ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জিয়া হায়দার

এ লে বে লে

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ১৪ অক্টোবর ২০১৬

এ লে বে লে

(পূর্ব প্রকাশের পর) ওয়েটার : কিচ্ছু বুঝলাম না স্যার। কাঞ্চু : (কি যে অর্থ হয় বোঝা যায় না, এমন একটা হাসি দিয়ে) আমিও আছি, বুঝলি। সে বেরিয়ে যায়। ওয়েটার ফ্যাল ফ্যাল করে কাঞ্চুর চলে যাবার দিকে তাকিয়ে থাকে। আলো নিভে যায়। এখন শুধু ঝুলন্ত ডোম ও ঝাড়বাতিগুলো জ্বলছে। ইন্টারমিশনকালে বিদেশি যন্ত্রসংগীত নেপথ্যে বাজতে থাকে। খরিদ্দাররা যথারীতি মঞ্চে থাকবে। তাদের এলাকায় অল্পস্বল্প আলো। ওয়েটাররা তাদের খাবার সার্ভ করে যেতে থাকে। দ্বিতীয় অংক মঞ্চের সাধারণ আলোগুলো তখনো জ্বলেনি। রঙিন ডোমগুলো জ্বলছে। মেয়ের প্রবেশ। অভিনয় প্ল্যাটফর্মের আলো জ্বলে ওঠে। তবে পরিপূর্ণ নয়। মেয়ে তার আসনে বসে। এদিক-ওদিক তাকায়। অতপর হাতব্যাগ থেকে কয়েকটি কাগজ নিয়ে সংলাপ মুখস্থ করতে শুরু করে। কিছু পরে ছেলে প্রবেশ করে নিজ আসনে বসে। ছেলে : কি করছো। মেয়ে : সংলাপ মুখস্থ করছি। ছেলে : সংলাপ। মেয়ে : শেষদিকে ওই যে কি সব সংঘাতের ব্যাপার আছে না। ছেলে : হুঁ। মেয়ে : ও জায়গাটা কিছুতেই মনে রাখতে পারছিনে। কি যে খটোমটো ভাষা। ছেলে : কোনো দরকার নেই। মেয়ে : কেন? ছেলে : ঘটনা কোনদিকে যাবে তারই তো ঠিক নেই। ইতোমধ্যে কোন এক ফাঁকে ওয়েটার এসে আবছায়ার ভেতরে কাউন্টার টেবিল ও অভিন প্ল্যাটফর্মের মাঝামাঝি জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে এবং ছেলে ও মেয়ের কথায় আড়িপাতে। মেয়ে : সিকোয়েন্স তো ঠিক করাই আছে। ছেলে : থাকলোই বা। মেয়ে : উনি তো সেই ভাবেই নির্দেশ দেবেন। ছেলে : নির্দেশ দিলেই হলো নাকি। মেয়ে : আমি বাপু তোমার কথা বুজতে পারছি না। ছেলে : শোনো, সিকোয়েন্স ঠিক করে রাখলেই যে ঘটনা সেখাবে এগোবে, তার তো কোনো মানে নেই। আলী সাহেবের নিজেরই তো আইডিয়ার ঠিক নেই। তাছাড়া আসল কথা হচ্ছে কি জানো, ঘটনা ঘটানোর মালিক তো আমরা। আমাদের দিয়েই তো তার প্ল্যান বলো, আইডিয়া বলোÑ সবকিছুর কাজ হবে। মেয়ে : কিন্তু নির্দেশ তো দেবেন তিনি। ছেলে : তিনি যতই হুকুমদারি করুন না কেন, আমরা যদি...বুঝলে... মেয়ে : তোমার এ্যটিচুডটা কি বলো তো। ছেলে : তুমি এমন একটা খুকু মেয়ে, আই মিন অভিনেত্রী হয়ে কেন যে এতো সিরিয়াস হয়ে পড়ছো। মেয়ে : আমার খুব নার্ভাস লাগছে। ছেলে : কেন? মেয়ে : এমন উদ্ভট ধরনের নাটক তো করিনি কোনোদিন। এমন ডিরেক্টরের পাল্লায়ও পড়িনি। ছেলে : কিচ্ছু ভেবো না। সময়ে সব ঠিক হয়ে যাবে। মেয়ে : কি করে যে হবে। ছেলে : আমার ওপর তুমি কিছুতেই ভরসা রাখতে চাও না। এই যদি ওই যে দুবাই না অস্ট্রেলিয়া কোথায় চলে গেলোÑ তোমার অন্যতম বয়ফ্রেন্ড... মেয়ে : দ্যাখো আমি রেগে যাবো কিন্তু। ছেলে : আমি তো সেইটেই চাইছি। রাগলে তুমি যা একখানা হয়ে ওঠো না, তা’তে... মেয়ে : তুমি, তুমি... (রেগে উঠে বেরিয়ে যেতে উদ্যত হয়। ওয়েটারকে দেখে আঁতকে চিৎকার করে ওঠে।) ছেলে : (চমকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ে) কি হলো? ওয়েটার : (ভয়ে অপ্রস্তুত) না স্যার আমি মানে নাটক তো আবার শুরু হবে... ছেলে : তুমি এখানে কেন? ওয়েটার : (আমতা আমতা করে) আপনাদের জন্যে বলে .... চা আনবো কিনা, তাই জিজ্ঞেস করতে এসেছিলাম। মেয়ে : দরকার নেই। (বসে পড়ে) ছেলে : যাও এখান থেকে। ওয়েটার প্রস্থান করে। ছেলে বসে। মেয়ে : ইস, এমন ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। এ নিশ্চয়ই আমাদের কথাবার্তা সব শুনে ফেলেছে। ছেলে : শুনলোতো কি হয়েছে। মেয়ে : ও ঠিক অন্য মতলবে এসেছিলো। ছেলে : হুঁ, আমার মনে হয়, তোমার এই আধার আলো করা রূপসুধা.... মেয়ে : ভালো হবে না বলছি। কাঞ্চু : (বলতে বলতে প্রবেশ করে) এই যে আপনারা। কেমন লাগছে। কাঞ্চুর প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে কাউন্টার টেবিলের আলো জ্বলে উঠে। ছেলে : (কাঞ্চুর দিকে কঠিন চোখে তাকিয়ে) বমি বমি লাগছে। কাঞ্চু : বমি বমি ! কার? (মেয়ের দিকে তাকায়) ছেলে : ওর না আমার। কাঞ্চু : কেন? ছেলে : আপনাদের মিরধা সাহেব যে জিনিস একখানা ছাড় করছেন তার সুবাসিত গন্ধে। (মেয়ে হেসে উঠে কাগজগুলো হাতব্যাগে ভরে ফেলে।) কাঞ্চু : (হাসতে হাসতে) একেবারে খাঁটি কথা। আপনি ঠিকই ধরেছেন। মেয়ে : সেকেন্ড এ্যাক্টের সময় হয়েছে। কাঞ্চু : হ্যাঁ হয়ে গেছে। (কাউন্টার টেবিলের দিকে ফিরে যেতে যেতে ঘুরে দাঁড়ায়) তা ওয়েটার বললো যে আপনি নাকি কেমন একটু নার্ভাস হয়ে পড়েছেন? মেয়ে : না তো। কাঞ্চু : না ও বললো ওকে দেখে নাকি হঠাৎ... ওটা কিছু নয় সব ঠিক হয়ে যাবে। ছেলে : সময় তো হয়ে গেছে। আপনার জায়গায় গিয়ে বসুন তো। কাঞ্চু : হ্যাঁ যাচ্ছি। (মেয়ে তার জায়গায় বসার আগে) শুনুন আমিও আছি বুঝলেন। ছেলে : কি বললেন? কাঞ্চু : বললাম যে (দেখা গেলো অপরদিক থেকে নির্দেশক প্রবেশ করছে) নির্দেশক সাহেব আসছেন? নির্দেশকের আসনের আলো জ্বলে উঠে। নির্দেশক : (আসতে আসতে) হ্যাঁ এসে গেছি। ইন্টারমিশন শেষ হয়ে গেছে। মিউজিশিয়ান, পজিশন। মিউজিশিয়ানের অংশে আলো জ্বলে। সে এসে তার আসনে বসে। নির্দেশক মঞ্চের ব্যবস্থাপনা দেখে নেয়। লাইটম্যান, স্টেজ লাইট অন করো। পুরো মঞ্চ আলোকিত হয়। নির্দেশক মধ্যমঞ্চে এসে দাঁড়ায় (দর্শকদের উদ্দেশে) সুধীবৃন্দ। (হঠাৎ থেমে যায়। কারণ খুব তাড়াহুড়ো করে এক বয়স্ক দম্পতি স্বামী-স্ত্রী প্রবেশ করে) উফ্ ডিসগাস্টিং ( স্বামী-স্ত্রী তাদের আসনে বসার আগেই) নাটক আবার শুরু হচ্ছে। নির্দেশক তার চেয়ারে যেয়ে বসে। ক্ষণিক নীরবতা। ছেলে ও মেয়ে নির্দেশকের অপেক্ষা করছে। অপরপক্ষে নির্দেশক তাদের নীরবতা লক্ষ্য করতে থাকে? ছেলে ও মেয়ের পরবর্তী কয়েকটি সংলাপ চলাকালে পুরুষ ও মহিলা প্রবেশ করে তাদের জন্য সংরক্ষিত অপর টেবিলে বসে। তাদের পরিচ্ছদ অতি আধুনিক। তাদের প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে ওই এলাকার আলো জ্বলে ওঠে। মহিলা তার হাত ব্যাগ টেবিলে রাখে। ছেলে : তুমি কি আমার ওপর অভিমান করেছো। মেয়ে : না তাহলে কিছু বলছো না কেন? মেয়ে : ভাবছি। ছেলে : কি ভাবছো। মেয়ে : কি নিয়ে ভাবা যায়, তাই ভাবছি। ছেলে :( কিছুক্ষণ পর) ভাবনার বিষয় পাওয়া গেছে। মেয়ে নিরুত্তর। ছেলে পকেট থেকে একটা মুদ্রা বের করে টেবিলের উপর ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে অথবা শূন্যে ছুড়ে ছুড়ে টস করতে থাকে। ছেলে : পাওয়া গেছে? মেয়ে : আগে ভাবনাটা শেষ করতে দাও। ছেলে : তার মানে তুমি আমাকে ইগনোর করছো। (মেয়ে চোখ তুলে তাকায়) তোমার ভাবনা শেষ হলে যদি ইচ্ছে হয় তাহলে খবর পাঠিও। আমি যাচ্ছি। (উঠে দাঁড়ায়) মেয়ে : (ঘড়ি দেখে) গালর্স কলেজ ছুটি হয়েছে। বলেই পা বাড়াতে গিয়ে আগন্তুক পুরুষ ও মহিলার দিকে চোখ পড়ে। থমকে দাঁড়িয়ে যায়। ততোক্ষণে ওয়েটার পুরুষ ও মহিলার কাছে এসে দাঁড়ায়। হাতে মেনু। মিউজিশিয়ান সামনে মিউজিক বাজাতে শুরু করে। মহিলা : (ওয়েটারকে) নাটক কি শুরু হয়ে গেছে? (চলবে) ওয়েটার : ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। পুরুষ : কি বলছো তুমি! ওয়েটার : হ্যাঁ আসলেও তাই। ছেলে : (উঁচু গলায় ঘোষণা)। নাটক এখন ক্লাইম্যাক্সে। মহিলা চমকে উঠে দাঁড়ায়, পরে পুরুষটি ও মেয়ে দাঁড়িয়ে যায়। কাঞ্চু : ( বিস্মিত হয়ে ) আবু ওরাও কি এ্যাকটিং-এর মধ্যে? নির্দেশক : (ভীষণ উত্তেজিত হয়ে) আমাকে শেষ করে দিলো। আমি শেষ। ঠিক আছে আমিও দেখছি। মেয়ে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়ার উদ্যোগ নেয়। ছেলে তার হাত চেপে ধরে। ওয়েটার দুই যুগলের দিকেই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। ছেলে : কোথায় যাচ্ছে? মেয়ে : তুমি, তুমি এভাবে অমন করে অন্যের দিকে তাকিয়ে থাকলে... ছেলে : তুমিও যে মেরে গেছো। মেয়ে : মানে আমি তো... ছেলে : বসো। (মেয়েটি বিষণœ মনে বসে পড়ে।) নির্দেশক : মেয়েটি বসে। মেয়ে : তুমিও বসো। ( ছেলে বসে না) নির্দেশক : ছেলেটি দাঁড়িয়ে থাকে। ওয়েটার : (আগন্তুক যুগলকে) এই যে মেনু। পুরুষ : (বসতে বসতে) পরে বলছি। ওয়েটার চলে যায়। মহিলাকে বসো। ( মহিলা বসে।) ছেলে : তুমিও বসো, আমি এখুনি আসছি। ( সে যুগলের দিকে এগিয়ে যায়।) কিছু মনে করবেন না। (মহিলাকে দেখিয়ে) এর সঙ্গে এককালে আমার বন্ধুত্ব মানে পরিচয় ছিল... পুরুষ : এখন কি সেটা ঝালাই করে নিতে