমানবন্দরে যাওয়ার আগে সফরের শেষ কর্মসূচীতে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান শি জিনপিং। স্মৃতিসৌধে চীনের প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানান গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। শি জিনপিং শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে একটি গাছের চারা রোপণ এবং পরিদর্শক বইয়ে স্বাক্ষর করেন। চীনা প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরে সড়ক-মহাসড়কের সাজসজ্জা ছিল চোখে পড়ার মতো। বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ে এই সফরে নানা আলোয় সেজেছিল ঢাকার রাজপথ। শুক্রবার রাতে রাজধানীর প্রায় সব সড়কেই দেখা যায় আলোকসজ্জা। এর আগেও বাংলাদেশের আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়েছেন বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশের নেতারা। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। রাজধানীর বিমানবন্দর সড়ক থেকে বঙ্গভবন পর্যন্ত প্রায় সবকটি সড়কেই ছিল আলোর নানা খেলা, নানা কারুকাজ। বঙ্গভবনে যাওয়ার পথে রাস্তার পাশে হরেক রঙের আলোর পাশাপাশি জিরো পয়েন্ট সেজেছিল অন্যরকম সাজে। আলোর ঝলকানিতে যেন নতুন রূপ পেয়েছিল জিরো পয়েন্ট। পল্টন, প্রেসক্লাব এলাকার ডিভাইডার সেজেছিল হরেক রঙের আলোর মেলায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের আলোর মেলা ছিল দেখার মতো। আলো দিয়েই তৈরি হয়েছিল শহীদ মিনার, ফুল, পাখি। টিএসসি থেকে এগিয়ে গেলে চোখে পড়বে শাহবাগ চত্বরের জায়েন্ট স্ক্রিন। আলোর দিয়ে সাজানোয় বাদ যায়নি জায়েন্ট স্ক্রিনটিও। বাংলাদেশের শিক্ষার উন্নয়ন ও শান্তির প্রতীক আলোক সজ্জার মাধ্যমে ফুটে উঠেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক। হোটেল শেরাটন হয়ে ফার্মগেট যেতেই চোখে পড়ে ডিভাইডারে হাজার তারার মেলা। দেখে মনে হবে আলোর প্রদর্শনী। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের প্রতিকৃতির ছবি উঠে আসে ফার্মগেটের আলোর তৈরি কারু কাজে। উঠে এসেছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের গল্পও। অন্যদিকে মিরপুর থেকে আগারগাঁও হয়ে বিজয় সরণিতে যাওয়ার পথে রাস্তার দু’পাশের আলোর মেলাও ছিল দেখার মতো। ডিভাইডারের মাঝের গাছগুলো আলোয় আলোকিত হয়ে যেন জানান দিচ্ছিল বাঙালীদের আতিথেয়তার কথা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশপাশের দেয়াল ও রাস্তায় নানা ধরনের ফুলের দৃশ্য ফুটে উঠে আলোর ঝলকানিতে। এভাবে মহাখালী, বনানী, বিশ্বরোড, বিমানবন্দর রোডের পুরো জায়গা জুড়েই ছিল আলোর মেলা, আলোর প্রদর্শনী। আর এসবই আয়োজন করা হয়েছিল কেবল শি জিনপিংয়ের জন্য। শুক্রবার সকালে ঢাকায় এসেছিলেন শি জিনপিং। এটি ছিল তিন দশক পর বাংলাদেশে চীনের কোন প্রেসিডেন্টের প্রথম সফর। তার এই সফরে বাংলাদেশ-চীন ২৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এর মধ্যে ১২টি ঋণ ও দ্বিপক্ষীয় চুক্তি এবং দুই দেশের সরকারের মধ্যে ১৫টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক বলে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক জানান। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের কোন প্রেসিডেন্ট তিন দশক পর বাংলাদেশ সফর করলেন। সফরে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন শি জিনপিং। জাতীয় সংসদের স্পীকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া তার সঙ্গে দেখা করেন। চীনা প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে ঢাকা-বেজিং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও গতি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশেষ করে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও বাড়বে। ২০১৫ সালে ঢাকা-বেজিং কূটনৈতিক সম্পর্কের চল্লিশ বছর পূর্তি হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে ৪০ বছর কূটনৈতিক সম্পর্ক পূর্তি উপলক্ষে গত বছরই ঢাকায় আসার কথা ছিল চীনা প্রেসিডেন্টের। তবে বিভিন্ন কারণে চীনা প্রেসিডেন্টের সফর পিছিয়ে যায়। শি জিনপিংয়ের আগে ২০১০ সালে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। তখন তিনি চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এদিকে ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফর করেন। সে সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনা প্রেসিডেন্টকে ঢাকা সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। চীনা প্রেসিডেন্টের চলাচলের জন্য বিমানবন্দর সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রিত করা হয়। শনিবার জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর চীনা প্রেসিডেন্ট ভারতের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। সেখানে তিনি ব্রিকস-বিমসটেক সম্মেলনে যোগ দেবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ব্রিকস-বিমসটেক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন। শুক্রবার চীনা প্রেসিডেন্ট কম্বোডিয়া থেকে ঢাকায় আসেন।
×