ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

কামরুজ্জামান স্বাধীনের স্থাপনা শিল্পে সাঁওতাল জীবনের বিপন্নতা

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১৫ অক্টোবর ২০১৬

কামরুজ্জামান স্বাধীনের স্থাপনা শিল্পে সাঁওতাল জীবনের বিপন্নতা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাঁওতালদের যাপিত জীবনের বয়ান উঠে এসেছে বিশাল স্থাপনাশিল্পটিতে। সেই সঙ্গে বর্ণিত হয়েছে মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির জটিল সম্পর্কের রসায়ন। গ্যালারিজুড়ে সৃষ্টি করা হয়েছে বিস্তীর্ণ প্রান্তর। উঠান আকৃতির মাঠের মাঝে দৃশ্যমান ধানের ঢিবি। চারপাশে ছড়িয়ে আছে শত শত মাটির তৈরি ইঁদুর। ঝাঁকে ঝাঁকে সেগুলো দৌড়ে যাচ্ছে ঢিবির উপর দিয়ে, মাটির ঘরের দরজা দিয়ে। মাটির দেয়ালে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে আদিবাসী সম্প্রদায়টির আচার-অনুষ্ঠান। আরেক স্থানে শোভা পাচ্ছে সাঁওতালদের শিকারে ব্যবহৃত তীর-ধনুক। এভাবেই ইঁদুর আখ্যান, তীর-কাহিনী ও চিত্রমালার সম্মিলনে নির্মিত হয়েছে শিল্পকর্র্মটি। রুটেড ইন সয়েল বা আপন মৃত্তিকায় মূলীভূত শীর্ষক শিল্পকর্মটি সৃজন করেছেন শিল্পী কামরুজ্জামান স্বাধীন। আদিবাসী জীবনের বিপন্নতার বার্তাসংবলিত এ শিল্পকর্ম প্রদর্শনীটি চলছে ধানম-ির আলিয়ঁস ফ্রঁসেসের লা গ্যালারিতে। শুক্রবার বিকেলে সূচনা হয় প্রদর্শনীর। প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। সম্মানিত অতিথি ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত ফরাসী রাষ্ট্রদূত সোফি অবের। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন শিল্পী ও সমালোচক মোস্তফা জামান এবং জায়ান্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক হাসান। সভাপতিত্ব করেন আলিয়ঁস ফ্রঁসেস দো ঢাকার পরিচালক ব্রুনো প্লাস। আসাদুজ্জামান নূর বলেন, এ শিল্প সৃষ্টিতে শিল্পীর মধ্যে এক ধরনের যন্ত্রণা কাজ করেছে। মানুষ তার নিজের স্বার্থে ধ্বংস করছে প্রকৃতিকে। নানা রকমের রাসায়নিকের ব্যবহারে নষ্ট করছে ভূমির সৃষ্টিশীল রূপ। এ অবস্থায় রেহাই পাচ্ছে না প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষাকারী ইঁদুরের মতো প্রাণীও। ইঁদুরের জগত তৈরির মাধ্যমে সে বার্তাটিই দিয়েছেন কামরুজ্জামান স্বাধীন। তাই মানবিক পৃথিবী গড়তে হলে কমাতে হবে রাসায়নিক দ্রব্যের ওপর নির্ভরশীলতা। প্রকৃতিকে ধ্বংস করে আমরা নিজেদের ধ্বংস করছি। চারপাশে জঞ্জাল তৈরি করে মানুষের বিরোধী শক্তিকে আরও শক্তিশালী করে ফেলছি। তিনি বলেন, স্থাপনাশিল্প নিয়ে আমার দুঃখবোধ রয়েছে। শিল্পী এত কষ্ট করে কাজ করে কিন্তু সাত বা দশ দিন পর এটির আলোকচিত্র ছাড়া আর কিছুই থাকবে না। স্থায়ীত্বের কথা না ভেবে শিল্পী যে এমন কাজ করেছেন, সেজন্য তাকে ধন্যবাদ। অনুভূতি প্রকাশ করে কামরুজ্জামান স্বাধীন বলেন, মানুষের আত্মকেন্দ্রিকতা পৃথিবীকে ঠেলে দিয়েছে ধ্বংসাত্মক ভবিষ্যতের দিকে। আমরা লোভে ডুবে আছি। আর সে এমনই স্বার্থপর লোভ, যা সব খেয়ে ফেলতে চায়। বন, পশু-পাখি, সাগর, বাতাস এমনকি নিজেদেরও। ‘অর্গানিক’ এখনকার পৃথিবীতে একটি চটকদার নাম। আমরা প্রকৃতিকে নিজেদের ইচ্ছামতো ব্যবহার করে তাকে করে তুলেছি দূষিত ও বিষাক্ত। নিরাপদ বাতাস, নিরাপদ পানি এবং নিরাপদ খাবার এখন দুর্লভ হয়ে উঠেছে। মানুষ হয়ে উঠেছে প্রকৃতির সবচেয়ে বড় শত্রু। এ বছরের প্রথম দিকে শিল্পী ঠাকুরগাঁওয়ের মোলানিপাড়ায় এক সাঁওতাল গ্রামে শুরু করেন এ শিল্প সৃজনের প্রকল্প। এছাড়া শৈশব থেকেই এ সাঁওতাল কমিউনিটির সঙ্গে রয়েছে শিল্পীর সখ্য। তাদের জীবনধারার পরিবর্তনগুলো অবলোকন করে শিল্পী দেখেছেন কিভাবে ধীরে ধীরে শিকার ছেড়ে আধুনিক কৃষিকাজ তাদের প্রধান জীবিকা হয়ে উঠল। তাদের জীবনধারার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়েছে তাদের চারপাশ, হাইব্রিড ফসল আর কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহার তাড়িয়ে দিয়েছে শিয়াল, পেঁচা, ঈগলসহ নানা প্রাণী; যেগুলো এ অঞ্চলের প্রাণের ভারসাম্য রক্ষার জন্য ছিল গুরুত্বপূর্ণ। যে ইঁদুর সাঁওতালরা আগে শিকার করত, আজ সে ইঁদুর দখল করে নিয়েছে তাদের মাটির ঘরবাড়ি। প্রকল্পের অংশ হিসেবে শিল্পী স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে নিয়ে কয়েক হাজার মাটির তৈরি ইঁদুর বানিয়েছেন। এ প্রদর্শনীতে একটি সিরিজের কাজ রয়েছে, যে সিরিজের মূল ভাবনা হলো মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির জটিল সম্পর্ক। প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে কয়েক হাজার পোড়ামাটির ইঁদুরে গড়া একটি ইনস্টলেশন, শত শত তীর নিয়ে একটি ভিডিও ইনস্টলেশন এবং কিছু পেইন্টিং, যা তৈরি হয়েছে সাঁওতালদের ঘর লেপার টেকনিক ব্যবহার করে। প্রদর্শনী চলবে ২ নবেম্বর পর্যন্ত। সোম থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং শুক্র ও শনিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা এবং বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। রবিবার সাপ্তাহিক বন্ধ। নাট্যতরুণ তনুশ্রী পদক পেলেন তপন হাফিজ ॥ প্রদান করা হলো ২০১৬ সালের নাট্যতরুণ তনুশ্রী পদক। নাট্যধারা প্রবর্তিত এবারের তনুশ্রী পদক পেয়েছেন নাট্যতীর্থের প্রধান সম্পাদক তরুণ নাট্যকর্মী তপন হাফিজ। শুক্রবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতেই নাট্যধারার অকাল প্রয়াত নাট্যকর্মী তনুশ্রী গায়েনের জীবন ও কর্মের ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুভূতি প্রকাশ করে তপন হাফিজ বলেন, একজন নাট্যকর্মীর কাছে এ পদক অনেক বেশি সম্মানের। প্রাপ্তির আগে বুঝতে পারিনি এ পদক কতটা সম্মানের। এখন বুঝতে পারছি। এ পদক আমাকে কাজের প্রতি আরও বেশি দায়বদ্ধ করে তুলেছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার। সভাপতিত্ব করেন নাট্যধারার প্রধান সম্পাদক মাসুদ পারভেজ মিজু। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক নাট্যজন লিয়াকত আলী লাকী ও ফ্যাশন হাউস অঞ্জনসের শীর্ষ নির্বাহী শাহীন আহম্মেদ। আলোচনা শেষে মঞ্চস্থ হয় নাট্যধারার নাটক অতীশ দীপঙ্কর সপর্যা। প্রযোজনাটি রচনার পাশাপাশি নির্দেশনা দিয়েছেন অলোক বসু। শিশু দিবসে খেলাঘরের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ॥ বিশ্ব শিশু দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। শুক্রবার সকালে সোনামণিদের নিয়ে চমৎকার এ আয়োজনটি বসেছিল শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা প্লাজায়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বরেণ্য শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী। আসরের সভাপতিম-লীর চেয়ারম্যান অধ্যাপিকা পান্না কায়সারের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক আবুল ফারাহ্্ পলাশ। ছুটির দিনে সকালে প্রায় চার শ’ খুদে শিল্পীর সম্মিলন ঘটে এ আয়োজনে, যাতে পদ্মা বিভাগে প্লে-গ্রুপ থেকে প্রথম শ্রেণীর শিক্ষার্থী, মেঘনা বিভাগে দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী, যমুনা বিভাগে পঞ্চম থেকে সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের ছবি আঁকার বিষয়বস্তু ছিল উন্মুক্ত। তাদের সৃজনে উঠে আসে গ্রামবাংলা আর যাপিত সময়ের নানা দৃশ্য। আর ব্রহ্মপুত্র বিভাগে অষ্টম থেকে দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের বিষয় ছিল মুক্তিযুদ্ধ, যাতে নিজেদের মতো করে উপলব্ধি করে নিল বাঙালীর সবচেয়ে বড় অর্জনকে। অগ্রণী স্কুল এ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী উম্মে রহমান শিফার মনে গভীরভাবে দাগ এঁকেছে শিশু নির্যাতন। ‘শিশুদের অধিকার নিশ্চিত কর’ শিরোনামে এঁকেছে প্রতিবাদের ছবি। হাবশা মাইশা বারী ও ইশরাত জাইমা বারী নামের দুই শিশুশিল্পী এঁকেছে গ্রামবাংলার ছবি। তিন মেয়ে মম তাহরিমা, তম তাহমিনা, তন্মা তাসনিয়াকে নিয়ে হাজির হয়েছিলেন তাসলিমা চৌধুরী। তিনি বলেন, মেয়েদের কখনই ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হতে চাপ দেন না তিনি। নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়ে মানুষের মতো মানুষ হয়ে ওঠার প্রেরণা দিতেই নানা সহশিক্ষায় মেয়েদের সঙ্গী হন তিনি। ব্রহ্মপুত্র বিভাগের অংশগ্রহণকারীরা মনের মাধুরী মিশিয়ে এঁকেছে স্বাধিকার আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ও গেরিলাযুদ্ধ। শিশুদের রংতুলিতে সৃজিত হয়েছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, আয়োজনটি চমৎকার। শিশুরা মনের মতো করে গ্রাম আঁকছে, রংতুলিতে তুলে আনছে ভাষা আন্দোলনসহ আমাদের সকল প্রতিবাদের কথা। এরচেয়ে সুন্দরতম দৃশ্য আজ কী হতে পারে। আজকের এ শিশুরাই আমাদের দেশের ভবিষ্যত। এরাই হবে আমাদের কা-ারি। শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী বলেন, অঙ্কনের জন্য কোন বিষয়বস্তু ঠিক করে দেয়া ঠিক নয়। তারা আঁকবে তাদের ভাবনামতো। তবেই না সে ছবিটি গ্রহণযোগ্য হবে। পদক্ষেপ বাংলাদেশের দেড় দশক পূর্তি উৎসব ॥ ‘কালে-কালান্তরে-মাটি-মানুষে সমৃদ্ধ’ সেøাগানে সময়ের বহমানতায় প্রতিষ্ঠার ১৫ বছরে পদার্পণ করেছে সাংস্কৃতিক সংগঠন পদক্ষেপ বাংলাদেশ। এ উপলক্ষে শুক্রবার সন্ধ্যায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ক্যাফে থিয়েটারে আলোচনা ও সঙ্গীতসন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হয়। দেড় দশকের বর্ষপূর্তি উৎসবের উদ্বোধন করেন কবি আসাদ চৌধুরী। প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। সম্মানিত অতিথির বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, শিশুসাহিত্যিক কাইজার চৌধুরী, গীতিকবি শহীদুল্লাহ ফরায়জী ও কণ্ঠশিল্পী শাওন চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি বাদল চৌধুরী।
×