চান? ছেলে : না মানে অনেক দিন পর দেখা, তাই একটু আলাপ করতে... পুরুষ : ও। মহিলা : আমি কিন্তু আপনাকে চিনতে পারছি না। পুরুষ : তাতে কি। পর পুরুষের সঙ্গে আলাপ করলে তোমার তো এমন কিছু যাবে আসবে না। মহিলা : আহ্ থামো তো। পুরুষ : ঠিক আছে তুমি আলাপ করতে থাকো, আমি কিছু মনে করবো না। বরং আমি না হয় একটু সরেই যাচ্ছি। (সে মেয়েটির দিকে এগিয়ে যায়।) ছেলে : তুমি কি আমাকে সত্যি... মহিলা : বসো। ছেলে বসে। (এদিকে পুরুষ প্ল্যাটফর্মের কাছে এসে যায়।) নির্দেশক : আপনি এখানে কেন? পুরুষ : আপনি আবার কে? কাঞ্চু : ওই তো নির্দেশক। ওর কাজই তো খবরদারি করা। পুরুষ : হোয়াট এ ফান। বেশ মজার নাটক তো করছো তোমরা। নির্দেশক অভিনেত্রীর কাছে বসে থাকে। এমন তো দেখিনি কখনো। হাউ ফানি। নির্দেশক রাগে উঠে দাঁড়িয়ে যায়। সে কিছু বলার আগেইÑ মেয়ে : (নির্দেশককে) প্লিজ আমাদের একটু সময় দিন। নির্দেশক ক্ষিপ্ত। কিছু বলতে যেয়ে না বলে উত্তেজিতভাবে বেরিয়ে যায়। ওদিকে ছেলে নির্দেশকের আচরণে নিঃশব্দে হাসে। বসো, পুরুষটি বসে। ছেলে ও মহিলার সংলাপকালে পুরুষ ও মেয়ে ফ্রিজ হয়ে যায়। অথবা মূকাভিনয়ের মাধ্যমে কথা বলে। পুরুষ ও মেয়ের সংলাপ চলাকালেও ছেলে ও মহিলার এ্যাকশনও অনুরূপ হবে। ছেলে : কেমন আছো? মহিলা : ভালো। তুমি! ছেলে : ভালো নেই বলতে পারলে খুশি হতাম, কিন্তু সরি বলতে পারলাম না। মেয়ে : অনেক দিন পর দেখা হলো। ভালোই আছ মনে হচ্ছে। পুরুষ অবশ্যই। দিব্যি আছি। তুমি! মেয়ে : আমিও খুব ফূর্তিতে আছি। মহিলা : বিয়ে করেছো? ছেলে : না। মহিলা : কেন? ছেলে : কারণ তুমি যাতে বলতে পারো, তোমার জন্যেই। পুরুষ : ওই লোকটি তোমার স্বামী? মেয়ে : ছি; কি যে বলো। তুমি যা ছিলে, সে-ও তাই। পুরুষ : ওকি পালানোর কথা বলেছে? মেয়ে : হ্যাঁ তোমারই মতো। ছেলে : উনি কি তোমার স্বামী? মহিলা : হ্যাঁ। ছেলে : (দুঃখ পায়) ও। পালিয়ে গিয়েছিলে? মহিলা : হ্যাঁ তবে তোমারই মতো আইডিয়া ছিলো ওর। শেষে আমারটাই মেনে নিলো। দুঃখ পেলে। মেয়ে : তাহলে বিয়ে করতে হয়নি? পুরুষ : হ্যাঁ, হয়েছে। ওকে যখন পালানোর কথা বললাম ও রাজি হয়ে গেলো। তবে একটা শর্ত দিলো ও আমার গাইড হবে। মহিলা : তখন আমি ওর গাইড হয়ে সোজা নিয়ে কাজীর অফিসে। ছেলে : আর উনি কিছু বললেন না। মানে তোমাকে ছেড়ে ভেগে যেতে পারলেন না! মহিলা : ওকে আমি বুঝতেই দিইনি। পুরুষ : ও আমার প্যান্টের বেল্ট এমন করে ধরে রেখেছিলো যে ছাড়ানো অসম্ভব হয়ে গিয়েছিলো। তা ছাড়া কাজী অফিসে ঢুকেই নোটিশ দিয়েছিলো যে ভাগবার চেষ্টা করলেই ও চেঁচামেচি শুরু করবে। আর কাজী অফিসে সেদিন ভিড়ও ছিলো খুব। মেয়ে : তারাও বুঝি তোমাদের মতোই। পুরুষ : হ্যাঁ প্রায় সবাই আমাদের বয়সী। মহিলা : কেন হবে না, বলো। এই দিনে আয়োজন-ধুমধাম করে বিয়ে বসতে গেলে কতো খরচ বলো। ছেলে : ঝামেলাও কম নয়। মহিলা : সেজন্যই তো অমন ব্যবস্থা করে ফেললাম। পুরুষ : সেখান থেকে বেরিয়েই আমরা পলাতক। এদিকে দুজনের বাড়িতেই খোঁজ খোঁজ। আর আমরাও একটানা দু’সপ্তাহ এদিক-ওদিক কাটিয়ে পয়সা-কড়ি ফুরিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম। মেয়ে : তোমার বাবা মা কিছু বলে নি? পুরুষ : বাবা নাকি বলেছিলেন, আমাকে ত্যাজ্যপুত্র করবেন। কিন্তু যেই আমরা দু’জন একসঙ্গে কদমবুসি করে ফেললাম ব্যাস সব ঠা-া। মেয়ে : বেশ মজা তো। পুরুষ : শুধু কি তাই। যেই বাবা শুনলেন, এই বিয়েতে মাত্র পঞ্চাশ টাকা খরচ হয়েছে। বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। ছেলে : তোমার বাড়িতে এ নিয়ে আপত্তি উঠেনি? মহিলা : বাবা মা নাকি বলেছিলেন, অমন মেয়ের গলায় দড়ি দিয়ে মরা উচিত। কিন্তু আমরা যখন কদমবুসি করলাম তখন সেকি দোয়া খয়রাতের ঘটা। বাবার কতো যে খরচ বেঁচে গেলো সেই কথা বলে মা খুশিতে কেঁদেই ফেললেন। নির্দেশক এতোক্ষণ রাগে অস্থিরতা প্রকাশ করছিলো। হঠাৎ উত্তেজিতভাবে উঠে দাঁড়ায়। একটুক্ষণ তাকায় দুই টেবিলের দিকে। তারপর খট খট করে বেরিয়ে যায়। (নির্দেশকের এই এ্যাকশনের সময় দুই টেবিলের কুশীলবরা ফ্রিজ হয়ে থাকবে।) মেয়ে : আমিও বলেছিলাম, আমাকে বিয়ে করে তারপর পালিয়ে যেতে। কিন্তু তুমি সেটা করলে না। পুরুষ : তুমি ওর মতো কাজ করিয়ে নিলেই পারতে। মেয়ে : (দীর্ঘশ্বাস ফেলে) আমার কতো দিনের সাধ অমন একটা এ্যাডভেঞ্চার করবো কিন্তু... পুরুষ : এ্যাডভেঞ্চার বিয়ে দুটো তো এক সঙ্গে হয় না। মহিলা : ওকে নিয়ে তো পালিয়ে যেতে পারো। ছেলে : ওর ও বায়নাক্কা তোমারই মতো, বিয়ে তারপরে পালানো। মহিলা : মেয়েরা যতোই এদিক-ওদিক করুক না কেন পালানোর ব্যাপারে হিসেবটা অন্যরমই কষে থাকে। ছেলে : অথচ আমার কতোদিনের ইচ্ছে, অমন একটা এ্যাডভেঞ্চার করবো, আজো হলো না। পুরুষ : এ্যাডভেঞ্চার করতে চাইলে চলো না হয় এখন পালিয়ে যাই। মেয়ে : ওকে ডিভোর্স করো তাহলে। পুরুষ : ডিভোর্স! অনেক টাকার কাবিন! ছেলে : এখন পালানো যায় না। মহিলা : মানে আমাকে ইলোপ করবে? তারপর কি হবে! ছেলে : তারপর ফিরে আসবে। এমন তো... মহিলা : তাহলে মোহরানার এক পয়সাও আমি পাবো না, বুঝলে। পুরুষ : অনেক দিন পরে দেখা হয়ে খুব ভালো লাগলো। মেয়ে : আমারও। হৃদয়টা বড়ো হালকা হয়ে গেল। পুরুষ : মাঝে মাঝে টেলিফোন করতে পারো। ছেলে : তোমার হাতটা একটু ধরতে দেবে। মহিলা : আমি তো এখন পরস্ত্রী। ছেলে : তাতে কি হয়েছে। আমাদের সোসাইটিতে এসব... মহিলা : তা সে না হয় পরে হবে। ছেলে : ও। ইচ্ছে হলে খোঁজ-খবর নিতে পারো। মহিলা : তুমিও পারো। পুরুষ : তোমার হাতে একটু হাত রাখবো। মেয়ে : তা তুমি তো এখন পর পুরুষ। পুরুষ : তাতে কি হয়েছে বরং... মেয়ে : তা প্রথম কিছু দিন তোমার ফেইথফুল থাকা উচিৎ। ছেলে : আগের মতো পার্টিতে আসতে চাইলে জানিও। মহিলা : পার্টি আমাদেরও আছে। ছেলে : ও চলি। এখন বড়ো লাগলো। মহিলা : আমারও। পুরুষ : নাটক কি শুরু হয়নি তোমাদের। মেয়ে : এখুনি হবে। পুরুষ : ও। যাই তাহলে। (দুই টেবিলে চারজন উঠে দাঁড়ায়। ছেলে ও পুরুষ নিজ নিজ টেবিলের দিকে যেতে যেতে মুখোমুখি হয়।) ছেলে : হ্যালো। পুরুষ : হ্যালো। দু’জনে হাত মেলায়। তারপর নিজ নিজ আসনে গিয়ে বসে। সামান্য নীরবতা। ছেলে : (নিজের ভেতরের অস্থিরতা কাটাবার জন্যই যেন) অনেকদিন পর বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে দেখা হলে বেশ ভালো লাগে তাই না। মেয়ে : (সেও নিজেকে সহজ করতে চায়) যেমন ভালো লাগে তেমনি খারাপও লাগে। ছেলে : তোমার চোখে যেন এখনো ঘোর লেগে আছে। মেয়ে : মনে হয় তোমারও কাটেনি। ছেলে : তা কাটেনি তবে কিনা... ছেলের কথা শেষ হবার আগেই নির্দেশক প্রবেশ করে এবং ছেলেকে যথাস্থানে দেখে। অতঃপর পূর্ব-উত্তেজনা সহকারেই ছেলে ও মেয়ের দিকে এগিয়ে যায়। কাঞ্চু : নির্দেশক এ্যাক্টরদের টেবিলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। নির্দেশক : (ধমক দিয়ে ) কাঞ্চু? কাঞ্চু : আমি ঘোষকের, মানে তথ্যমন্ত্রীর কাজ করে দিচ্ছি। নির্দেশক : (ছেলে ও মেয়েকে) তোমাদের কাজ-কর্মে, আচরণে আমি ক্ষেপে গেছি। মেয়ে : ছি ছি তা কেন। নির্দেশক : তোমরা আমাকে ডোবাবে, পথে বসাবে। ছেলে : আপনি নির্দেশক আপনার হুকুম ছাড়া... নির্দেশক : থামো। এতোক্ষণ তো নিজেদের কাজই সেরে নিলে। মেয়ে : (আদুরে গলায়) এবার তাহলে আপনারটা। ছেলে : (কণ্ঠে কাঠিন্য) এবারে কি আপনি শেষ হুঁশিায়ারি উচ্চারণ করবেন। নির্দেশক : দরকার হলে নিশ্চয়ই করবো। ছেলে : তা করুন। (একটু বিগলিতভাবে) তবে কিনা, আমাদের দিয়েই তো আপনার প্লান, আইডিয়া, আর ওই যে... কৃতিত্ব, এ সবই সফল করবেন। অতএব শেষে আবার মাফও করে দেবেন। নির্দেশক : ওসব মন ভোলানো কথা ছেড়ে দিয়ে আমার কথার জবাব দাও। ছেলে : বলুন। নির্দেশক : নাটকের শেষ কি মনে আছে। ছেলে : (মেয়েকে) মনে আছে? মেয়ে : আমরা দু’জনে ঝগড়া-টগড়া করবো তারপর... ছেলে : মনে পড়েছে। আপনি ঘাবড়াবেন না, আমরা ম্যানেজ করে নেবো। নির্দেশক : ম্যানেজ? ছেলে : (বিগলিত হাসিতে) ওটা তো আপনার কাছেই শিখেছি। স্বল্প নীরবতা। নির্দেশক ফিরে যেয়ে নিজ আসনে বসে। কাঞ্চু : নির্দেশক ফিরে এসে বসে পড়ে। নির্দেশক : কাঞ্চু ! কাঞ্চু : আমি ঘোষক মাত্র। নির্দেশকের কাজকর্ম বয়ান করছি। দর্শকের কাছে আমি তাকে মহান করে তুলছি (নির্দেশক হাঁচি দেয়) নির্দেশক হাচি দিয়েছে। নির্দেশক : ইডিয়ট। কাঞ্চু : কিন্তু আমি ক্যাশ ম্যানেজমেন্ট করছি। নির্দেশক : আমি কি তোমাদের নীরব থাকতে বলেছি? কাঞ্চু : সাইলেন্স খুব ইমপট্যান্ট। মেয়ে : (স্বল্প নীরবতার পর) আমাদের ফুচকা-টুচকা