ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাঙালীর গৌরব

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ১৫ অক্টোবর ২০১৬

বাঙালীর গৌরব

প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে বিশ্বের ক্যাথলিক খ্রীস্টানদের ধর্মীয় সর্বোচ্চ সভায় আসন পাওয়ার সম্মানটি দেশের জন্য বিরাট অর্জন অবশ্যই। এ গৌরব জাতি হিসেবে বাঙালীর। বাংলাদেশে ক্যাথলিক খ্রীস্টানদের প্রধান ধর্মগুরু ঢাকার আর্চবিশপ প্যাট্রিক ডি রোজারিওকে কার্ডিনাল মনোনীত করেছেন ক্যাথলিকদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস। তার এমন সম্মানজনক আসনে আসীন হতে পারার গৌরবে গৌরবান্বিত সবাই। যে সতেরোজন নতুন আর্চবিশপকে ক্যাথলিকদের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদ সর্বোচ্চ যাজক বা কার্ডিনাল হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে ভ্যাটিকান থেকে ডি রোজারিও তাদের একজন। সাধারণত পোপের খুবই ঘনিষ্ঠ মহলের সদস্য হন কার্ডিনাল। এর আগে বাংলাদেশ থেকে কেউ কার্ডিনাল নির্বাচিত হননি। এই পদ দেশের জন্য এক অনন্য সম্মান ও মর্যাদা বয়ে এনেছে। পরবর্তী পোপ নির্বাচনে তিনিও ভোট দেবেন। পোপও কার্ডিনালের মধ্য থেকে নির্বাচিত হবেন। নয়া নিয়োগ পাওয়া সতেরো আর্চবিশপের মধ্যে তেরোজনের বয়স আশি বছরের নিচে। অন্য চারজনের বয়স এর ওপরে। এদেরসহ বর্তমানে ভ্যাটিকানে কার্ডিনালের সংখ্যা প্রায় দু’শ’। আগামী ২১ নবেম্বর ভ্যাটিকানে এক ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নয়া কার্ডিনালদের দায়িত্ব দেয়া হবে। বিধি অনুযায়ী কোন একটি দেশ থেকে কার্ডিনাল নির্বাচিত হতে হলে সে দেশে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের এবং চার্চের সংখ্যা বিবেচনা করা হয়। বর্তমান পোপ ফ্রান্সিস শুধু ইউরোপ বা যুক্তরাষ্ট্র নয়, এশিয়া, আফ্রিকার দেশগুলোকেও যে গুরুত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ থেকে কার্ডিনাল নিয়োগ তার একটি উদাহরণ। প্রথম কার্ডিনাল হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় রোজারিও বলেছেন, এই মনোনয়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ মর্যাদাশীল হয়েছে। এর মাধ্যমে এমন একটি আহ্বান এসেছে যা কিছু শুভ, যা কিছু মঙ্গলকর, বাঙালীর যে সংস্কৃতিগত ঐহিত্য রয়েছে, যে ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্য রয়েছে, বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে যে খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে, সে বিষয়গুলো বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে হবে। কার্ডিনাল মনোনয়ন পাওয়ায় আর্চবিশপের ওপর তিনটি দায়িত্ব বর্তেছে। পোপের মৃত্যু হলে নয়া পোপ নির্বাচন করা, বিশ্বের বিভিন্ন স্থান ও অনেক দূরের দেশগুলোর কণ্ঠস্বর হয়ে পোপকে জানানো এবং পোপের শিক্ষা রাষ্ট্র ও সমাজের কাছে এবং অন্য ধর্মের মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব ও কর্তব্য এখন। অবশ্য পোপ নিজ থেকে পদত্যাগ না করলে বা মৃত্যু না হলে অন্য কারও পোপ হওয়ার সুযোগ নেই। ক্যাথলিকদের ইতিহাসে ছয় শ’ বছরের ধারবাহিকতা ভেঙ্গে প্রথম পদত্যাগ করেছিলেন বর্তমান পোপ ফ্রান্সিসের পূর্বসূরি ষোড়শ বেনেডিক্ট। এই মর্যাদাপ্রাপ্তি আর্চবিশপ রোজারিওর ব্যক্তিগত অর্জন নয়। এটি হচ্ছে বাংলাদেশের প্রতি পোপের ভালবাসা, এটি এ দেশের চার্চের জন্য স্বীকৃতি যেমন, তেমনি এখানকার মানুষের জন্যও স্বীকৃতি প্রদান। ফলে এ স্বীকৃতি পুরো বাংলাদেশের। তেহাত্তর বছর বয়সী রোজারিও জন্মেছেন ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে বরিশালের পাদ্রি শিবপুরে। ১৯৭২ সালে তিনি ফাদার বা যাজক হন। ১৯৯০ সালে রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের বিশপ দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। ১৯৯৫ সালে চট্টগ্রাম ধর্মপ্রদেশের বিশপের দায়িত্ব নেন। ঢাকার আর্চবিশপ হন ২০১০ সালে। বাংলাদেশে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের সাতটি ধর্মপ্রদেশ রয়েছে। বর্তমানে দেশের খ্রীস্টানদের প্রধান ধর্মগুরু তিনি। তার এই নিয়োগ দেশের জন্য মর্যাদা, আনন্দ ও গৌরবের বিষয়। অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা আমাদের পক্ষ থেকে নয়া কার্ডিনালকে। তিনি এ দেশের মানুষের আধ্যাত্মিক উন্নয়ন এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন বলে প্রত্যাশা। আমরা তার সুস্বাস্থ্য ও সুন্দর দীর্ঘজীবন কামনা করি।
×