ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতের দুই বিলিয়ন ডলারের বিপরীতে চীন দিল ২৪ বিলিয়ন

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ১৬ অক্টোবর ২০১৬

ভারতের দুই বিলিয়ন ডলারের বিপরীতে চীন দিল ২৪ বিলিয়ন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের সঙ্গে অবকাঠামো উন্নয়নে সহজ শর্তে প্রতিবেশী দেশ ভারত ২ বিলিয়ন ডলার ঋণ চুক্তি করেছিল গত বছর। আর এর জবাবে চীন বাংলাদশের সঙ্গে ২৪ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তি করল। ভারতের এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে গিয়ে সহজ শর্তে ২ বিলিয়ন ডলার ঋণ চুক্তি করেছিল। কিন্তু চীন বাংলাদেশকে ভারতের চেয়েও বেশি ঋণ দিচ্ছে। সাংহাই ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনালের সাউথ এশিয়া স্ট্যাডিজের পরিচালক জাও গানচেং বলেন, ভারত ও চীন উভয় দেশই বাংলাদেশের উন্নয়ন চায়, যা অন্য কেউ চাইত না বা চাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি না যে বাংলাদেশ নিয়ে ভারত ও চীন কোন খেলায় মেতেছে। কারণ বাংলাদেশ চীন ও ভারতের বিনিয়োগকে স্বাগত জানিয়েছে। এনডিটিভির ওই প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, শুক্রবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ঢাকা সফরে এসে বাংলাদেশের সঙ্গে ২৪ বিলিয়ন ডলারের এ ঋণ চুক্তি সই করেন। এটা এ পর্যন্ত বাংলাদেশের পাওয়া সর্বোচ্চ বিদেশী ঋণ। এ ঋণের টাকা বাংলাদেশ জ্বালানি প্ল্যান্ট, সমুদ্রবন্দর এবং রেলওয়ে নির্মাণে ব্যয় করবে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মূলত বাংলাদেশে অবকাঠামো প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগ বাড়াতে গত ৩০ বছরের মধ্যে কোন চীনা প্রেসিডেন্ট প্রথম বাংলাদেশ সফর করলেন। যেখানে ভারতও তাদের প্রভাব বিস্তার করতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। এছাড়া জাপানও বাংলাদেশের উন্নয়নে যুক্ত রয়েছে। বিশেষ করে বন্দর ও জ্বালানি কমপ্লেক্স নির্মাণে জাপান কম সুদে ঋণ দিচ্ছে। ফলে ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশে প্রভাব বিস্তার ধীরে ধীরে কঠিন হয়ে উঠছে। ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নানের উদ্ধৃতি দিয়ে জানানো হয়, বাংলাদেশের কমপক্ষে ২৫টি প্রকল্পে চীন অর্থায়ন করতে চায়। যার মধ্যে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুত কেন্দ্র ও গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে চীনের আগ্রহ বেশি। এমএ মান্নান রয়টার্সকে জানিয়েছেন, কম সুদে রেকর্ড পরিমান (২৪ বিলিয়ন ডলার) ঋণ চুক্তি সই করায় শি জিনপিংয়ের সফর একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে। চীনের প্রস্তাবিত প্রল্পগুলোর মধ্যে সড়ক অবকাঠামো নির্মাণ এবং তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন অন্যতম। তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশের অবকাঠামো সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন। এজন্য আমাদের অনেক ঋণ দরকার। এদিকে চীনের প্রেসিডেন্টের এ সফরে বিদ্যুত গ্রিড নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করতে বাংলাদেশ চীনের জিয়াংসু ইস্টার্ন কোম্পানির সঙ্গে ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি সই করেছে। চীনের কর্মকর্তারা জানিয়েছে, বাংলাদেশের সোনাদিয়ায় একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে চীনের আগ্রহ বেশি। যে প্রস্তাবনাটি গত এক বছর ধরে আটকে আছে। কম্বোডিয়া সফর শেষে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দুদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে শুক্রবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে ঢাকায় পৌঁছান। গত ৩০ বছরের মধ্যে চীনের কোন প্রেসিডেন্ট প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সফর করলেন। এরপর সপ্তাহব্যাপী ব্রিকস সম্মেলনে অংশ নিতে শনিবার তিনি ভারতের গোয়ার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। এনডিটিভির ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়, চীনের প্রেসিডেন্ট এমন এক সময় এশিয়া সফরে বের হয়েছেন, যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে প্রতিবেশী শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানোর চেষ্টা করছেন।
×