কিন্তু এখনো এলো না। ছেলে : ওয়েটার। ওয়েটার : (নেপথ্যে) আরেকটু ওয়েট করতে হবে স্যার। (ছেলে সিগারেট ধরায়।) মেয়ে : কি ভাবছো? ছেলে : কি নিয়ে ভাবা যায়, তাই ভাবছি। মেয়ে : (হেসে, আদুরে গলায়) বলো না। ছেলে : চলো, আমরা পালিয়ে যাই। মেয়ে : পালাবো? ছেলে : হ্যাঁ নিশ্চয়ই। মেয়ে : আমি ভদ্রঘরের মেয়ে। ছেলে : আমিও ভদ্রঘরের ছেলে। মেয়ে : আমাদের ফ্যামিলি আধুনিক বলে সম্মানিত গর্বিত। ছেলে : আমাদেরও তাই। মেয়ে : আমাদের সোসাইটির মেয়েরা এক সঙ্গে একশো একটা ছেলের সাথে শুধু ফান কেন আরো অনেক কিছু করতে পারে, বেড়াতে যেতে পারে, কিন্তু কারো সাথে পালাতে পারে না। ছেলে : (এ্যাশট্রেতে জোরে সিগারেট গুঁজে দেয়) অবশ্যই পারে। আমার এবং তোমার সোসাইটিতে সেইটেই গৌরবজনক। মেয়ে : হ্যাঁ পারে। কিন্তু বিয়ের জন্য নয়। সে সব হলো... প্লেজার ট্রিপ। তুমিও করছো। ছেলে : তুমি আমার সঙ্গে যাওনি। মেয়ে : সে বিয়ের কথা বলেনি। ছেলে : আমিও তাকে বিয়ের কথা বলিনি। মেয়ে : তাহলে? এবারে কেন? ছেলে : আমি মহৎ হতে চাই। মহৎ হবার জন্য আর কোন পথ আমাদের সোসাইটির তো জানা নেই। মেয়ে : ইন দ্যাট কেস, জর্জ হ্যারিসন হয়ে যাও। গলায় গীটার ঝুলিয়ে গান গাইতে গাইতে নতুন পথ খুঁজে নাও গে। আমি এখন যেতে চাই। (উঠে দাঁড়ায়।) মহিলা : আমি আর ও ঠিক একই ধরনের কথাই বলেছিলাম। পুরুষ : আমি আর ও আমরা দু’জনেও তাই। নির্দেশক : (মহিলা ও পুরুষের দিকে দ্রুত এগিয়ে এসে ) আচ্ছা, আপনাদের বুঝি খুব ইচ্ছে নাটকে অভিনয় করা। মহিলা : মোটেই না। পুরুষ : কেন? নির্দেশক : (চাপা ক্রোধে) নাটক চলছে। খুব সিরিয়াস সিচুয়েশন। আর আপনারা খুব ফুর্তিতে নিজেদের গপ্পো বয়ান করে চলেছেন। আমার নাটকের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছেন। মহিলা : (হাতে ঘড়ি দেখে) এখনো অনেক দেরি আছে। (বলেই ফিক করে হেসে ওঠে। পুরুষ, ছেলে, মেয়েও হাসে।) নির্দেশক : আপনারা নাটকের উপযুক্ত দর্শক নন। কাঞ্চু এরপর থেকে ‘প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত’ নোটিশ ঝুলিয়ে দিবি, বুঝলি। (নিজ আসনে ফিরে যায়।) কাঞ্চু : তেমন দিন যদি আর না আসে। (খিক খিক করে হাসে।) নির্দেশক : (ছেলে ও মেয়েকে) গো অন। মেয়ে : (একটু চুপ থেকে) কোথায় নিয়ে যাবে? ছেলে : (উঠে দাঁড়ায়) যেখানে সুনীল আকাশের গায়ে সবুজ পাহাড় হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। যার নিচে দিগন্ত বিস্তারী সমুদ্র গভীর শান্ততায় ঢেউ হয়ে দুলতে থাকে, সেখানে। মহিলা : (পুরুষকে) এই, ও কিন্তু আমাকেও এসব বলেছিলো। মেয়ে : সেখানে শুধু তুমি আর আমি। ছেলে : যেখানে নেই হিংস্র জন্তুর চেয়েও শাণিত নখর মানুষের কোলাহল। পুরুষ : (মহিলাকে) সাতরাঙা পরীদের কথা ও আমাকেও বলেছিলো। একই ডায়ালগ যে আর কতজনকে শোনাবে। মহিলা : একই ডায়ালগ আমিও যেমন অনেককে শুনিয়েছি, তুমিও তেমনি, সবাই তাই করে। এখন চুপ করো তো। নির্দেশক : ওহ আবারও! মেয়ে : কিন্তু এখানে যদি কাজীর অফিস না থাকো। ছেলে : নাই থাকলো আমি আর তুমি থাকবো। থাকবে চিরবসন্ত। মেয়ে : কিন্তু আমার যে ভয় লাগে। ছেলে : কেন? মেয়ে : আমার দাদী না বসন্তে মারা গিয়েছিলো। ছেলে : আর ভয় নেই, কোন ভয় নেই। সেখানে যে শুধু থাকবে ফুলেল সৌরভ আর পাখিদের কুজন। মেয়ে : চলো যাই। ছেলে : (আবেগায়িত হয়ে বলতে বলতে মেয়ের কাছে চলে আসে) যাবে, সত্যি তুমি যাবে। .... আমার জানো আমার কতোদিনের সাধ, পৃথ¦ীরাজের মতো আমার সংযুক্তাকে নিয়ে পালিয়ে যাবো। সারা রাজ্যজুড়ে কি যে গৌরবময় কেলেঙ্কারি হবে। মেয়ে : ( যেন ভাবের ঘোরে চলতে চলতে সম্মুখ মঞ্চে নেমে আসে) আমারো তাই সাধ, কতোদিনের সাধ।... আমার সন্তান হবে পুত্রসন্তান রাজপুত্র। ছেলে : (মেয়ের সংলাপের সঙ্গে সেও মেয়েকে অনুসরণ করে তার পাশে দাঁড়ায়) যদি না হয়, যদি আমি দিতে না পারি তাহলে... তাহলে, ওগো রানী রাতের অন্ধকারে কোন মায়ের কোল থেকে সদ্যোজাত পুত্রসন্তানকে আমি... আমি... আমি হাইজ্যাক করে নিয়ে এসে দেবো তোমাকে। একটা ইতিহাস হয়ে যাবো আমরা। শুষ্ক বক তোমার মরুদ্যান হয়ে যাবে। মহান পীর সাহেবদের আশীর্বাদে আমরা হয়ে যাবো জেনুইন পিতামাতা। (শেষ বাক্যটি বলতে বলতে হাঁটু গেড়ে বসে