স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর গুলশান-বনানীর বিশেষ বাস সার্ভিস ‘ঢাকা চাকা’ খুব একটা ঘুরতে পারছে না। যানজটে আটকা পড়ে পদে পদে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এর স্বাভাবিক গতি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে অতিরিক্ত ভাড়া ও বাসের সঙ্কট। অন্যদিকে আগের মতোই বহিরাগত রিক্সা চলাচল করছে নির্বিঘেœ। এসব সমস্যা দূর করতে না পারলে উদ্যোগটি ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বিদেশী নাগরিক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপত্তার স্বার্থে গত ১০ আগস্ট চালু হয় নগর সার্কুলার বাস সার্ভিস ‘ঢাকা চাকা’ এবং বিশেষ রঙের রিক্সা সার্ভিস। ওই দিন থেকে গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতন আবাসিক এলাকার মধ্যে চক্রাকারে চলাচল করছে এসব বাহন। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে স্থানীয় কয়েকটি সংগঠন এবং একটি বড় শিল্প গ্রুপ এ কর্মসূচীতে সহযোগিতা করছে। স্থানীয়ভাবে উদ্যোগটি বেশ আলোচিত। ঢাকা চাকা বর্তমানে দুটি রুটে চলাচল করছে। প্রথম রুটটি তেজগাঁও-গুলশান লিংক রোড থেকে পুলিশ প্লাজা ও গুলশান-১ হয়ে গুলশান-২ নম্বর গোলচক্কর পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় রুটটি কাকলী মোড়, বনানী বাজার ও গুলশান-২ হয়ে নতুন বাজার পর্যন্ত।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিদিন সকালে বনানী ও গুলশানের প্রধান সড়কগুলো যানজটে স্থবির হয়ে যায়। গুলশান এ্যাভিনিউ, কামাল আতাতুর্ক এ্যাভিনিউ, মাদানী এ্যাভিনিউ ও বাড্ডা লিংক রোডÑ সবখানে শত শত গাড়ির লাইন পড়ে যায়। এই যানজট ঠেলেই চলাচল করছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের লোগো বহনকারী ‘ঢাকা চাকা’র কয়েকটি যাত্রীবাহী বাস। গত মঙ্গলবার বিকেলে গুলশান-১ নম্বর সার্কেলে ঢাকা চাকা’র টিকিট কাউন্টারে অন্তত পনেরো মিনিট দাঁড়িয়ে বাসের দেখা মেলে। বাস আসার পর লোকজন লাইন ধরে ওঠেন। এর কিছুক্ষণ পর চারটি বাস এসে হাজির হয় ওই কাউন্টারের সামনে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাস পরিচালনাকারী নিটল মটরসের স্টাফ মিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘গুলশান-বনানীর সব রাস্তায়ই জ্যাম থাকে। কোন বাস সময়মতো আসতে পারছে না। তাই কখনও বাস আসতে দেরি হয়, কখনও একসঙ্গে কয়েকটি এসে পড়ে।’ তিনি জানান, ‘বর্তমানে দুটি রুটে ২০টি বাস চলাচল করছে। শুনেছি কোম্পানি আরও বাস বাড়াবে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এসব বাসে চড়ে একজন যাত্রী যেখানেই নামেন তাকে দিতে হচ্ছে ১৫ টাকা। এ ভাড়া কোম্পানি নির্ধারণ করে দিয়েছে।’
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মোবাইল কোম্পানির কর্মকর্তা আবদুস সবুর বলেন, ‘একে তো সারাক্ষণ যানজট, অন্যদিকে অতিরিক্ত ভাড়াÑ এ দুটি এখন বড় সমস্যা। আগে পাঁচ টাকা দিয়ে লোকাল বাসে গুলশান-বনানী বা আশপাশের দূরত্বে যাতায়াত করতে পারতাম। এখন পুলিশ প্লাজা থেকে বনানী যেতে গুলশান-২ নম্বর সার্কেলের এসে বাস পাল্টিয়ে যেতে হয়। এতে ভাড়া পড়ে ৩০ টাকা।’ তিনি বলেন, ‘কোম্পানির লোকজন গুলশান-বনানীতে প্রতিদিন ২০টি বাস চলছে বলে দাবি করলেও আদৌ তা সঠিক না। আমাদের দেখা মতে, সর্বোচ্চ ১২টি বাস এখানে চলাচল করছে।’
অন্যদিকে ঢাকা চাকা উদ্বোধনের দিন হলুদ রিক্সাও উদ্বোধন করা হয়। উদ্যোক্তাদের ঘোষণা অনুযায়ী হলুদ রঙের পাঁচ শ’ রিক্সা নামার কথা। এর মধ্যে গুলশানে চলবে ২০০, বনানীতে ২০০, বারিধারায় ৫০ এবং নিকেতনে ৫০টি। উল্লেখিত এলাকার মধ্যেই রিক্সাগুলোর চলাচল সীমিত থাকার কথা। কিন্তু মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, হলুদ রিক্সা চলছে প্রায় ২০০টির মতো। এর সঙ্গে বাইরের রিক্সাও চলছে হরদম। এ বিষয়ে গুলশান সোসাইটির এক কর্মকর্তা বলেন, সব এখনও নামানো সম্ভব হয়নি। তাই সাধারণ রিক্সাগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে না। গত ১ জুলাই গুলশান হামলার পর থেকে গুলশান ও বনানী এলাকায় চলাচলকারী গণপরিবহন বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। কিছুদিন পর সীমিত আকারে কিছু বাস চলাচল করতে দেয়া হলেও পরিবহন সঙ্কট তীব্র হয়ে ওঠে। এরপর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে চালু হয় ঢাকা চাকা। কিন্তু পরিস্থিতি দেখে ভুক্তভোগীদেরই মন্তব্য- এতে তাদের আশার প্রতিফলন ঘটেনি।
