ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শেরপুর সীমান্তে বন্যহাতির আক্রমণে নারীসহ নিহত ৩

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১৫ অক্টোবর ২০১৬

শেরপুর সীমান্তে বন্যহাতির আক্রমণে নারীসহ নিহত ৩

নিজস্ব সংবাদদাতা, শেরপুর, ১৪ অক্টোবর ॥ শেরপুরের ঝিনাইগাতী সীমান্তে বন্যহাতির আক্রমণে এবার এক রাতে নারীসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে কাংশা ইউনিয়নের পানবর গ্রামে ওই ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন ছুন্নত আলীর স্ত্রী আয়তন নেছা (৪৬), জহুরুল হক ওরফে কালা জহুরুল (৩৫) ও আব্দুল হাই (৪৫)। বন্যহাতির আক্রমণে এলাকার কয়েকটি ঘরবাড়ি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুক্রবার সকালে সংসদ সদস্য প্রকৌশলী একেএম ফজলুল হক চান ও স্থানীয় প্রশাসনসহ বনবিভাগের কর্মকর্তাগণ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপনসহ সহায়তার আশ্বাস দেন। জানা যায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর ৪০/৫০টি বন্যহাতির একটি দল পানবর এলাকায় হানা দিয়ে তা-ব চালায়। এক পর্যায়ে রাত ৯টার দিকে বন্যহাতির দল বাড়িঘরে তা-ব চালাতে শুরু করলে প্রাণ ভয়ে দৌড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার সময় বন্যহাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে ওই তিনজন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। বৃহস্পতিবার রাতে ঝিনাইগাতীর কাংশা ইউনিয়নের পানবর ও দুধনই গ্রামে বন্যহাতির দল তা-ব চালিয়ে ৩ গ্রামবাসীকে শুঁড় দিয়ে পেঁচিয়ে পায়ে পিষ্ট করে নিহত ও ৪ জনকে আহত করে। ভাংচুর করে ৫টি বসতঘর এবং প্রায় ৪ একর জমির ফসল। শুক্রবার বিকেলে সরেজমিনে গেলে স্থানীয় অধিবাসী ও বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা জানান, ক্রমাগত বনাঞ্চল ধ্বংস হওয়ায় বন্যহাতির খাবারের উৎস কমে গেছে। তাছাড়া বনে মানুষের বসবাস ও আনাগোনা বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যহাতির ‘হোম রেঞ্জ’ (নিজস্ব বিচরণক্ষেত্র) কমে গেছে। এজন্য বন্যহাতি খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে নেমে আসছে। পানবর গ্রামের গৃহবধূ নূর জাহান বেগম (৪২) বলেন, ধান, কাঁডাল পাকলেই আত্তির (হাতির) পাল আমগর গেরামে নাইমা আয়ে। ঘরবাড়ি ভাইঙা ফালায়। পোলাপান নিয়া রাইত জাইগা বইসা থাহি। কী করমু, তহন তো কোনো উফায় থাহে না। এহেবারে যুদ্ধের নাহাল অবস্থা। আত্তির জীবনের দাম আছে, আমগর জীবনের দাম নাই।’ ছোট গজনী গ্রামের হাতি সুরক্ষা দলের সদস্য মফিজ উদ্দিন (৪৫) বলেন, আগে মশাল জ্বালাইয়া, টর্চ মাইরা, জেনারেটরের আলো ফালাইলে, চিৎকার-চেঁচামেচি করলে বন্যহাতি চইলা যাইত। কিন্তু এহন তারা কিছুই মানতাছে না। অহন আলো দেকলে দৌড়াইয়া আলোর দিকেই আইয়ে। মশাল নিয়া দৌড়াইলে উল্টা শুঁড় দিয়ে আগুনের মশাল কাইড়া নিয়া তাড়া করছে। শ্রীবরদী উপজেলা ট্রাইবাল এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রাঞ্জল এম সাংমা বলেন, সীমান্তের ওপারে ভারতে স্থানীয় অধিবাসী ও চোরা শিকারীরা বন্যহাতিকে গুলি করে হত্যা করছে। রাবার বাগান, বাদামের বাগান করার জন্য ওপারের স্থানীয় বাসিন্দারা হাতি তাড়াচ্ছে। আর চোরা শিকারীরা হাতির দাঁত ও বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের লোভে গুলি করছে। তিনি ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করে হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনের দাবি জানান।
×