ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

'১৭ সালকে মৈত্রী ও বিনিময়ের বছর ঘোষণা

প্রকাশিত: ০৮:০৮, ১৫ অক্টোবর ২০১৬

'১৭ সালকে মৈত্রী ও বিনিময়ের বছর ঘোষণা

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ও চীন আগামী বছর ২০১৭ সালকে মৈত্রী ও বিনিময়ের বছর হিসেবে ঘোষণা করেছে। এছাড়া চীনের ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোডকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সমুদ্রখাত বিকাশে সহযোগিতা দেবে চীন। এছাড়া উভয় দেশ সামরিক সহযোগিতাও জোরদার করবে। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ঢাকা সফর উপলক্ষে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ২৩ দফা যৌথ বিবৃতিতে এসব বলা হয়েছে। শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দুই দেশের যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছে। যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, দুই দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজ করছে। দুই দেশের এ ঐতিহাসিক বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ও চীন উন্নয়নে একে অপরের পাশে থাকবে। উভয় দেশ শান্তিপূর্ণ সহযোগিতা, একে অপরকে উন্নয়ন ও দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার করবে। এক চীন নীতিতে বাংলাদেশের সমর্থনকে স্বাগত জানিয়েছে চীন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও উন্নয়নে চীনের সমর্থন থাকবে বলে জানিয়েছে দেশটি। দুই দেশ বহুপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার করবে। বাংলাদেশ ও চীন পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের নিয়মিত বৈঠক করবে। এছাড়া দুই দেশের সরকারী ও রাজনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করবে। চীনের ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার জন্য চীনের এ কর্মসূচী বাংলাদেশের জন্য একটি সুযোগ আনবে বলে মনে করে বাংলাদেশ। টেকসই উন্নয়নের জন্য উভয় দেশ এই কর্মসূচী বাস্তবায়নে জোর দেবে। বাংলাদেশ ও চীন ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, বিদ্যুত, তথ্য প্রযুক্তি, কৃষি ইত্যাদি খাতে সহযোগিতা জোরদারে ঐকমত্য হয়েছে। দুই দেশে মানবসম্পদ উন্নয়নেও উদ্যোগ নেবে। বাংলাদেশের ২২টি প্রকল্পে চীন সহযোগিতা দেবে। এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে পায়রায় ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুত প্রকল্প, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ, দাশেরকান্দিতে ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, চারস্তরে ন্যাশনাল ডাটা সেন্টার ইত্যাদি। উন্নয়ন ও উৎপাদন সহযোগিতা বাড়াতে উভয় দেশের মধ্যে যে ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট হয়েছে। তার অংশ হিসেবে ব্যবসায় ও আর্থিক খাতেও সহযোগিতা বাড়ানো হবে। এশিয়ান ইনফ্রাস্টাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) বাংলাদেশের বিদ্যুত সঞ্চালন ব্যবস্থাপনা প্রকল্পকে সহায়তা দেবে। ঢাকায় গত আগস্ট মাসে দুই দেশের যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের বৈঠক হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারে এই বৈঠক নিয়মিতভাবে করার জন্য উভয় পক্ষ একমত হয়েছে। উভয় দেশ সমুদ্রখাতে সহযোগিতা জোরদারে একমত হয়েছে। বাংলাদেশের সমুদ্র অর্থনীতি বিকাশে চীন সহযোগিতা করবে। বাংলাদেশ ও চীন সাউথ সাউথ সহযোগিতা ফোরামের সদস্য। উভয় দেশ এই ফোরামে একযোগে কাজ করবে। এই ফোরামের ২০৩০ সালের এজেন্ডা বাস্তবায়নে উভয় দেশ কাজ করবে। উভয় দেশ ২০১৭ সালকে মৈত্রী ও বিনিময়ের বছর হিসেবে উল্লেখ করে দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছে। উভয় দেশ সামরিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। এই লক্ষ্যে দুই দেশের মধ্যে প্রশিক্ষণ, অভিজ্ঞতা বিনিময় ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। একই সঙ্গে জাতিসংঘ শান্তি মিশনেও উভয় দেশ অংশগ্রহণ করবে। দুই দেশ সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের নিন্দা জানিয়েছে। জঙ্গীবাদ প্রতিরোধ, বাংলাদেশের শান্তি ও জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় চীন পাশে থাকবে বলে অঙ্গীকার করেছে। উভয় দেশ বিসিআইএম উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছে। এছাড়া উভয় দেশ জাতিসংঘের রেগুলেশন ও চার্টার মেনে সংস্থাটিকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছে। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বাংলাদেশের আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের শীর্ষ নেতৃত্বকে চীন সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। চীনা প্রেসিডেন্ট ১৪-১৫ অক্টোবর ঢাকা সফর করছেন। ঢাকা সফরে এসে তিনি প্রেসিডেন্ট মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে। সফর শেষে তিনি আজ শনিবার ভারতের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন।
×