মেয়ের হাত ধরে।) কাঞ্চু : (ঘোষণা দেয়ার মতো) উহার জন্য গাউছে পীর আবু আলি মিরধার দোয়া খয়রাত লাগিবে। নির্দেশক : ( ধমক দিয়ে) কাঞ্চু! মেয়ে : আহ কি শান্তি। ছেলে : ( বলতে বলতে মেয়েকে আলিঙ্গন করেই ছেড়ে দিয়ে তার হাত ধরে।) ওহ মাই লাভ। ( তারা দু’জনে হাত ধরাধরি করে ঘুরতে থাকে।) নির্দেশক : হোয়াট? এগেইন? (ছুটে যেয়ে ছেলে ও মেয়েকে আলাদা করে দেয়।) ছেলে : এটা কিন্তু ঠিক হলো না। মেয়ে : হ্যাঁ ঠিক হলো না। নির্দেশক : ঠিক বেঠিক, এ্যাঁ! নিজেদের জায়গায় গিয়ে বসো। ( তারা দাঁড়িয়েই থাকে) আই সে গো। কাঞ্চু : আবু সীনটা খুব মজার ছিলো রে। ছেলে ও মেয়ে তাদের আসনে ফিরে যায়। যাবার পথে নির্দেশকের রাগান্বিত চোখে তাকায়। একই সময়ে নির্দেশকও তার আসনে যেয়ে বসে। ছেলে : (কিছুক্ষণ চুপ থেকে) চল যাই তাহলে। আর দেরি নয়। মেয়ে : কিন্তু বিয়েটা না সেরে গেলে... ছেলে : সে তো হবে ওখানে পালানোর পরে। মেয়ে : না হলে যে আমার কলঙ্ক হবে। ওখানের পাখিরা, ওখানের পশুরা, গাছপালা, আকাশ পাহাড় সমুদ্র সবাই যে আমার কলঙ্কগীতি গাইবে। আমি সইতে পারবো না। আমি কলঙ্কিনী হবো না। ছেলে : ওরাও প্রথমে পালিয়ে গিয়েছিলো... মেয়ে : না, ওরা প্রথমে কাজীর অফিসে... ছেলে : তার মানে তুমি আমাকে বিশ্বাস করতে চাইছো না। মেয়ে : ওটুকু অবিশ্বাসের সুতো মেয়েদের হাতে রাখতে হয়। ছেলে : তোমার ওই সুতো-ফুতো আমি ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলবো। মেয়ে : (তাচ্ছিল্ল ভরা হাসিতে) অতো সহজ নয়। ছেলে : দেখতে চাও! এই দ্যাখো... (বলেই মেয়ের হাতব্যাগ হ্যাঁচকা টান দিয়ে তুলে নেয়।) নির্দেশক : (সঙ্গে সঙ্গে) স্টপ, স্টপ ইট।... এ সব কি করছো তোমরা? ছেলে : কেন আপনাকে তো বলেই ছি আমাদের নিজস্ব চরিত্রই আমরা করে যাবো। মেয়ে : এতো সুন্দর ইমপ্রো কখনো ভাবতে পেরেছিলেন? নির্দেশক : আমার নাটকের ঘটনায় সঙ্ঘাতের কারণ তোমাদের নিজস্ব প্রবলেম নয়, বুঝতে পেরেছো? মেয়ে : তাহলে আমাদের প্রবলেম মিটিয়ে তারপর না হয়... নির্দেশক : আমি নাটক বন্ধ করে দেবো। ছেলে : রাগ করছেন কেন? আপনি নিজের দিকটাই দেখতে চাইছেন, অন্যের সমস্যাও বিবেচনা করতে হয়। নির্দেশক : আগে আমারটা কেবল আমারটাই। তোমাদেরটা গোল্লায় যাক, আমার কিচ্ছু যায় আসে না। কাঞ্চু : আবু (নির্দেশক তার দিকে তাকায়) শোন, ওদের অভিনয়ের কাজ ওদেরই করতে দে। নির্দেশক : কী? কাঞ্চু : হ্যাঁ ওদেরকেই তোর নাটক তৈরি করতে দে। না হলে... ওরা তোর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে পারে। (ছেলে ও মেয়েকে) তোমরা, তাই না? ছেলে : (বিভ্রান্ত হয়ে ) না,... মানে... ব্যাপারটা... কাঞ্চু : (মাথা ঝাঁকিয়ে) তাই হবে। তোমরা তাই হবে। তোমরা তাই হবে। নির্দেশক : কী? বিদ্রোহ? বিপ্লব? আমার বিরুদ্ধে? (হো হো করে হাসতে থাকে) ফুহ। কাঞ্চু : (নির্দেশককে ব্যঙ্গ করে Ñ) হ্যা হ্যা! ফুহ। মেয়ে : আপনার ঝগড়া যেন কি নিয়ে। নির্দেশক : ঝগড়া নয় সঙ্ঘাত। তোমাদের ভেতরে সিনেমা দেখা নিয়ে। ছেলে : সিনেমা! নির্দেশক : হ্যাঁ, ওই প্রসঙ্গেই তোমাদের সংলাপ, এ্যাকশন সব। ছেলে : সিনেমা নিয়ে ঝগড়া-ঝাঁটি বড়ো হাস্যকর। আপনি এমন তুচ্ছ ব্যাপার নিয়ে উত্তেজিত হবেন... কাঞ্চু : তুচ্ছ ব্যাপারটাই ও ভালো বোঝে, সিরিয়াস ব্যাপার স্যাপার... নির্দেশক : কাঞ্চু! মেয়ে : তারচেয়ে আমাদের নিজেদের ব্যাপার অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তরুণ-তরুণী নারী-পুরুষের চিরন্তন সমস্যা। কাঞ্চু : আবু, ওদেরটাই জমে উঠছিলো রে। নির্দেশক : কিন্তু নাটক আমার। ওদের নয়। আমার নাটক নষ্ট করার অধিকার ওদের নেই। কাঞ্চু : তুই তো লিখিসই এখনো। আসলে তো লিখতেই জানিস না। নির্দেশক : তবু আমারই আইডিয়া। আমি ট্র্যাজেডি চাই। কাঞ্চু : সে আবার কি! নির্দেশক : শেষটা হবে করুণ, বেদনাদায়ক। বুকটা ব্যথার ভারে সুনসান করে উঠবে। গলার কাছে কি যেন একটা যন্ত্রণা দলা পাঁকিয়ে উঠবে। কান্না কান্না হয়ে যাবে কণ্ঠ। চোখের ভেতরে খড়কুটোর মতো কি যেন একটা খোঁচা দিতে থাকবে, অশ্রু গড়াতে যেয়ে মুক্তা হয়ে যাবে। ( কাঞ্চু হাততালি দিয়ে উঠে) কাঞ্চু! কাঞ্চু : তাহলে দ্যাখ ওরাই কি করে। নির্দেশক : (কাঞ্চুর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে) বেশ (ছেলে ও মেয়েকে ) কিন্তু মনে রেখো আমি ট্র্যাজেডি চাই। ছেলে : তাইতো হবে। (মহিলাকে দেখিয়ে) ওই যে মেয়েটি সব ঘুছিয়ে আনলাম তারপর হলো না। মহিলা : সে দোষ আমার ছিলো না। মেয়ে : আামরও তাই (পুরুষকে দেখিয়ে) ওই যে ছেলেটি ওর বেলাতেও তাই হয়েছিলো। পুরুষ : আমাকে আবার জড়াচ্ছো কেন? মেয়ে : তোমাকে জড়ালাম? পুরুষ : জড়াচ্ছোই তো। নিশ্চয়ই তোমার উদ্দেশ্য ভালো নয়। মেয়ে : কি যা তা বলছো। মহিলা : যা তা আবার কী? নিশ্চয়ই আপনার অন্য মতলব আছে। ছেলে : আগ বাড়িয়ে ঝগড়া করতে এসেছো কেন? তোমারও তাহলে অন্য মতলব আছে। মহিলা : আমার আবার কী? ছেলে : আমার এবারকার প্রেমেরও বারোটা বাজুকÑ আমি কি বুঝি না। পুরুষ : (মেয়েকে) তুমি ঠিক আমার সুখের সংসারে আগুন লাগাতে চাওÑ আমি কি বুঝি না। নির্দেশক : (বলতে বলতে উঠে দাঁড়ায়) আপনারা আবার এর ভেতর নাক গলাচ্ছেন কেন? পুরুষ : আপনার নায়িকাই তো আমার রেফারেন্স দিলো। মহিলা : আপনার নায়কই তো আমার কথা বললো। নির্দেশক : (পুরুষ মহিলার দিকে এগিয়ে যায়।) তো কি হয়েছে। অডিয়েন্সের সঙ্গে ইন্টিমেসি করাটা ইনটিমেট থিয়েটারের জন্যে... পুরুষ : (ক্ষিপ্ত হয়ে দাঁড়ায়) ইন্টিমেসি! আমাদের সঙ্গে? কি ভেবেছেন আপনি? নির্দেশক : আফটার অল, এটা তো নাটক ছাড়া কিছু নয়। পুরুষ : নাটক না ছাই! রসিকতার জায়গা পান না। নির্দেশক : কি বললেন? মহিলা : (উঠে দাঁড়ায়) আপনি চোখ রাঙাচ্ছেন কেন? নির্দেশক : (পুরুষ ও মহিলার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে) আমার নাটক সম্পর্কে এতো বড়ো কথাÑ ছাই, রসিকতা! কি বোঝেন নাটকের, এ্যাঁ? আপনাদের মতো অশিক্ষিত আনকালচার্ডদের জন্যে... নির্দেশকের সঙ্গে পুরুষ মহিলার বচসা শুরু হতেই ছেলে, মেয়ে, ওয়েটার ও মিউজিশিয়ান এগিয়ে আসে এবং বচসা উপভোগ করে। কাঞ্চু এগিয়ে নির্দেশক ও পুরুষ-মহিলার কাছে চলে আসে। নির্দেশককে শান্ত করার চেষ্টা করে, কিন্তু নির্দেশক তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। কাঞ্চু ক্ষুণœ মনে নিজের আসনে ফিরে যায়। পুরুষ : কি! দর্শকদের অপমান! অসহ্য! নির্দেশক : ভাবে আমার দর্শক, দর্শক বলেই ছেড়ে দেবো ভেবেছেন। মহিলা : অভদ্র, চাষা। চলো, দরকার নেই নাটক দেখার। নির্দেশক : যান না কেন? কে ঠেকাচ্ছে আপনাদের? পুরুষ : চলো। এখানে আর এক সেকেন্ডও না। যতো সব মূর্খদের বাহাদুরি। (তারা সবেগে বেরিয়ে যায় মহিলা তার হাত ব্যাগ নেয় না।) নির্দেশক : এ্যাঁ, নিজেরা খুব বুদ্ধিজীবী! এজন্যই তো.. কাঞ্চু : এই আবু, দর্শক হলো খদ্দের আর খদ্দের হলো লক্ষ্মী। তুই ওদের চটালি। নির্দেশক : যেতে দে বয়েই গেলো। এমন অনেক আসবে। নিজ আসনে যাবার জন্য ঘুরে দাঁড়াতেই ছেলে, মেয়ে ও মিউজিশিয়ানকে দেখতে পায় ও উত্তেজিত হয়ে ওঠে। মিউজিশিয়ান দ্রুত তার আসনে যেয়ে বসে। ছেলে : শুনুন ঘাবড়াবেন না, ট্র্যাজেডিই হবে। কাঞ্চু : না হলে তখন তুলকালাম বাঁধিয়ে দিস, নাটক বন্ধ করে দিস। নির্দেশক ক্ষুব্ধ মনে যেয়ে বসে পড়ে। ছেলেও মেয়েও তাদের আসনে যেয়ে বসে। মহিলা হন্তদন্ত হয়ে ফিরে আসে তার হাত ব্যাগ নেবার জন্য। ব্যাগটি নিয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে মুখ ঝামটা দিয়ে বেরিয়ে যায়। মেয়েও পাল্টা মুখ ঝামটা দেয়। ছেলে : (কিছুক্ষণ পরে) তাহলে? মেয়ে : তাহলে? ছেলে : চলো যাই। মেয়ে : কোথায়? ছেলে : সিনেমায়। মেয়ে : না। ছেলে : পার্টিতে। মেয়ে : না। ছেলে : তাহলে আমাদের সেই পাহাড় সমুদ্র আকাশের ত্রিবেনী সঙ্গমে। মেয়ে : আমাদের স্বপ্নের দেশ। ছেলে : চলো যাই। (উঠতে যায়) মেয়ে : প্রথমে অন্য কোন খানে। ছেলে : না। মেয়ে : তাহলে আমিও না। ছেলে : কেন নয়? মেয়ে : কেন আবার বলেইছি তো। (ছেলে ভীষণ উত্তেজিতভাবে উঠে চলে যেতে উদ্যত হয়) কোথায় যাচ্ছো? (মেয়েও উঠে দাঁড়ায়) ছেলে : (যেতে যেতে) আত্মহত্যা, আমি সুইসাইড করবো। সে পুরুষ ও মহিলার জন্য নির্দিষ্ট টেবিলের কাছাকাছি চলে আসে। নির্দেশক রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাদের নিরীক্ষণ করেছে। মেয়ে : (ছেলেকে অনুসরণ করে) তাহলে আমিও করবো। ছেলে : ( থেমে যায়) ঠিক! মেয়ে : (ছেলের