স্টাফ রিপোর্টার ॥ চীনের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর উপলক্ষে ঢাকা ও সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকাজুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে স্মরণকালের সবচেয়ে কঠোর নিরাপত্তা বলয়। প্রস্তুত থাকছে দেশের সব বাহিনী। পুরো রাজধানী রয়েছে গোয়েন্দাদের নজরদারির মধ্যে। নিরাপত্তার কারণে ঢাকার বেশ কিছু জায়গায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল। তারপরও ত্রিশ বছর পর কোন চীনা প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরকে ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছেন মানুষ। সরেজমিনে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত থেকেই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সড়কের আশপাশের এলাকায় বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। তারও আগেই রাস্তায় রাস্তায় বসানো হয় সিসি ক্যামেরা। রাস্তা থেকে কয়েকশ গজ দূরেও বহু সিসি ক্যামেরা বসানো হয়। যানবাহন চলাচলে বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়।
বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মোসলেহ্ উদ্দিন আহমদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শুক্রবার সকাল দশটা থেকে শনিবার সকাল দশটা নাগাদ বিমানবন্দর সড়কে খিলক্ষেত ক্রসিং থেকে মুনমুন কাবাব (পদ্মা অয়েল) ক্রসিং পর্যন্ত রাস্তার পশ্চিম অংশ (আউটগোয়িং) বন্ধ থাকবে। শুধু পূর্ব অংশ দিয়ে গাড়ি যাতায়াত করতে পারবে। এছাড়াও প্রয়োজন অনুযায়ী বিমানবন্দরসহ আশপাশের সড়কে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
উল্লেখিত সময়ে ঢাকামুখী দূরপাল্লার বাস ও ট্রাককে আব্দুল্লাহপুর দিয়ে এয়ারপোর্ট সড়ক ব্যবহার না করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিকল্প রাস্তা দিয়ে দূরপাল্লার যানবাহনকে ঢাকায় প্রবেশ করতে আব্দুল্লাহপুর ও ধউর থেকে বেড়িবাঁধ-মিরপুর শাহআলী মাজার রোড হয়ে গাবতলী সড়ক ব্যবহার করতে বলা হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, উত্তরবঙ্গের সব যানবাহন গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে গাজীপুরের দিকে না গিয়ে সোজা সাভার ইপিজেডের দিকে যায়। এর মধ্যে বেশ কিছু যানবাহন বাইপাইল হয়ে আশুলিয়া বেড়িবাঁধের দিকে যায়। বেড়িবাঁধ থেকে অধিকাংশ যানবাহনকে মিরপুর শাহআলী মাজারের দিকে পাঠানো হয়। তবে কিছু কিছু যানবাহন আব্দুল্লাহপুরের দিকে যায়। ওদিকে বিমানবন্দরে চীনা রাষ্ট্রপতি নামার কারণে অনেক দূর থেকেই ওই রাস্তায় সকাল থেকেই যানবাহনের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
বেড়িবাঁধ দিয়ে মিরপুর শাহআলী মাজার এলাকায় প্রবেশকারী যানবাহনের অধিকাংশই ডান দিকে গাবতলী থেকে গুলিস্তানগামী রাস্তায় গিয়ে ওঠে। ফলে সেখানে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এছাড়া বেশ কিছু যানবাহন মিরপুর মাজার রোড হয়ে মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর হয়ে শাহবাগের দিকে রওনা হয়। ফলে স্বাভাবিক কারণেই গাড়ির চাপ বেড়ে যায়। এছাড়া নিরাপত্তার কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আগারগাঁও থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে দিয়ে যাওয়া রাস্তায় বেরিক্যাড দিয়ে দেয়। ফলে যানজট তীব্র আকার ধারণ করে। কয়েক ঘণ্টার যানজটে আটকা থাকলেও অনেকেই বিষয়টিকে স্বাভাবিক বলেই মন্তব্য করেছেন। আগারগাঁও যানজটে আটকে থাকা একজন সিএনজি চালক বলছিলেন, চীন বাংলাদেশকে অনেক সহযোগিতা করে। দেশটির রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তার কারণে যে যানজট হয়েছে, সেটি খুবই স্বাভাবিক। এজন্য তিনি মুটেই ক্ষুব্ধ হন। বরং এটি দেশের জন্য মঙ্গল। এমন মন্তব্য করেছেন অনেকেই। তবে অনেকেই আবার যানজটের জন্য পুলিশকে দোষারোপ করেছেন। বলেছেন, পুলিশ আগাম বিষয়টি জানিয়ে দিলে হয়ত তারা আগে আগেই কাজ সেরে রাখতেন বা কাজের জন্য আর শুক্রবার বের হতেন না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শেরেবাংলানগর থেকে শুরু করে বিজয় সরণি, জাতীয় সংসদ ভবনের সামনের রাস্তা, ফার্মগেট, খামারবাড়িসহ আশপাশের সব এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন করা। আর আশপাশের উঁচু ভবনে বাইন্যুকুলার হাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সর্তক অবস্থায় দেখা গেছে। তারা চারদিকে ঘুরে ঘুরে নজর রাখছিলেন। গাড়ি ছাড়া হচ্ছিল খুবই সীমিত আকারে। পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও প্রস্তুত ছিলেন। কাওরানবাজার পাঁচতারকা সোনারগাঁও হোটেলের সামনে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর এক সদস্যকে ওয়্যারলেস হাতে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। তিনি চারদিকে সর্তক দৃষ্টি রাখছিলেন। পাশাপাশি দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে যানজট নিরসনে পরামর্শ করতে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতেও দেখা যাচ্ছিল।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, পুরো রাজধানীজুড়েই প্রায় এমন নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল। শনিবারও এমন কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকছে। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে পুরো রাজধানীতেই কড়া গোয়েন্দা নজরদারি চলছে। সেই সঙ্গে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি অব্যাহত আছে। বিশেষ নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধর্মের উপাসনালয়গুলো, বঙ্গভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, গণভবন, সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ, বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ উদ্যোগে এবং চীনের তৈরি বিভিন্ন স্থাপনা ও গুলশানের কূটনৈতিকপাড়াসহ বিভিন্ন ভবন।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: