ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পরিবারে সচ্ছলতা আনা হলো না কাওছারের, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফিরল লাশ

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১৫ অক্টোবর ২০১৬

পরিবারে সচ্ছলতা আনা হলো না কাওছারের, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফিরল লাশ

রফিকুল হাসান চৌধুরী তুহিন, হবিগঞ্জ থেকে ॥ আর্থিক সচ্ছলতার মাধ্যমে বাবা-মা আর ভাই-বোনদের মুখে হাসি ফোটানো এবং ভাগ্য পরিবর্তনের আকাক্সক্ষা নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়েছিলেন সদা হাস্যোজ্জ্বল যুবক কাওছার এলাহী। কিন্তু মানবপাচারকারী চক্রের কৌশলের কাছে হার মানে তার সব স্বপ্ন। তার আশা পূর্ণ হওয়া দুরের কথা, বরং অর্থলোভী দালাল চক্রের ইন্ধনে নির্মম নির্যাতনে লাশ হয়েই তাকে বাড়ি ফিরতে হলো। সম্প্রতি বাহুবলের হাসপাতাল সড়ক এলাকার মরহুম মৌলানা আশিক এলাহীর ছেলে কাওছার লন্ডন যাবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এরপর তিনি মধ্যপ্রাচ্যের কোন দেশে যেতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। এক সময় পরিবারের সম্মতিতে স্থানীয় দালাল জালালের মাধ্যমে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা যেতে রাজি হন। কাওছারসহ ছোঁয়াপুর গ্রামের আব্দুর রউফ মেম্বারের ছেলে আশিকুর রহমান সিলেটের হাজী শরিফ উদ্দিনের মালিকানাধীন ট্রাভেলস ‘তাজ ট্রাভেলস এ্যান্ড ট্যুর’-এর মাধ্যমে জনপ্রতি ৬ লাখ টাকা দিয়ে আফ্রিকা যেতে রাজি হন। গত ৫ অক্টোবর কাওছার ও আশিকসহ ১২ জন আকাশপথে প্রথমে মুম্বাই এবং পরবর্তীতে ইথিওপিয়া ও মোজাম্বিকে যান তারা। সঙ্গে ছিল দালাল চক্রের নেপথ্য পাচারকারী দলের হোতারাও। এই পাচারকারীরাই মোজাম্বিক থেকে তাদের সড়কপথে ৮ অক্টোবর দক্ষিণ আফ্রিকায় নিয়ে যায়। এদিকে ৯ অক্টোবর দালাল জালালের মাধ্যমে আশিক এলাহীর বাড়িতে খবর আসে কাওছার এলাহী মারা গেছে। কিন্তু পরিবারের সদস্যরা মানতে নারাজ ছিল কাওছার মারা গেছে। তাদের ধারণা, কাওছার মারা গেলেও তা স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, নিশ্চয় অন্য কিছু হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘সাবেরিক সিশতি সোসাইটি’র মাধ্যমে বিমানযোগে বাক্সবন্দী লাশ হয়ে বাড়ি ফিরল টগবগে ও সদা হাস্যোজ্জ্বল যুবক হিসেবে এলাকায় পরিচিত কাওছার এলাহী। এ সময় নিহত কাওছারের পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া, পুরো এলাকার মানুষের চোখেও ছিল পানি। এদিকে শুক্রবার দুপুরে নিহত কাওছারের মরদেহ দাফনের জন্য বাক্স খুলে দেখা যায় মুখম-ল ও শরীরে বেশ কয়েকটি আঘাতের চিহ্ন। আর তখন উপস্থিত সবাই বুঝতে পারে কাওছারকে নির্মমভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। তাদের ধারণা, পাচারকারী চক্রের সঙ্গে কোন বিষয় নিয়ে কাওছারের বাকবিতন্ডা কিংবা দালালের মাধ্যমে আরও মোটা অঙ্কের টাকা চেয়ে তা না পাওয়ায় তার ওপর নেমে আসে অত্যাচারের কালো থাবা। এদিকে এমন নির্মম অত্যাচারে সন্তানের মৃত্যুতে কাওছারের মা মাহমুদা আখঞ্জি বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন। জ্ঞান ফিরলেই তিনি বিলাপ করতে করতে বলছেন ‘আমার পুত্রকে যারা হত্যা করেছে আমি আল্লাহ আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তাদের বিচার চাই। দালাল চক্রের ফাঁসি চাই। এদিকে শুক্রবার বাদ জুমা বাহুবলের কাসিমুল উলুম মাদ্রাসা মাঠে কাওছারের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ছাড়াও শত শত মুসল্লি অংশ নেন। এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে কাওছারের মৃত্যুর জন্য দায়ী দালাল ও পাচারকারী চক্রের কঠোর শাস্তি দাবি করেন তারা। পরবর্তীতে কাওছারকে দাফন করা হয়। তার আগে কাওছারের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে পুলিশ। সংশ্লিষ্ট থানার ওসি মোল্লা মনির জানান, ময়নাতদন্তের সময় কাওছারের মুখম-ল ও শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন পাওয়ায় এটি একটি হত্যাকা- বলেই মনে হয়েছে। এই হত্যাকা-ের জন্য মামলাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে পুলিশ।
×