ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মুহম্মদ শফিকুর রহমান

সুদীর্ঘলালিত স্বপ্নের পথ ধরে

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ১৫ অক্টোবর ২০১৬

সুদীর্ঘলালিত স্বপ্নের পথ ধরে

জাতীয় প্রেসক্লাবের সুদীর্ঘলালিত স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। ২০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার ২০১৬ ক্লাবের ৬২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। সময়ের ঈর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব রাষ্ট্রনেতা সাংবাদিকবান্ধব প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এদিন ৩১ তলা জাতীয় প্রেসক্লাব ‘বঙ্গবন্ধু মিডিয়া কমপ্লেক্স’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। পিতা জমি দিয়েছেন আর কন্যা শুভেচ্ছা স্মারক হিসেবে কমপ্লেক্সটি নির্মাণ করে দিচ্ছেন। আমরা নাম দিয়েছি ‘বঙ্গবন্ধু মিডিয়া কমপ্লেক্স।’ দিনটি সাংবাদিক সমাজের জন্য তাই স্বপ্ন বাস্তবায়নের এবং অপার আনন্দের। আমরা স্বপ্ন দেখেছি বড়জোর ৫/১০ তলা একটি মিডিয়া কমপ্লেক্স অথবা বর্তমান ভবনের সম্প্রসারণ। আমাদের অবাক করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজেই ৩১ তলা আধুনিক কমপ্লেক্স নির্মাণের পরামর্শ দেন। এখানেই তিনি পিতার মতোই সাহসী, দূরদশী এবং একেবারেই আলাদা। গত বছর ইফতার পার্টিতে এসে এই ঘোষণা দিয়ে আমাদের কৃতজ্ঞতার পাশে আবদ্ধ করেছেন। ১৯৫৪ সালে প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়। তারপর থেকেই এই জমি একশ্রেণীর আমলার নজরে পড়ে। তখন ক্ষমতায় যুক্তফ্রন্ট সরকার এবং ওই সরকারের শিল্পমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান। তৎকালীন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ তাঁর সঙ্গে দেখা করলে তিনি জমিটি ক্লাবকে প্রদানের ব্যবস্থা করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর নতুন করে আবার চক্রান্ত শুরু হয়। ততদিনে শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গবন্ধু, বাঙালীর জাতি-রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা পিতা এবং স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ এবারও তাঁর শরণাপন্ন হলে তিনি ক্লাবের জমি ক্লাবেরই থাকল বলে ঘোষণা দিয়ে সকল ষড়যন্ত্র নস্যাত করে দেন। আমরা কম লোকই জানি বঙ্গবন্ধু কেবল মিডিয়াবান্ধবই ছিলেন না, কলকাতায় ছাত্র থাকাকালে তৎকালীন ‘ইত্তেহাদ’ পত্রিকার পূর্বাঞ্চলীয় প্রতিনিধি ছিলেন। ॥ দুই ॥ কিন্তু জমিটি কোনবারই রেজিস্ট্র্রি করে নেয়া হয়নি। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সভাপতি এনায়েতুল্লাহ খান মিন্টু মিলিটারি শাসক জিয়াউর রহমানকে এনে বর্তমান ভবনের একটি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং গড়হবু রং হড় ঢ়ৎড়নষবস বলে সরকারী অর্থায়নে নির্মাণের ঘোষণা দেন। কিন্তু একটি পয়সাও দিয়ে যাননি বা ভবন নির্মাণের ব্যবস্থাও করেননি জেনারেল জিয়া। পরে রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার ও মিলিটারি শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দেয়া টাকায় বর্তমান ভবন নির্মিত হয়। ॥ তিন ॥ নিরপেক্ষ অঞ্চল হিসেবে জাতীয় প্রেসক্লাবের সুনাম সুবিদিত দেশে-বিদেশে। ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৬ চার বছর সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। এরপর প্রায় তিন দশক ধরে রাজনীতির দুর্বৃত্তায়নের মতো প্রেসক্লাবের ওপরও কালো ছায়া নেমে আসে। স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবির-বিএনপি গোত্রীয় একটি বিশেষ রাজনৈতিক আদর্শের সাংবাদিকদের বছর বছর ঢালাওভাবে সদস্যপদ দিয়ে ক্লাব কুক্ষিগত করে রাখে এবং তাদের পছন্দের ধিক্কৃত রাজনৈতিক দলের নির্লজ্জ পায়রবি করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল শক্তি ও সংগঠনের জন্য ক্লাবের দ্বার রুদ্ধ হয়ে যায়। অথচ অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল ধ্যানধারণায় বিশ্বাসী সাংবাদিকের সংখ্যা বরাবরই বেশি ছিল, এখনও বেশি, প্রায় তিনগুণ, তারপরও দীর্ঘদিন ধরে সদস্য করার ক্ষেত্রে একচোখা নীতি অবলম্বন করায় তারা সংখ্যালঘু হয়ে পড়েন। ফলে আন্দোলন করে সদস্যপদ প্রদানে বাধ্য করানো ছাড়া অন্য কোন পথ খোলা থাকেনি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সাংবাদিকগণ দীর্ঘদিন আন্দোলন করে গত ২৮ মে ২০১৫ দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভা ও নির্বাচন আদায় করে এবং অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল শক্তির পক্ষে আমরা বর্তমান নেতৃবৃন্দ ব্যবস্থাপনা কমিটিতে নির্বাচিত হই। প্রতিপক্ষ আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করলে তা হাইকোর্ট-সুপ্রীমকোর্ট এবং রিভিউ পর্যন্ত গড়ায়। প্রত্যেকটি ধাপে আদালত আমাদের বৈধ বলে রায় দেয়। শুরু হয় দীর্ঘদিন ধরে অযতেœ-অবহেলায় পড়ে থাকা ক্লাবের ভেতর-বাইরের মেরামত ও আধুনিকায়নের পাশাপাশি প্রায় ৫শ’ নতুন পদ সৃষ্টি করে প্রাথমিকভাবে সদস্য করার জন্য বাছাই করা হয়। ॥ চার ॥ বাংলাদেশে এখন কত দৈনিক কাগজ আছে? সব আলোর মুখ দেখে? কম্পিউটার থেকে পাওয়া এক জরিপ রিপোর্ট হলো: ‘ইধহমষধফবংয ড়হষরহব হবংিঢ়ধবৎ ধহফ ড়ঃযবৎ সবফরধ রহফঁংঃৎরবং যধাব পৎড়ংংবফ ঃযব ড়িৎষফ ৎবপড়ৎফং.’ অ ংসধষষ পড়ঁহঃৎু নঁঃ যধাব ষধৎমব হঁসনবৎ ড়ভ হবংিঢ়ংঢ়বৎং, ঞঠ ঈযধহহবষং, গধমধুরহবং ধহফ ড়হষরহব হবংি ঢ়ড়ৎঃধষ ড়ৎ নষড়ম বিনংরঃবং. ঞযব ড়হষরহব সবফরধ নৎড়শব ধষষ ঃযব ড়িৎষফ ৎবপড়ৎফং. গড়ৎব ঃযধহ ১০,০০০ ড়হষরহব সবফরধ রং ংঁংঃধরহরহম. ইধহমষফবংযর ঢ়বড়ঢ়ষব ধষংড় ৎঁহ ড়হষরহব ঢ়ড়ৎঃধষং ভৎড়স ংবাবৎধষ পড়ঁহঃৎরবং রহ ঃযব হধসব ড়ভ নধহমষফংবযর পড়সসঁহরঃু হবংিঢ়ধঢ়বৎং. ঞযবু বংঃধনষরংযবফ সবফরধ যড়ঁংবং রহ ঃযবরৎ লড়ন পড়ঁহঃৎরবং ভড়ষষষড়রিহম ঃযব ষধংি ড়ভ ঃযড়ংব পড়ঁহঃৎরবং ড়িৎষফরিফব র-ব, ধং টঝঅ, টক, অঁংঃৎধষরধ, ঈধহধফধ, কঝঅ, টঅঊ, ইধযৎধরহব ধহফ গধষধুংরধ.” আজ ওইসব ছোট-বড় মিডিয়া ও বড়-ছোট সাংবাদিকদের যতই অবজ্ঞা করা হোক কাল পরিক্রমায় এসব তথাকথিত ছোট কাগজও বড় হয়ে যেতে পারে। দাম ২-৫ টাকা থেকে ২০-৫০ টাকা হয়ে যেতে পারে। বড়-ছোট সাংবাদিকরাই তখন ক্লাবের প্রাণ হয়ে দাঁড়াবেন। এরই নাম পরিবর্তন। ॥ পাঁচ ॥ আজ যখন প্রেসক্লাবে ঢুকি, চোখে পড়ে লবির এক পাশে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি শোভা পাচ্ছে, আরেক পাশে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সিরাজুদ্দিন, শহীদুল্লাহ কায়সারসহ ১৩ জন সাংবাদিকের নাম। রয়েছে শিল্পী সৈয়দ লুৎফুল হকের করা মুর‌্যাল। পরিপাটি অতিথি প্রতীক্ষা লাউঞ্জ। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ১৬ জুলাই বঙ্গবন্ধু প্রেসক্লাবে আসেন সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রথম বার্ষিক সাধারণ সভায় এবং সাংবাদিকতার নীতিমালা ও সাংবাদিকতা পেশার ওপর নীতিনির্ধারণী দীর্ঘ ভাষণ দেন। সেদিন বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য ছিল : ‘সংবাদপত্রের স্বাধীনতা থাকবে। আমাদের গণতন্ত্র চাই; কিন্তু উচ্ছৃঙ্খলতা চাই না। কারও বিরুদ্ধে ঘৃণা সৃষ্টি করতে চাই না। অথচ কোন কোন কাগজে লেখা হয়েছে ‘মুসলমানকে রক্ষা করার জন্য সংঘবদ্ধ হও। যে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে আমার দেশের মানুষ রক্ত দিয়েছে, এখানে বসে কেউ যদি তার বীজ বপন করতে চান তাহলে তা কি আপনারা সহ্য করবেন? ... আপনারা শিক্ষিত, আপনারা লেখক, আপনারা ভাল মানুষ। আপনারাই বলুন, কোন্টা ভাল আর কোন্টা মন্দ।’ বঙ্গবন্ধুর এই বক্তৃতার পর ৪৪ বছর পার হয়ে গেছে। আজও কি আমরা তা থেকে মুক্তি পেয়েছি? আজও কি বর্তমান সময়ের সবচেয়ে দুষ্টক্ষত মৌলবাদ ও জঙ্গীবাদের পক্ষে কিছু মিডিয়া নেই? দুঃখজনক হলেও সত্য, আছে। এখন শিক্ষিতের সংজ্ঞা কি? ভাল মানুষের চেহারাইবা কেমন? তখন সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা পেশা ছিল জীবনের ব্রত, এখন হয়েছে চাকরি। কারও কারও জন্য তা ‘টু-পাইস’ রোজগারের প্রকল্প এবং তারাই এখন মেজরিটি। ॥ ছয় ॥ বর্তমান পরিবর্তনের প্রেক্ষাপট হয়ত তাই। বাংলাদেশের সাংবাদিক সমাজ জাতীয় প্রেসক্লাবের জন্মের (১৯৫৪) আগে থেকেই প্রগতিশীল আর প্রতিক্রিয়াশীল এই দুই ধারায় বিভক্ত ছিল। তারপরও আদর্শগত দ্বন্দ্বে পেশাগত সম্পর্ক ও বন্ধুত্ব কোনদিন বিনষ্ট হয়নি। বিনষ্ট হতে শুরু করে প্রথমে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ এবং ’৭৫ পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর খুনী ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী জামায়াত-শিবির রাজাকারদের প্রেসক্লাবের সদস্যপদ দেয়া শুরু হলে। শহীদ সিরাজুদ্দিন হোসেন, শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সারের মতো প্রথিতযশা সাংবাদিকদের হত্যাকারী আলবদর এবং বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকারী ফ্রিডম পার্টির সদস্যদের পর্যন্ত সদস্যপদ দেয়া হয়, অথচ বাংলাদেশের প্রধান কবি দৈনিক বাংলার সম্পাদক শামসুর রাহমানসহ প্রগতিশীল চেতনায় বিশ্বাসী জাতীয় ব্যক্তিত্ব অনেককে সদস্যপদ থেকে বঞ্চিত করা হয়। