ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বেহাল সড়ক ॥ ময়মনসিংহে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ১৫ অক্টোবর ২০১৬

বেহাল সড়ক ॥ ময়মনসিংহে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল

স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ ॥ উন্নয়ন ও মেরামত সংস্কার কাজসহ মাস্টাররোলের নামে লুটপাটের মহোৎসব চলছে ময়মনসিংহ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগে। মোটা অঙ্কের টাকায় বছরজুড়ে চলা সড়কের উন্নয়ন ও মেরামত কাজ শেষ হতে না হতেই উঠে যাচ্ছে ইট সুরকি। প্রতিটি সড়কে খানাখন্দসহ সৃষ্টি হয়েছে ছোট বড় অসংখ্য গর্তের। এসব সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। প্রায়ই ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে যাত্রী। চলতি বর্ষায় প্রতিটি সড়কের এমনই বেহাল দশা যে এখন চলাই দায় হয়ে পড়েছে। অথচ সড়কের এই বেহালদশা কিংবা মানুষের ভোগান্তি দেখার কেউ নেই! সওজের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানায়, গত অর্থবছরে এসব উন্নয়ন, মেরামত, সংস্কারের নামে ব্যয় করা হয়েছে এক কোটি ১০ লাখ টাকার ওপরে। চলতি অর্থবছরেও একই অঙ্কের বরাদ্দ মিলেছে। সূত্র জানায়, ব্যস্ততম ময়মনসিংহ হালুয়াঘাট সড়কের পাটগুদাম ব্রহ্মপুত্র ব্রিজ মোড় থেকে শম্ভুগঞ্জ বাজার পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সড়কের বেহালদশা এখন চরমে। সড়কটির সিলকোট ও কার্পেটিং উঠে গেছে বর্ষার গোড়াতেই। অথচ বর্ষার আগে দুই দফায় এই অংশে ওভার লে চরিত্রের সিলকোট ও কার্পেটিং কাজ করা হয়েছিল। ইতোমধ্যে সিলকোট ও কার্পেটিং এবং ইট সুরকি উঠে সৃষ্টি হয়েছে ছোট বড় অসংখ্য খানাখন্দের। সড়ক বিভাগ রাস্তাটি সচল রাখার জন্য এসব খানাখন্দের ওপর আধলা ইট সুরকি আর বালি ফেলে নামকাওয়াস্তের বিটুমিনের প্রলেপ দিয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই এই প্রলেপ উঠে আগের চেহারায় ফিরে গেছে সড়কটি। এই সড়ক ধরে বৃহত্তর ময়মনসিংহের শেরপুর, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, ভৈরব, হালুয়াঘাট ও সিলেট চট্টগ্রামসহ অন্তত ১৮ রুটের যানবাহন চলাচল করে। নি¤œমানের মেরামত কাজ টিকছে না বলে দাবি দূরপাল্লার চালকদের। পণ্যবাহী ট্রাকের চাকার সঙ্গে উঠে যাচ্ছে বিটুমিনের প্রলেপসহ ইট সুরকি। চালকদের অভিযোগ-নি¤œমানের এই মেরামত কাজ লুটপাট ও অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। শহরের চরপাড়া মোড় থেকে পাদ্রী মিশন রোড হয়ে পাটগুদাম ব্রিজ মোড় পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়কে এখন রিক্সা ও অটো রিক্সাসহ কোন হাল্কা যান যেতে চায় না। পুরো সড়কে ছোট বড় গর্ত আর কাদাজলে একাকার অবস্থা। যাত্রীবাহী যান চলছে হেলেদুলে। এই সড়কটিও বর্ষার আগে ও মাঝখানে একাধিকবার সিলকোট কার্পেটিংসহ মেরামত কাজ করে সওজ। স্থানীয়দের অভিযোগ, সওজ রাতের বেলায় মাস্টাররোল কাজের মাধ্যমে গর্তের ওপর ইট সুরকি ফেলে তার ওপর নামমাত্র বিটুমিন ছিটিয়ে দেয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই তা ভেসে যায়। একাধিক ঠিকাদারের অভিযোগ, সওজ কর্মকর্তারা নিজেদের পকেট ভারি