ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

গার্মেন্টস, ওষুধ, চামড়া ও সেবা খাতে বিনিয়োগ করবেন চীনা ব্যবসায়ীরা

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ১৫ অক্টোবর ২০১৬

গার্মেন্টস, ওষুধ, চামড়া ও সেবা খাতে বিনিয়োগ করবেন চীনা ব্যবসায়ীরা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চীনের ১৩ কোম্পানির সঙ্গে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের ১৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের ১৩ চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। চুক্তির আওতায় অবকাঠামো উন্নয়নসহ বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, ওষুধ, সিরামিক, চামড়া এবং সেবা খাতে চীনের ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করতে যাচ্ছেন। শুক্রবার রাজধানীর সোনারগাঁ হোটেলের বলরুমে বাংলাদেশ-চায়না বিজনেস ফোরামের যৌথ বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুনের উপস্থিতিতে এসব চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এবং চায়না কাউন্সিল ফর দ্য প্রমোশন অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড (সিসিপিআইটি) যৌথভাবে এ বৈঠকের আয়োজন করে। ওই সময় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ চীনা ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগ আইন দ্বারা সুরক্ষিত করা হয়েছে। তাই এই মুহূর্তে চীনের ব্যবসায়ীরা যদি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেন তাহলে দুই দেশের অর্থনীতি লাভবান হবে। তিনি বলেন, বিসিআইএমের অর্থনৈতিক করিডর পুরোপুরি কার্যকর হলে এই বিনিয়োগের ক্ষেত্র আরও প্রসারিত হবে। তাই বাংলাদেশে বিনিয়োগ করুন। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দুই দেশের সরকারের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চীনের বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের কোটা ও ডিউটি ফ্রি সুবিধা চাওয়া হয়েছে। চীনের প্রেসিডেন্ট আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, তিনি দেশে ফিরে গিয়ে ফিজিবিলিটি স্টাডি করে তারপর সিদ্ধান্ত জানাবেন এবং পদক্ষেপ নেবেন। এর আগে দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে সরকারী পর্যায়ে বৈঠকে ২৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর হয়েছে। বৈঠকের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়িক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। চীনের প্রতিনিধিদলের এই সফর সেই সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নেবে। বৈঠকে চায়না কাউন্সিল ফর দ্য প্রমোশন অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডের ভাইস চেয়ারম্যান চেন ঝো বলেন, টেক্সটাইল, অটোমোবাইল, যন্ত্রাংশ, জাহাজ নির্মাণ, অবকাঠামোসহ বিভিন্ন খাতে চীনের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী। এদিকে, ব্যবসায়ীদের এই বৈঠকে চীনের ১৫ কোম্পানির সঙ্গে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের ১৯ চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যাচাই-বাছাই করে ১৩টি চুক্তি করা হয়েছে। এদিকে, দুই দেশের ব্যবসায়ীদের এই বৈঠকে দেশের ব্যবসায়ীরা বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে মত বিনিময় করেছেন। এফবিসিসিআই সভাপতি আরও জানান যদিও এবার ১৩টি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। তারপরও আশা করছি, পরবর্তীতে এ সংখ্যা বেড়ে ৫০টির মতো হতে পারে। চীনের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে নিশ্চয়ই লাভবান হবেন। আমরা আশাবাদী, যদি উভয় দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে ৫০টি চুক্তি স্বাক্ষর হয় তাহলে তার পরিমাণ কয়েক বিলিয়ন ডলার দাঁড়াবে। এছাড়া, সরকারী উদ্যোগে তো আলাদা চুক্তি হচ্ছেই। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমান (বিসিআইএম) ও সিল্ক রুটের আওতায় চীনের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের এ সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন। বাংলাদেশের উন্নয়ন ও দারিদ্র বিমোচনে ঢাকা-বেইজিংয়ের মধ্যকার এ বাণিজ্য চুক্তিগুলো বিশাল সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। আমার বিশ্বাস, চীনের ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগের উত্তম স্থান হিসেবে বাংলাদেশকেই বেছে নেবেন। সিসিপিআইটির ভাইস চেয়ারম্যান চ্যান ঝহু বলেন, অবকাঠামোগত উন্নয়নে বাংলাদেশ এশিয়া মহাদেশে বিনিয়োগ ব্যাংকের মধ্যেই রয়েছে। আমরা আস্থা নিয়ে এদেশের বিনিয়োগ পার্কে বিনিয়োগ করব। আমাদেরই এই প্রতিনিধি দলে অনেক উদ্যোক্তা রয়েছেন। যারা এদেশে বিনিয়োগ করতে চান। চামড়া, অবকাঠামো, তৈরি পোশাক, ওষুধ, অটোমোবাইলসহ বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগের কথা চিন্তা করছি আমরা। চীনের অর্থায়নে বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্য চীনে রফতানি করে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৈষম্য দূর করা সম্ভব। তিনি আরও বলেন, আমরা বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে সহায়তা করতে চাই। দেশের প্রযুক্তি ও দক্ষতা বাংলাদেশের সঙ্গে শেয়ার করতে চাই। এফবিসিসিআই ও সিসিপিআইটি এর মাধ্যমে নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়েছে। যাতে উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাবে। এদেশে বিনিয়োগ ও ব্যবসার ভাল পরিবেশ রয়েছে। এ কারণেই আমরা এদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী। এদিকে, এফবিসিসিআইয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ১ হাজার ৪৫ কোটি ৩৯ লাখ। এর মধ্যে বাংলাদেশের রফতানি মাত্র ৮০ কোটি ৮১ লাখ ডলার। চীন থেকে আমদানি হয়েছে ৯৬৪ কোটি ৫৮ লাখ ডলারের সমপরিমাণ পণ্য। তাই বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা বিবেচনা করছে ঢাকা ও বেইজিং। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ এখন চীনের তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। বাংলাদেশ এখন চীন থেকেই সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করে। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ১ হাজার কোটি ডলার (১০ বিলিয়ন) ছাড়িয়ে গেছে।
×