ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সম্মেলনে ১৫ দেশের প্রতিনিধি আসছেন

আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদ হবে ৮১ সদস্যের

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ১৫ অক্টোবর ২০১৬

আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদ হবে ৮১ সদস্যের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক জাতীয় সম্মেলনের রূপরেখা প্রায় চূড়ান্ত। এবারের সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য সংখ্যা ৭৩ থেকে বাড়িয়ে ৮১ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। সভাপতিম-লীর সংখ্যা ১৫ থেকে বাড়িয়ে ১৯, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ৩ থেকে বাড়িয়ে ৪, সাংগঠনিক সম্পাদক ৭ থেকে বেড়ে ৮ জন এবং কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আরও দু’জন বাড়ানোর প্রস্তাব করে দলীয় গঠনতন্ত্রের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। আর এবারের সম্মেলনে ছয় হাজার ৫৭০ জন কাউন্সিলর এবং সমান সংখ্যক ডেলিগেটর ছাড়াও বিশ্বের ১৫টি গণতান্ত্রিক দেশের বিদেশী আমন্ত্রিত অতিথি উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে। দলের গঠনতন্ত্রে কোন যুদ্ধাপরাধী, স্বাধীনতাবিরোধী এবং বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত পরিবারের কোন সদস্য আওয়ামী লীগের সদস্য হতে পারবে না, এ বিষয়টি সুষ্পষ্ট উল্লেখ থাকছে। এছাড়া দলীয়ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় তৃণমূলের মতামতকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে গঠনতন্ত্রে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ১৯ সদস্যবিশিষ্ট স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের প্রস্তাব করে নতুন একটি অনুচ্ছেদ গঠনতন্ত্রে সংযোজন করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি দলের নিজস্ব দু’হাজার স্বেচ্ছাসেবক এবং দু শ’ নারী স্বেচ্ছাসেবক সম্মেলনের সার্বিক শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন। এদিকে সম্মেলন যতই এগিয়ে আসছে দলটির কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত, এমনকি দেশের সব রাজনৈতিক দল ও নাগরিকদের মধ্যে কৌতূহল ততই বাড়ছে। সর্বত্রই এক কথা, কী হতে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এই রাজনৈতিক দলের সম্মেলনে? নেতৃত্বে কী ধরনের পরিবর্তন আসছে? সম্মেলনকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে বড় ধরনের শুদ্ধি অভিযান চালানো হবে, নাকি কিছু নতুন মুখের মিশ্রণ ঘটিয়ে বিগতরাই প্রাধান্য পাবে? কে হচ্ছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক? সৈয়দ আশরাফুল ইসলামই কী ওই পদে হ্যাট্রিক করবেন, নাকি চমক দেয়ার মতো নতুন কেউ আসছেন ওই পদে, এ নিয়েও কৌতূহলের শেষ নেই ক্ষমতাসীন দলটিতে। দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের কেউই পদ হারাতে চান না। সবাই পদ পেতে এখন মরিয়া। কেউ চান পদোন্নতি, অন্যরা চান স্বপদে বহাল থাকতে। আবার দলের একঝাঁক সাবেক ছাত্রনেতা ও নারীনেত্রী কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেতে যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে সম্মেলনে কার ভাগ্যে পদোন্নতি বা পদচ্যুতি ঘটবে, কে হবেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর সাধারণ সম্পাদক, তার সবই এখন দলটির সভানেত্রী শেখ হাসিনার ল্যাপটপে বন্দী। আগামী নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রবীণদের অভিজ্ঞতা আর নবীণদের তারুণ্যের সংমিশ্রণে প্রধানমন্ত্রী আগামী তিন বছরের জন্য একটি চমক দেয়ার মতো শক্তিশালী কমিটি গঠন করতে যাচ্ছেন, এ বিশ্বাস দলটির নেতাকর্মী-সমর্থকদের। বিশ্বের ১৫টি দেশের প্রতিনিধি সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন- সেতুমন্ত্রী ॥ আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগের এবারের কাউন্সিলে বিশ্বের ১৫টি দেশের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন। উন্নত তথ্যপ্রযুক্তির সমন্বয়, অভিজ্ঞতা এবং আধুনিকতার মিশেলে গড়ে তোলা হবে আওয়ামী লীগের আগামীর নেতৃত্বদানকারী প্রতিনিধি দল। শুক্রবার রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন সফল করতে গঠিত শৃঙ্খলা উপ-কমিটির এক বৈঠক শেষে তিনি এসব কথা বলেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশের বৃহত্তম ও প্রাচীন রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগের বর্ণাঢ্য ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রয়েছে। আওয়ামী লীগের ঐতিহ্যের সঙ্গে প্রযুক্তির সমন্বয়ে প্রবীণ ও নবীনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন কমিটি গঠিত হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশনে ছয় হাজার ৫৭০ জন কাউন্সিলর এবং সমান সংখ্যক ডেলিগেটর অংশগ্রহণ করবেন। সম্মেলনে কাউন্সিলর ডেলিগেটর ছাড়াও দেশী-বিদেশী আমন্ত্রিত অতিথিরা অংশগ্রহণ করবেন। দেশের রাজনীতির ইতিহাসে আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন সবচেয়ে সুশৃঙ্খল ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে সম্পন্ন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, শৃঙ্খলা থেকে শুরু করে অন্যান্য প্রস্তুতির দিক থেকে আওয়ামী লীগের এ সম্মেলন দেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। তিনি জানান, আওয়ামী লীগের এ সম্মেলনে দু’হাজার স্বেচ্ছাসেবক এবং দু শ’ নারী স্বেচ্ছাসেবী সম্মেলনের সার্বিক শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত থাকবেন। আগামী ১৯ অক্টোবরের মধ্যে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন প্রস্তুতির সকল কাজ শেষ করা হবে। বৈঠকে এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাহবুবউল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ফরিদুন্নাহার লাইলী, এ্যাডভোকেট মৃনাল কান্তি দাস, মির্জা আজম, ড. আওলাদ হোসেন, যুবলীগের ওমর ফারুক চৌধুরী, হারুনুর রশিদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের মোল্লা মোঃ আবু কাওছার প্রমুখ। স্থানীয় নির্বাচনে তৃণমূল নেতাদের মতামত প্রাধান্য পাবে- ড. রাজ্জাক ॥ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য সংখ্যা ৭৩ থেকে বাড়িয়ে ৮১ করার প্রস্তাব করবে গঠনতন্ত্র উপ-কমিটি। এছাড়া সভাপতিম-লীর সদস্য সংখ্যা ১৫ জন থেকে বেড়ে ১৯ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ৩ থেকে বেড়ে ৪ জন, সাংগঠনিক সম্পাদক ৭ থেকে বেড়ে ৮ জন এবং কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আরও দু’জন বাড়ানোর প্রস্তাব করবে এই উপ-কমিটি। শুক্রবার ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের গঠনতন্ত্র উপ-কমিটির সভায় গঠনতন্ত্র উপ-কমিটির আহ্বায়ক এবং আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ড. আব্দুর রাজ্জাক এ কথা জানান। আগামী ২২ ও ২৩ অক্টোবর রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত দলটির ২০তম জাতীয় সম্মেলন সফল করতে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যুদ্ধাপরাধী এবং বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত পরিববারের কোন সদস্য আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য পর্যন্ত হতে পারবে না। গঠণতন্ত্রে এই বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব সম্মেলনে উত্থাপন করা হবে। তিনি বলেন, দলকে সুসংগঠিত করতে গঠনতন্ত্র সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে। দলের সাংগঠনিক কাঠামো বাড়ানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে সেটা জাম্বু আকারের কোন কমিটি হবে না। আওয়ামী লীগ এ ধরনের কমিটি পছন্দ করে না। গঠনতন্ত্র উপ-কমিটির সভায় যে খসড়া প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে তা কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় তোলা হবে। সেখান থেকে অনুমোদন নেয়ার পর সেটা কাউন্সিলে উপস্থান করা হবে। কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে প্রস্তাব চূড়ান্ত হবে। সাবেক এই মন্ত্রী আরও জানান, বৈঠকে দলের সদস্যরা স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড নামের আরেক ফোরাম গঠনতন্ত্রে সংযোজনের প্রস্তাব করেন। সভার এ প্রস্তাবে বলা হয়, স্থানীয় সরকার দলীয়ভাবে হওয়ার কারণে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতিনিধি মনোনয়নের জন্য একটি বোর্ড থাকবে। এই বোর্ডের নাম হবে ‘স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড’। এই বোর্ডের সদস্য হবেন ১৯ জন। দলের সভাপতি এই বোর্ডের সভাপতি হবেন এবং সদস্য সচিব হবেন দলের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে এই বোর্ড চূড়ান্ত মনোনয়ন দেবে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হলে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ৩ জন প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করে বোর্ডে পাঠাবেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন গঠনতন্ত্র উপ-কমিটির সদস্য সচিব এ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফ, ডাঃ দীপু মনি, আব্দুল মতিন খসরু, লে. কর্নেল (অব) ফারুক খান, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ, বদিউজ্জামান ভূইয়া ডাবলু, আখতারুজ্জামান, আব্দুর রহমান, খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন, অসীম কুমার উকিল, সুজিত রায় নন্দী, আমিনুল ইসলাম আমিন, ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপস প্রমুখ। জিয়াউর রহমানের রক্ত দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত- ড. হাছান ॥ আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বঙ্গবন্ধু রক্ত যেখানে বিশ্ব শাসন করছেন, বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হচ্ছেন, সেখানে জিয়াউর রহমানের রক্ত একের পর এক দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। শুক্রবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। ‘বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র টিউলিপ সিদ্দিকীর সাফল্য বাংলাদেশ, দেশের গৌরব’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ স্বাধীনতা পরিষদ। হাছান মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর রক্ত হওয়ায় আজকে টিউলিপ সিদ্দিকী ব্রিটিশদের শাসন করছে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা-দৌহিত্ররা আজ পৃথিবী জয় করছে। বঙ্গবন্ধু পরিবারের কারণে বাঙালী জাতি ও সারা বিশ্বের বাঙালীরা আজ গর্বিত। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ও রেহানার সন্তানেরা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিশ্বের নামীদামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন, সেখানে খালেদা জিয়ার সন্তান তারেক জিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল মাত্র। পরবর্তীতে ফেল করায় ঢাবি থেকে তাকে বের করে দেয়া হয়। তাই বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সঙ্গে জিয়া পরিবারের কোন তুলনা করা যাবে না। কারণ বট গাছের সঙ্গে কচুর গাছের কখনও তুলনা হয় না। আয়োজক সংগঠনের উপদেষ্টা লায়ন চিত্তরঞ্জন দাসের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন রেলপথ মন্ত্রী মোঃ মুজিবুল হক, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, স্বাধীনতা পরিষদের সভাপতি মোঃ জিন্নাহ আলী খান জিন্নাহ, সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহাদাত হোসেন টয়েলসহ সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
×