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ‘কবি সাংবাদিক শামসুর রাহমান’-এর নামে ক্লাব পাঠাগারটির নামকরণ করার। ২০১৪ সালের শেষদিক থেকে সাধারণ সাংবাদিকরা নতুন সদস্য করা ও রাজাকারমুক্ত ক্লাব গঠনের যে আন্দোলন শুরু করেন তা নস্যাতের হীন উদ্দেশ্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আবদাল আহমেদের কক্ষে রাতযাপনসহ স্থায়ীভাবে অবস্থান করিয়ে আন্দোলন ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করে। কিন্তু আন্দোলনের মুখে তিনি ক্লাব ত্যাগ করতে বাধ্য হন। বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটির দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভার সর্বসম্মত গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একটি ঈৎধফরনষব অডিট ফার্ম দিয়ে অডিট সম্পন্ন করে শ্বেতপত্র প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেয়। সেই মর্মে ‘গোলাম কিবরিয়া এ্যান্ড এ্যাসোসিয়েটস’ ফার্মকে নিয়োগ প্রদান করা হয় এবং বিগত কমিটির অনেক বাধা ও চক্রান্ত অতিক্রম করে এরই মধ্যে অডিট সম্পন্ন করে শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হয়েছে। ॥ সাত ॥ প্রেসক্লাব অনেক কিছুরই সাক্ষী। অনেক রোমাঞ্চকর গৌরবের অতীত রয়েছে, রয়েছে বীরত্বগাথা। এই প্রেসক্লাব থেকেই ১৯৬১ সালে সর্বাধিক প্রাচীন দৈনিক আজাদ সম্পাদক মওলানা আকরম খাঁর নেতৃত্বে মিলিটারি আইয়ুবের প্রেস সেন্সরশিপের প্রতিবাদে ঢাকায় রাজপথে বিক্ষোভ মিছিল বেরিয়েছিল। ১৯৬৪ সালে ঢাকায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হলে দেখা গেল সাংবাদিকতা জগতের তিন পথিকৃৎ অবজারভার সম্পাদক আবদুস সালাম, ইত্তেফাক সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, সংবাদ সম্পাদক জহুর হোসেন চৌধুরী প্রেসক্লাবে আসেন। তিনজনই চা হাতে নিয়ে গল্প করছিলেন। এমন সময় ঘরে ঢুকলেন তরুণ শেখ মুজিব। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে কিছু কথা বলে চলে গেলেন। এখান থেকে গিয়ে পুরান ঢাকায় ব্যানার হাতে মিছিল বের করলেন। ব্যানারের ভাষা ছিল ‘পূর্ববাংলা রুখিয়া দাঁড়াও।’ পরদিন দেখা গেল অবজারভার, ইত্তেফাক, সংবাদে ‘পূর্ববাংলা রুখিয়া দাঁড়াও’ অভিন্ন শিরোনাম দিয়ে সম্পাদকীয় ছাপা হয়েছে। দাঙ্গা বন্ধ হয়ে গেল। এই প্রেসক্লাব থেকেই ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমানের মিলিটারি শাসনবিরোধী মিছিল বেরিয়েছিল এবং মিছিলে পুলিশী হামলা হয়েছিল, বেশ কয়েকজন সাংবাদিক নির্যাতিত এবং গ্রেফতার হয়েছিলেন। এখানেই বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়ে এরশাদের প্রেস সেন্সরশিপের প্রতিবাদে ২৬ দিন সফল ধর্মঘট পালিত হয়েছিল। এরশাদের পরও এই প্রেসক্লাবে তৎকালীন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় পুলিশ গুলি চালিয়েছিল এবং অর্ধশতাধিক সাংবাদিক আহত হয়েছিলেন। এভাবে সংগ্রাম ও