ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন উচ্চতায় চট্টগ্রাম

কর্ণফুলী টানেল, আনোয়ারায় ইকোনমিক জোন, মেরিন ড্রাইভ স্বপ্ন নয়

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১৫ অক্টোবর ২০১৬

কর্ণফুলী টানেল, আনোয়ারায় ইকোনমিক জোন, মেরিন ড্রাইভ স্বপ্ন নয়

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল, আনোয়ারায় চীনা ইকোনমিক জোন ও সীতাকু- থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ এখন আর স্বপ্ন নয়। বাস্তবে রূপ পেতে যাচ্ছে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিত্তি স্থাপনের মধ্য দিয়ে। শুক্রবার ঢাকার গণভবন থেকে যৌথভাবে এই প্রকল্পগুলোর ভিত্তি স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। একইদিনে বাঁশখালীতে বেসরকারী খাতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনে অর্থায়নের বিষয়ে ঋণচুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়। ২০২০ সালের মধ্যে এই প্রকল্পগুলো কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। আর এই চারটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বদলে যাবে চট্টগ্রাম। রাজধানীর গণভবনে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বহুল প্রত্যাশার অবসান ঘটেছে বৃহত্তর চট্টগ্রামবাসীর। চীনের প্রেসিডেন্ট এসে স্বপ্নবিলাসী এই প্রকল্পগুলোর উদ্বোধন করবেন এমনই প্রতীক্ষা ছিল এতদিন। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই কর্ণফুলীর টানেল কাজ শুরু হয়ে যাবে বলে জানা গেছে প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রে। চট্টগ্রামকে ঘিরে সরকারের যে মহাপরিকল্পনা ছিল সেটি যে কেবলই মুখের কথা নয় তা প্রমাণ হলো চীনা প্রেসিডেন্টের উপস্থিতিতে ভিত্তিস্থাপন ও চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে। কর্ণফুলী টানেল বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম পরিণত হবে চীনের সাংহাইয়ের আদলে ওয়ান সিটি টু টাউনে। শুধু তাই নয়, এর মধ্য দিয়ে সমুদ্র পাড় দিয়ে যোগাযোগ স্থাপিত হতে যাচ্ছে সৈকত নগরী কক্সবাজারের। উদ্বোধন হয়ে গেছে সীতাকু- থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৩শ’ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ সড়ক এবং উপকূল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের প্রকল্পও। মীরসরাইয়ে দেশের বৃহত্তম ইকোনমিক জোনকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় মেরিন ড্রাইভ নির্মাণের প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। ফলে দীর্ঘ এই মেরিন ড্রাইভের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে মীরসরাই এবং সংলগ্ন ফেনী জেলার সোনাগাজীও। বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটি (বেজা) সূত্রে জানা যায়, আনোয়ারায় ৭৭৪ একর জমিতে প্রতিষ্ঠা করা হবে চীনা ইকোনমিক ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন। সেখানে গড়ে উঠবে ৩৭১টি শিল্প কারখানা। কর্মসংস্থান হবে অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের। চীনের অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান রিলোকেট করা হবে আনোয়ারায়। ওই জোনে গড়ে উঠবে তৈরি পোশাক কারখানা, রাসায়নিক ও ফার্মাসিউটিক্যালস, কৃষিনির্ভর কারখানা, রাসায়নিক, যন্ত্রপাতি ও ইলেকট্রনিকস, চিকিৎসা সরঞ্জাম, প্লাস্টিক ও আইটি সংশ্লিষ্ট শিল্প। প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই ২৯১ একর খাস জমি বেজাকে হস্তান্তর করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। আরও ৪৮৪ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ একেবারেই শেষ পর্যায়ে। প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় বেশ গতি রয়েছে বলে জানা যায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্রে। চীনা ইকোনমিক জোন বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ১৬ হাজার কোটি টাকা। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে চায়না হরবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। ২০১৭ সালের শুরুতে কাজ আরম্ভ হয়ে তা শেষ করা হবে ২০২০ সালে। বিশাল এই কর্মযজ্ঞ ও শিল্পাঞ্চলকে ঘিরে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে আনোয়ারা তথা পুরো দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ। কর্ণফুলী টানেল নির্মাণে ব্যয় হবে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা। স্বপ্নের এই টানেলটি নির্মাণ করবে চায়না কমিউনিকেশন্স কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি)। নদীর তলদেশে ৩ কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ এ টানেলের জন্য চীন সরকার সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা সহায়তা দেবে। টানেলটি শহরের অংশে কর্ণফুলী নদীর মোহনায় নেভাল একাডেমির কাছে দিয়ে প্রবেশ করে দক্ষিণ দিকে কাফকো সার কারখানার এলাকা দিয়ে বের হবে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে বেসরকারী উদ্যোগে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণেও ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে শুক্রবার। এস আলম গ্রুপ ও চীনের সরকারী প্রতিষ্ঠান সেনডং ইলেকট্রিক পাওয়ার কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশনের (সেপকো) যৌথ উদ্যোগে এই বিদ্যুত কেন্দ্র গড়ে উঠবে। কাজ শুরুর চার বছরের মধ্যে এই কেন্দ্র থেকে বিদ্যুত যুক্ত হবে জাতীয় গ্রীডে। বেজা চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী এ প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে জানান, আনোয়ারায় চীনা ইকোনমিক জোন বাস্তবায়নে অর্থায়ন করছে চীন সরকার। শুক্রবার চীনের এক্সিম ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও বেজার মধ্যে এ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। ভূমি উন্নয়ন কাজ ও অবকাঠামো নির্মাণ তথা পুরো প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে চীন সরকার। আগামী জুন মাসের মধ্যেই আনোয়ারায় দুই বিলিয়ন ডলারের কাজ সম্পন্ন হবে বলে জানানো হয়েছে চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না হারবারের পক্ষ থেকে। এদিকে, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর এই বাংলাদেশ সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং দু’দেশের সম্পর্ক সুদৃঢ় করার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে আশা করছে সরকার। আনোয়ারা এলাকার সংসদ সদস্য ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ জনকণ্ঠকে জানান, কর্ণফুলী টানেল ও আনোয়ারায় চীনা ইকোনমিক জোন বাস্তবায়িত হলে দক্ষিণ চট্টগ্রামে শিল্পায়ন ঘটবে। টানেল ও চীনা অর্থনৈতিক জোন পাল্টে দেবে পুরো চট্টগ্রামের চেহারা, যার প্রভাব পড়বে দেশজ অর্থনীতিতে। এরসঙ্গে সীতাকু- থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ যুক্ত হলে তা চট্টগ্রামকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরবে নতুন উচ্চতায়। এতে করে বিদেশী বিনিয়োগকারীরাও আকৃষ্ট হবে চট্টগ্রামের প্রতি। বর্তমান সরকার আমলে বাংলাদেশ ও চীন অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে বলে তিনি অভিমত রাখেন।
×