মুখোমুখি) ঠিক। তবে কি না... ছেলে : তবে আবার কী? মেয়ে : কিভাবে করা হবে সেটাও ঠিক করা দরকার। ছেলে : (প্রস্তাবটা তার ভালো লাগে) তাইতো। তা... আমরা দু’জন একসঙ্গে পাশাপাশি রেললাইনের ওপর শুয়ে পড়বো। মেয়ে : কিন্তু ট্রেন যদি অন্য লাইনে চলে যায়। ছেলে : হুঁ। ছেলেটি আরো পন্থা বের করার জন্য ভাবতে থাকে চিন্তামগ্নভাবে সে পুরুষ মহিলার একটি চেয়ারে বসে পড়ে। মেয়েটিও বসে। ছেলে : (দাঁড়ায়, হাত ধরে) ইয়েস, পেয়েছি। চলো দু’জনে লেক-এর পানিতে ঝাঁপ দিই গে। মেয়ে : (বসেই) কিন্তু, আমি যে সাঁতার জানিনে। ছেলে : কেন, তুমি তো প্রায়ই সুইমিং পুল-এ যাও। মেয়ে : বা রে সে তো আমি যাই সানবার্ন আর বিকিনিগুলো দেখানোর জন্যেÑ সে তো তুমি জানোই। ছেলে : হুঁ। (হেসে)... তাহলে তুমি একটা কিছু বের করো। মেয়ে : আমার মাথায় যে কিছু আসছে না। ছেলে : (একটু ভেবে নিয়ে) তাহলে দু’জনে একসঙ্গে বিষ খাবো। মেয়ে : তুমি আগে খাবে। ছেলে : কেন? মেয়ে : ভেজাল আছে কিনা, দেখে নিতে হবে না! (দু’জনেই ভাবনামগ্ন) নির্দেশক রাগ দমন করে এগিয়ে আসে তাদের দিকে। নির্দেশক : (শান্ত কণ্ঠে) তোমরা এখানে বসে পড়েছো! ছেলে : উঁ। মেয়ে : উঁ। ছেলে : বিরক্ত করবেন না তো! নির্দেশক : বিরক্ত! ছেলে : দেখুন, এখন মাথার ঠিক নেই।.... নির্দেশক : মাথা! তোমাদের মাথার কোন দাম নেই আমার কাছে। খালি কান দুটোই ঢের, বুঝলে। মেয়ে : ক্যান।... নির্দেশক : হ্যাঁ আমার মাথা দিয়ে যা বেরোয় তাই ওই কান দিয়ে শুনবে। আর তাই করে যাবেÑ আন্ডারস্ট্যান্ড। মেয়ে : কিন্তু আমাদের ব্যাপার নিয়ে তো আমরা মাথা ঘামাচ্ছি। নির্দেশক : সে কাজটা আমার মাথাই করে দেবে। শোনো। অনেক নরম হয়ে তোমাদের সঙ্গে কথা বলেছি। অনেক কনসেশন দিয়েছি। কমপ্রোমাইজ করেছি। আমার দিলটা খুবই নরম, কিন্তু কঠিন হতে দেরি হয় না। আর হলে.... থেমে যায়। (স্বামী সিগ্রেট ধরায়। স্বামীর জুতোর নিচে সিগরেট মাড়িয়ে দেয়। নো স্মোকিং। (ছেলে ও মেয়েকে) যাও, নিজেদের জায়গায় যাও। নির্দেশক : তাদের দিকে কঠিন দৃষ্টিতে একটুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নিজের আসনে যেয়ে বসে। ছেলে ও মেয়ে হতভম্ব হয়ে পরস্পরের দিকে তাকায়। বিষণœ মনে উঠে পড়ে ধীরে ধীরে হেঁটে যায় নিজেদের টেবিলের দিকে। কিন্তু নির্দেশকের নির্দেশ অমান্য করে বসে পড়ে প্ল্যাটফর্মের ওপর। তারা গভীরভাবে ভাবনায় মগ্ন। স্বামী উঠে দাঁড়ায়। স্ত্রী : কোথায় যাচ্ছো! স্বামী : ঢের হয়েছে, চলো। স্ত্রী : কেন, কি হলো? নির্দেশক হাতের ইশারায় তাদের চুপ থাকতে বলে। স্বামী ভালো লাগছে না। স্ত্রী : তোমাার ভালো লাগছে না? আমার তো বেশ মজাই লাগছে। নিদের্শক : আপনার ভালো লাগছে না? (ছেলে ও মেয়ে স্বামী দিকে তাকায়।) ছেলে : (মেয়েকে) এই আামদের ব্যাপার-স্যাপার নাকি ওনার ভালো লাগছে না। স্বামী : ভালো লাগার কি আছে এর মধ্যে? মেয়ে : তাইতো শুনছি। নির্দেশক : কেন এই যে... অভিনব... এক্সপেরিমেন্টাল প্রোডাকশন। আজকের যুগের তরুণ-তরুণীদের জীবনের .... স্বামী : রেস্টেুরেন্টে বসের প্রেম করা ছাড়া তরুণ- তরুণীদের আর কোন কাজ নেই? (ছেলের দিকে এগিয়ে যায়) এই ছেলে, কি করা হয় তোমার? ছেলে : (নির্দেশককে) জবাব দেবো? কাঞ্চু : দিয়ে দাও হে দিয়ে দাও। (নির্দেশককে) কি বলিস। নির্দেশক : (কাঞ্চুর দিকে তাকিয়ে, একটু চিন্তা করে) ইয়েস, এ্যাপ্রুভড। দিতে পারো। ছেলে : (কাঁধ ঝাঁকিয়ে) খাই দাই ঘুমাই, ফুর্তি করি। জীবনকে উপভোগ করি। স্বামী : লেখপড়া? ছেলে : ইউনিভার্সিটিতে নাম আছে। পরীক্ষা হয় না বলে বেরোতে পারছি না। স্বামী : বাবা কি করেন? ছেলে : শুনেছি ব্যবসা করে। কি ব্যবসা তো বলতে পারবো না তবে .. স্ত্রী : (উঠে এসে) তুমি এটা কি শুরু করলে? স্বামী : আহ রাখো তো। ( স্ত্রী ক্ষুব্ধ হয়ে ফিরে যায়) ‘তবে’Ñ কি বলছিলে? ছেলে : বাবার কাছে অনেক ধরনের লোকজন আসে Ñ পজিশন, আপেজিশান সব রকমের বড়ো বড়ো অফিসার। ঞযবু ধৎব ৎবধষষু মৎবধঃ, ুড়ঁ শহড়.ি শুধু যে এদেশের লোক তা কিন্তু নয়, ইউরোপ আমেরিকা থেকেও লোক আসে। তিনিও যান। বেশ ঘন ঘনই যান। গু ভধঃযবৎ রং ধহ রহঃবৎহধঃরড়হধষ সধহ. মৎবধঃ. আমি চৎড়ঁফ, বুঝলেন। .... তবে কিনা একটা ঘটনায় আমি ভম্বহত হয়ে গিয়েছিলাম। স্
×