করতে মাস্টাররোলের মাধ্যমে টেন্ডারবিহীন কাজ করছে। এতে করে বছরে সরকারের মোটা অঙ্কের টাকা গচ্চা যাচ্ছে। একই অবস্থা ময়মনসিংহ-শেরপুর, ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ-গফরগাঁও, ত্রিশাল বালিপাড়া, ময়মনসিংহ-ফুলবাড়িয়া ও ভালুকা-গফরগাঁও সড়কের। পরিবহন চালকেরা যাত্রীদের কাছ থেকে সড়ক খারাপ অজুহাতে আদায় করছে বাড়তি ভাড়া। এ নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের প্রায় ঘটছে অপ্রীতিকর ঘটনা। ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। প্রায়ই ছোট বড় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে যাত্রীরা। ময়মনসিংহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ খান জানান, চলতি বছরে চার কিস্তিতে এক কোটি টাকার ওপরে বরাদ্দ দিয়ে সড়কের খারাপ অংশ সচল রাখতে রুটিন মেইন্টেন্যান্সের আওতায় উন্নয়ন কাজ করা হচ্ছে। এজন্য শহরের খাকডহর, ভালুকা ও ফুলপুরের তিনটি স্ট্যাক ইয়ার্ডে প্রয়োজনীয় ইট, পাথর ও সিঙ্গেলসসহ বিটুমিন মজুদ রাখা রয়েছে। গেল অর্থবছরেও এক কোটি টাকার ওপরে কাজ হয়েছে। কিন্তু ভারি বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা আর ওভারলোড যানবাহনের কারণে রাস্তা আবার খারাপ হয়ে যাচ্ছে বলে দাবি এই সওজ কর্মকর্তার। কচুয়া নিজস্ব সংবাদদাতা কচুয়া, চাঁদপুর থেকে জানান, কচুয়া পৌরসভার বেশিরভাগ সড়কই যান ও জন চলাচলের অনুপযোগী। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর, সড়ক জনপথ ও পৌর কর্তৃপক্ষের রশি টানাটানির কারণে রাস্তাগুলোর এ করুণ দশা। জানা গেছে প্রথম শ্রেণির কচুয়া পৌরসভার অধীনে কাঁচা রাস্তা ৭৪.৫ কিলোমিটার ও পাকা রাস্তা ৩৪.৫ কিলোমিটার। পৌরসভার ফায়ার সার্ভিসের পাস দিয়ে চলমান কচুয়া-ঢাকা সড়কটিতে পাশাপাশি কুমিল্লার আজমীর ও ঢাকার সুরমা বাস কাউন্টার রয়েছে। কাউন্টার দুটির সংলগ্ন সড়কটিতে বিশাল গর্ত হয়ে কাদামাটি ও পানি জমে যানবাহন ও মানুষ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তাছাড়া বিশ্বরোড থেকে গুলবাহার হিমাগার হয়ে কচুয়া বাজারে প্রবেশের রাস্তাটি প্রায় বছর খানেক যাবত পানিতে সয়লাব। কচুয়া বাজার থেকে হযরত শাহনেয়ামত শাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে আকানিয়া বিশ্বরোডের সঙ্গে মিলিত রাস্তাটিরও একই অবস্থা। অপরদিকে কচুয়া বাজারের দক্ষিণে ডাকবাংলো থেকে সুবিধপুর পর্যন্ত ও কড়ইয়ার পাশদিয়ে হাজীগঞ্জগামী রাস্তাটিও বিশাল গর্ত হয়ে দীর্ঘদিন চলাচলের অনুপযোগী। তাছাড়া কচুয়া ক্যামব্রিয়ান স্কুলের পাশ দিয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর এমপির বাড়ি গুলবাহার হয়ে মতলবের দিকে যাওয়ার রাস্তাটি বেশিরভাগ জায়গায় বড় বড় গর্ত হয়ে পানি জমে একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পৌরসভার চতুর্পাশের রাস্তাগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। এ সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ, ব্যস্তময় সড়ক দিয়ে প্রতিদিন বাস ট্রাক, সিএনজি, অটোযান ও রিক্সায় চলতে গিয়ে যাত্রীসাধারণ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। এ ব্যাপারে মেয়র নাজমুল আলম