ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচী

‘বালতি মাপা আছে, সমস্যা নেই’

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ১৬ অক্টোবর ২০১৬

‘বালতি মাপা আছে, সমস্যা নেই’

রাজুমোস্তাফিজ, কুড়িগ্রাম ॥ খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর আওতায় রৌমারীতে ১০ টাকা মূল্যের চাল বিক্রির ডিলারশীপ নিয়োগে অনিয়ম করা হয়েছে। এক্ষেত্রে নীতিমালা থাকলেও অনুসরণ করা হয়নি। বিজ্ঞপ্তি দিয়ে যাচাই-বাছাই করার বিধান থাকলেও এক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। নীতিমালা অনুযায়ী নিযুক্ত ডিলারের খাদ্য সংরক্ষণের উপযোগী দোকান বা গুদাম ঘর নেই। এছাড়া একই পরিবারের একাধিক সদসের নামে খাদ্য বিভাগের অধীনে টিসিবি এবং ওএমএম ডিলারশীপ খাকা সত্ত্বেও আরও একজন ডিলার নিয়োগ পেয়েছে। পাঁচ শ’ কার্ডধারীর বিপরীতে এক ডিলার নিয়োগ হিসাবে এখানে ২৭ জনকে নিয়োগ দেয়ার কথা থাকলেও দেয়া হয়েছে ১২ জনকে। যারা ডিলার নিয়োগ পেয়েছে তারা অধিকাংশ সরকারী দলের নেতাকর্মী। অপরদিকে হতদরিদ্রের নামে ১০ টাকা মূল্যর কার্ড প্রণয়নে স্বজনপ্রীতি ও দেরিতে বিতরণ, চাল বিক্রিতে অনিয়ম, ওজনে কম, সচ্ছল ও প্রবাসীদের নামে চাল উত্তোলনসহ নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে। এনিয়ে একাধিক অভিযোগ করলেও কোন লাভ হয়নি বলে জানান ভুক্তভোগীরা। রৌমারী ইউনিয়নে দেখা গেছে, তালিকায় প্রবাসী কার্ডধারী মাহুজল (২৫৪৪০), মাহুবর (২৯৪৮), রফিকুল (২৯৭৫), হারুনের (২৮৩১) নাম। এছাড়াও একই পরিবারে একাধিক কার্ড ও ডাবল কার্ড রয়েছে রৌমারী ইউনিয়নে ১নং ওয়ার্ডে। এমন কার্ডধারী হলেনÑ আলী মোহামদ (২২২১), আব্দুস সবুর (২২১৯), জাহিদুল ইসলাম (৩৩০), আনজুমানআরা (৩৩৩), কামাল (৩৩৪) ও কমলা (৩৩৪)। অপরদিকে, হতদরিদ্রদের চাল পাচ্ছে সচ্ছলরাÑ এমন কার্ডধারী হলেনÑ আবু সাইদ (২৫৫৯), বাচ্ছু মিয়া (২৭১৭), মন্টু মিয়া ও খলিলুুর রহমান। এছাড়াও চায়না (২৪৮৫), কাইয়ুম (৩৩৫), ডাবল নামও বাদ পড়েনি তালিকা থেকে। সরকারী দলের নেতাকর্মীরা তালিকায় রয়েছে। সর্বোপরি ৭, ৮, ৯নং, ওয়ার্ড মেম্বার শাহিদা খাতুন নিজেই নামে বেনামে সাতজনের তালিকা দিয়েছেন। চাল নিতে না আসার কারণে রৌমারী ইউনিয়নে ২১৫টি কার্ডের চাল ফেরত গেছে। যাদুরচর ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, ডিলার একটি দোকানের মধ্যে কিছু চালের বস্তা নিয়ে বসে রয়েছেন। অপর একজন বালতি দিয়ে চাল মেপে দিচ্ছেন। বালতি দিয়ে চাল মাপছেন কেন? জানতে চাইলে তিনি জানান, বালতি মাপা আছে, সমস্যা নেই। আদমদীঘিতে চালের বদলে টাকা! নিজস্ব সংবাদদাতা, সান্তাহার, বগুড়া থেকে জানান আদমদীঘি উপজেলায় হতদরিদ্রদের জন্য খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর ১০ টাকা কেজি দরের চাল বিতরণের কার্ড তৈরি করা নিয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। চেয়ারম্যান-মেম্বার ও দলীয় নেতাকর্মীদের করা তালিকার প্রায় অর্ধেকেরও বেশি মানুষ সচ্ছল ও ধনী। শুধু তাই নয়, তালিকাভুক্ত অনেকেই জানেন না যে তাদের নামে ওই কর্মসূচীর কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। ফলে কেউ চাল নিতে যায়নি। এ সুযোগে মেম্বার ও দলীয় নেতাকর্মীরা তালিকাভুক্তদের জন্য বরাদ্দ চালের বদলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হাতে ধরিয়ে দিয়েছে দুই থেকে চার শ’ টাকা। আর বিতরণ তালিকায় ডান হাত আর বাম হাতে টিপসই ও স্বাক্ষর করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এদিকে কোথাও না গিয়ে এবং স্বাক্ষর না করেই শুধু আইডি দিয়ে নগদ টাকা পেয়ে কোন বাদ-প্রতিবাদ করেনি সচ্ছল ও ধনী ব্যক্তিরা। কিন্তু সত্য কখনও চাপা থাকে না। অনিয়মের ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর বেকায়দায় পড়েন চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা। তারা রাতারাতি সচ্ছল ও ধনীদের নিকট থেকে কার্ড তুলে নিয়ে পুনঃতালিকা করছেন। উপজেলার ছয় ইউনিয়নেই এ রকম ঘটনা কমবেশি ঘটেছে। উপজেলায় মোট কার্ডধারীর সংখ্যার সঠিক হিসাব জানা না গেলেও প্রায় সাড়ে আট হাজার কার্ডধারীর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি সচ্ছল ও ধনী মানুষ ওই তালিকায় স্থান পেয়েছিল। শনিবার উপজেলার নসরতপুর ইউনিয়নে সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, ওই ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের কোলাদীঘি (পুশিন্দা) গ্রামের বাসিন্দা সাবেক এক ইউপি চেয়ারম্যানের ছেলে, এক সচ্ছল মুক্তিযোদ্ধার ছেলে এবং ছুটিতে আসা প্রবাসী ব্যক্তিসহ বেশকিছু নাম পাওয়া গেছে, যাদের নামে ইস্যু করা কার্ড ইতোমধ্যে তুলে নিয়ে পরিবর্তন করা হয়েছে। ঘটনাটি সত্য বলে স্বীকার করা হলেও তারা অভিযোগ আকারে জানাতে অপারগতা জানিয়েছেন। ওই ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার গোলাম রাব্বানীকে বাড়িতে না পেয়ে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নীতিমালা জানা না থাকার কারণে কিছু ত্রুটি হয়েছিল। সেগুলো বাতিল করা হয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেজাউল করিম বলেন, ডিলারদের দোকানের পাশেই চাল কেনা-বেচার অভিযোগ পাওয়া গেলেও সরেজমিন তদন্তে এর সত্যতা মেলেনি।
×