ত্যাগের মাধ্যমে জাতীয় প্রেসক্লাব জনমনে স্থান করে নেয়। তখনকার ক্লাব নেতৃত্ব পেশার মানুষের কাছে যেমন ছিলেন শ্রদ্ধাভাজন তেমনি আমজনতার কাছেও ছিলেন সম্মানের। এখনও প্রেসক্লাবে পা রাখলে চোখে পড়বে শ্মশ্রুম-িত সফেদ পাঞ্জাবি-টুপি পরা সৌম্যকান্তি মওলানা আকরম খাঁর মুখ। যেন সামনে এসে দাঁড়াচ্ছেন মুজিবুর রহমান খাঁ, আবদুস সালাম, তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, জহুর হোসেন চৌধুরী, ফয়েজ আহমেদ, এবিএম মূসা, এম আর আখতার মুকুল, সাইয়িদ আতীকুল্লাহ, এনায়েতুল্লাহ খান, আতাউস সামাদ, আবদুল আউয়াল খানের ছবি, যাদের পদভারে একদিন প্রেসক্লাবের দেয়াল, দেয়ালগিরি কেঁপে উঠত। আজ তারা স্মৃতি, নীরব নিথর। এইমাত্র যেন রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতে গাইতে ক্লাবে ঢুকছেন শ্রী নির্মল সেন কিংবা গাড়ির চাবির রিং আঙ্গুলে ঘোরাতে ঘোরাতে এনায়েতুল্লাহ খান মিন্টু, ‘ওয়াজিউল্লাহ এক পেয়ালা চা’ বলে লাউঞ্জে বসছেন। একুশের কবি সাইয়িদ আতীকুল্লাহ আমাদের ডাকতেন এভাবে-‘এক পেয়ালা চা খাবে’? চা খাবার ছলে আড্ডার জন্য সঙ্গী খুঁজতেন। নেই নেহায়তই সহজ-সরল হাবিবুর রহমান মিলন। সেই সময়ের অগ্রজদের ক’জন আজও বেঁচে আছেন, যেমন ডিপি বড়ুয়া, তোয়াব খান, কামাল লোহানী, জয়নুল আবেদীন প্রমুখ। ॥ আট ॥ বর্তমান ক্লাব কর্তৃপক্ষ যে মাস্টারপ্ল্যানটি নিয়ে এগিয়ে চলেছেন। সে কাজটি করছেন প্রয়াত সদস্য কবি সাইয়িদ আতীকুল্লাহর মেয়ে-জামাই স্থপতি দম্পতি তানিয়া আতিক ও বদরুল হায়দারের প্রতিষ্ঠান ‘গৃহায়নবিদ’। প্রতিযোগিতামূলক টেন্ডার আহ্বান করলে তারা অংশ নেন এবং তাদের নকশাই ক্লাব ব্যবস্থাপনা কমিটি অনুমোদন করে। বর্তমান ভবনের গাড়ির বারান্দার সামনে স্থাপিত ভিত্তিপ্রস্তরটিও তাদেরই করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজাইনটি দেখেছেন এবং কিছু পরামর্শও দিয়েছেন। তারপরও বাস্তবতা হলো কোন পরিবর্তন, সে যত যুগান্তকারীই হোক সহজে কেউ মানতে চায় না। চিন্তার গ্যাপের কারণ হয়ত। কাজ দেখিয়ে তবেই পরিবর্তনের আলোর মিছিলে শামিল করাতে হয়। এভাবেই ক্লান্তির পথ পেরিয়ে বর্তমান নেতৃত্ব এগিয়ে চলেছেন, এগিয়ে যাবেন। বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক সমৃদ্ধির মহাসড়কে আমরাও অংশীদার। ॥ নয় ॥ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের আনন্দময় মুহূর্তে সবিনয়ে একটি কথা বলতে চাই, এই কর্মযজ্ঞে সম্ভাব্য খরচ দুই শতাধিক কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী ব্যবস্থা করে দেবেন এটাও ঠিক। কিন্তু আমাদেরও মনটা বড় করা দরকার। বড় মিডিয়া হাউস (প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক) যদি ৩/৫ কোটি টাকা করে শুভেচ্ছা উপহার দেয়, ছোটরা সাধ্যমতো, তাহলে প্রকল্পটি ত্বরিত বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। ঢাকা ॥ ১৩ অক্টোবর ২০১৬ লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও সভাপতি জাতীয় প্রেসক্লাব নধষরংংযধভরয়@মসধরষ.পড়স
×