স্বপন বলেন, কচুয়া পৌরসভার বেশিরভাগ রাস্তা মেরামত হয়েছে বা টেন্ডার হয়েছে। কিন্তু সড়ক ও জনপথের রাস্তাগুলো সত্যিই চলাচলের অনুপযোগী। বারবার তাগাদা দেয়া সত্ত্বে¡ও সংশ্লিষ্ট দফতর বিষয়টি আমলে না নেয়ার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। নওগাঁ নিজস্ব সংবাদদাতা নওগাঁ থেকে জানান, নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার আবাদপুকুর থেকে চাঁপাপুর হয়ে বগুড়া চলাচলের একমাত্র সড়কটি খানাখন্দে ভরপুর। দেখে মনে হবে এ যেন রাস্তা নয় ছোট ছোট পুকুর। এতে প্রতিনিয়ত যাত্রীসাধারণদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে আর ঘটেই চলেছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। দেখা গেছে, রাণীনগর উপজেলার পূর্বাঞ্চলের প্রায় ৫০টি গ্রামের মানুষ আবাদপুকুর থেকে চাঁপাপুর হয়ে বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলাচলের একমাত্র ভরসা এই সড়কটি। প্রতিনিয়ত হাজার হাজার মানুষ এই সড়ক দিয়ে চলাচল করে। একমাত্র এই সড়কটির অনেক স্থানে মাঝে মাঝে পাকা, ইট, খোয়া ও বালু উঠে গিয়ে প্রায় ১ থেকে ২ ফুট পর্যন্ত গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে এই সব গর্তে পানি জমে তৈরি হয় ছোট ছোট পুকুরে। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী সাইদুর রহমান মিঞা জানান, এই সড়কের সংস্কারের জন্য লিখিত আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই সংস্কারের কাজ শুরু করা হবে। চিতলমারী-খাসেরহাট স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট থেকে জানান, বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার চিতলমারী-খাসেরহাট মূল সড়কটি খানাখন্দে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। চিতলমারী সদর থেকে খাসেরহাট ও কালিগঞ্জ বাজারে যেতে এলাকাবাসী চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় সড়কটি যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। চিতলমারী সদর থেকে খাসেরহাট বাজার পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার রাস্তার অধিকাংশ স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হতে না হতেই ডোবায় পরিণত হয় সড়কের বিভিন্ন স্থান। বর্তমানে এ সড়কটি চলাচলের অনুপোযুক্ত হওয়ায় বাধ্য হয়ে চিতলমারী থেকে খাসেরহাট ও কালিগঞ্জ বাজার যাওয়ার জন্য বাধ্য হয়ে বিকল্প হিসেবে খড়মখালি-গরিবপুরের রাস্তা ব্যবহার করছেন এলাকাবাসী। সড়কটি সংস্কার না হওয়ায় সন্তোষপুর ও চরবানিয়ারী ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের জন্য এ সড়কটি প্রধান যোগাযোগের মাধ্যম হওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও পড়েছেন বিপাকে। খাসেরহাট ও কালিগঞ্জ বাজার এলাকায় উৎপাদিত সবজি ও মাছ এ সড়ক দিয়ে চিতলমারী সদরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবারহ করতে চাষীরা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। চিতলমারী উপজেলা প্রকৌশলী অমিতাভ সানা জানান, চিতলমারী-খাসেরহাট সড়ক মেরমতের জন্য ইতোমধ্যে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে সংস্কার কাজ শুরু হবে।
×