ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশ হারাতে পারে সুদানের পাট বাজার

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশ উপেক্ষা করে বিজেএমসির নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১৫ অক্টোবর ২০১৬

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশ উপেক্ষা করে বিজেএমসির নির্দেশ

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ চুক্তি বাতিলের পরিবর্তে সেই সুদানি ব্যবসায়ীর কাছেই পাট পণ্য রফতানি করছে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সংস্থা বিজেএমসি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশ অমান্য করে এই পাট পণ্য রফতানিকে কেন্দ্র করে সুদানে পাট রফতানির আদেশ পাওয়া দেশীয় কোম্পানির মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিদেশী কোম্পানি বাদ দিয়ে দেশীয় কোম্পানির মাধ্যমে সুদানে পাট পণ্য রফতানির নির্দেশ দেয়া হয়। সে লক্ষ্যে সুদানের কোম্পানির সঙ্গে করা চুক্তি বাতিলের উদ্যোগ নেয় বিজেএমসি। এ বিষয়ে চুক্তি বাতিলের ফাইল পাঠানো হয় আইন মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত উপেক্ষা করেই সুদানি কোম্পানির কাছে প্রায় ২০ হাজার বেল পাট পণ্য রফতানির জন্য বিজেএমসি তার অধীনস্থ মিলগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে। একই সঙ্গে গোল্ডেন ফাইবার ট্রেড সেন্টারের সঙ্গে চুক্তিকৃত পাট পণ্যও রফতানির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, দেশীয় কোম্পানি গোল্ডেন ফাইবার ট্রেড সেন্টার সুদানে সাড়ে তিন শ’ কোটি টাকার দেড় লাখ বেল পাট পণ্য রফতানির অর্ডার পেয়েছে। এই পাট পণ্য রফতানির জন্য ইতোমধ্যে গোল্ডেন ফাইবার ট্রেড সেন্টার থেকে সাড়ে ৪৪ কোটি টাকা অগ্রিমও প্রদান করা হয়েছে বিজেএমসিকে। আর দেশীয় এই কোম্পানিটিই হলো সুদান সরকারের কাছে পাট পণ্য বিক্রির জন্য বিজেএমসির একমাত্র এজেন্ট। অথচ দেশীয় কোম্পানির অর্ডারকে পাশ কাটিয়ে বিজেএমসি সুদানী কোম্পানি টাইফ ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে এক লাখ ১০ হাজার ৪৫ বেল পাট পণ্য রফতানির চুক্তি করে বিজেএমসি। এ বছর সুদানে ফসল ভাল হওয়ায় সবমিলিয়ে পাট পণ্যের চাহিদাই দাঁড়াবে দেড় লাখ বেল। ফলে এই চুক্তি থেকে বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্ট যে, বিজেএমসির একটি মহলের যোগসাজশে বিএনপি আমালে নিয়োগকৃত বাংলাদেশের অবৈতনিক কনসাল জেনারেলের আমিন আবদেল লফিত একচেটিয়াভাবে অতীতের মতো সুদানে বাংলাদেশের পাটের বাজার দখল করতে চায়। সুদানে সরকারীভাবে পাট পণ্য রফতানির জন্য বিজেএমসির একক এজেন্ট হওয়া সত্ত্বেও গোল্ডেন ট্রেড সেন্টারের বাজার নষ্ট করতে চায়। এটি আমিন আবদেল লতিফের কর্মকা- থেকেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সে ২৫ সেপ্টেম্বর সুদান সরকারের একটি টেন্ডারে অংশ নিয়ে তাতে একটি খাম জমা দিয়েছে। ওই খামের ভেতর দেয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, সুদানে পাট পণ্য রফতানির জন্য অন্য কোম্পানির নামে পাট পণ্য বরাদ্দ নেই। সুদানের সরকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশী যে কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে বিজেএমসি তার এক লাখ ৩০ হাজার টনের অর্ডার বাতিল করেছে। বিজেএমসি আগামী চার মাস কেবল তার জন্য পাট পণ্য তৈরিতে বুকড হয়ে আছে। শুধু তাই নয়, সে এখন প্রতি বেল পাট পণ্য ৩৪১ ইউরোতে দিতে পারবে। তার কোম্পানি ছাড়া অন্য কোম্পানি এখন আর বিজেএমসির মাল নিতে পারবে না। এসব মিথ্যা তথ্য দিয়ে সে সুদান সরকারী কর্তৃপক্ষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে। শুধু তাই নয়, সে কৌশল অবলম্বন করেছে, সুদানের পাটের বাজারকে তার হাতের মুঠোয় নিতে। আর এ কাজে তাকে সহায়তা করছে বিজেএমসির কতিপয় কর্মকর্তা। আগামী তিন সপ্তাহ পর সুদানে ফসল উঠা শুরু হবে। তার আগেই সে ২০ হাজার টন পাট পণ্য সুদানে নিয়ে মজুদ করতে চাইছে। যে কারণে বিজেএমসি আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের অপেক্ষায় না থেকে তড়িঘড়ি তার ২০ হাজার টন পাট পণ্য জাহাজীকরণের জন্য মিলগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে। উদ্দেশ্য হলো, ফসল উঠার সঙ্গে সঙ্গে কৃষক পাটের ব্যাগের জন্য হইচই শুরু করে দেবে। তখন সুদান সরকার বাধ্য হয়ে তার কাছ থেকেই পাটের ব্যাগ ক্রয় করবে। এ সুযোগে সে চড়া দামে সরকারের কাছে বস্তা বিক্রি করবে। অন্যদিকে পর্যাপ্ত ব্যাগ না পেলে বাধ্য হয়ে সুদানি কৃষক তাদের ফসল রাখার জন্য পলিব্যাগ ব্যবহার করবে। এতে অন্যান্য দেশের মতো, সুদানেও বাংলাদেশ পাটের বাজার হারাবে।
×