ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আকিল জামান ইনু

এলন মাস্ক ॥ বিজ্ঞানের মানবিক মুখ

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ১৪ অক্টোবর ২০১৬

এলন মাস্ক ॥ বিজ্ঞানের মানবিক মুখ

(৭ অক্টোবরের পর) ১৯৯৫ এ মাস্ক ও তার ভাই কিমবাল জিপ-২ নামে একটি সফটওয়্যার কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন পিতার কাছ থেকে পাওয়া ২৪ হাজার ডলার নিয়ে। তার কোম্পানি সংবাদপত্র প্রকাশনা শিল্পের জন্য ‘সিটি গাইড’ নামে সফটওয়্যার উদ্ভাবন ও বাজারজাত করে। মাস্ক নিউইয়র্ক টাইমস ও শিকাগো ট্রিবিউনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন। ১৯৯৯ ফেব্রুয়ারিতে ‘কমপ্যাক’ জিপ-২ কিনে নেয় নগদ ৩০৭ মিলিয়ন ডলার এবং ৩৪ মিলিয়ন স্টক শেয়ার এক বিনিময়ে। সেই বিক্রি থেকে মাস্কের অর্জন ৭% অর্থাৎ ২২ মিলিয়ন ডলার । জিপ-২ বিক্রীত প্রাপ্ত অর্থ থেকে ১০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তিনি স্থাপন করেন তার নতুন প্রকল্প, অনলাইনে আর্থিক সেবা প্রদান ও ইমেইল পেমেন্ট কোম্পানির নাম এক্স কম। এক বছর পরে এক্স কম, কনফিলিটি নামক আরেক কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত হয় যারা ‘পে পল’ নামে অর্থ স্থানান্তর সেবা দিয়ে আসছিল। ২০০১ সালে ওই কোম্পানি দুটো বিলুপ্ত করে ‘পে পল’ নামে আবির্ভূত হয়। কোম্পানি পরিচালনায় নানা মতভেদ উপস্থিত হওয়া তারা ই-বের কাছে পে পল বিক্রি করেন ১.৫ বিলিয়ন ডলারে। মাস্ক তার ১১.৭% শেয়ারের বিনিময়ে লাভ করেন ১৬৫ মিলিয়ন ডলার। পে পল বিক্রির প্রাপ্ত অর্থের শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে এলেন মাস্ক পা রাখেন এক নতুন ক্ষেত্রে। মাস্ক তখন প্রভাবিত আইজাক অসিমভ ফাউন্ডেশন সিরিজে। সৌরজগতে মানবজাতির বসতি স্থাপনের কল্পনায় বিভোর মাস্ক বলেন, ‘মানব জাতির টিকে থাকা যখন হুমকির সম্মুখীন তখন মাল্টিপ্ল্যানেটারি লাইফ হতে পারে বিকল্প সমাধান। কিন্তু পথটা অত সহজ ছিল না। অক্টোবর ২০০১ এ মাস্ক প্রথম মস্কো সফর করেন মহাকাশ প্রযুক্তি নিয়ে কর্মরত কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনার জন্য কিন্তু এ বিষয়ে নডিশ চিহ্নিত মাস্ককে শূন্য হাতে আমেরিকা ফিরতে হয়। অদম্য মাস্ক ২০০২ এ আবার তার দল নিয়ে রাশিয়া সফর করেন এবার সঙ্গে নেন মার্ক গ্রিফিনকে যিনি সিআইএও নাসার প্রকল্পে কাজ করেছেন এবং একজন স্যাটেলাইটও স্পেস ক্রাফট নির্মাতা। মাস্ক ‘কসমোট্রাস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন। কসমোট্রাস তাকে প্রতিটি রকেটের জন্য ৮ মিলিয়ন ডলার মূল্য প্রস্তাব করে যা অনেক বেশি মনে হওয়ায় মাস্ক তাৎক্ষণিক বৈঠক থেকে বেরিয়ে পরবর্তী ফ্লাইটে দেশে ফেরেন। মাস্ক হিসাব করে দেখেন একটি রকেট তৈরির উপাদানসমূহের মূল্য তার বাজারমূল্যের মাত্র ৩%। তার বিশ্বাস জন্মে সফটওয়্যার ইঞ্জি এর দুটো সূত্র ব্যবহার করে রকেট নির্মাণ ব্যয় ১০ ভাগে নামিয়ে আনা যায় তার পর লাভের পরিমাণ থাকে ৭০%। এ বিশ্বাস থেকে মহাবিশ্বে মানবসভ্যতা বিস্তারের এক দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন- স্পেস এক্স’ কোম্পানি জুন ২০০২ এর। পেল পল বিক্রি থেকে পাওয়া অর্থের ১০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেন কোম্পানিতে। তার পরের গল্প সাফল্যের রকেট প্রকৌশল বদলে দেয়ার। কোম্পানির প্রথম দুটো আকাশযান ফ্যালকন ১ ও ফ্যালকন-৯। প্রথমে স্পেস ক্রাফট ‘ড্রাগন’। সেপ্টেম্বর ২০০৮ ফ্যালকন-১ ব্যক্তি উদ্যোগে প্রথম তরল জ্বালানি ব্যবহার করে পৃথিবীর কক্ষে একটি স্যাটেলাইট স্থাপন করে। মে ২৫, ২০১২ স্পেস এক্স ড্রাগনের একটি যান আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে সফলভাবে অবতরণ করে প্রথম বাণিজ্যিক কোম্পানি হিসেবে ইতিহাস গড়ে। ২০০৩ এ স্পেস এক্স কোম্পানি মহাকাশে মালামাল পরিবহনের বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষর করে। ডিসেম্বর ২৩ নাসার সঙ্গে যে বাণিজ্যিক চুক্তির আর্থিক মূল্যমান ১.৬ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে যায় যখন ২০১৫ এর ২২ ডিসেম্বর ফ্যালকন সফলভাবে মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে অবতরণ করে। কারিগরি জটিলতার বিবরণ এড়িয়েও বলা পৃথিবীর কক্ষে প্রেরিত কোন রকেটের এই সফল অবতরণ রকেট পুনর্ব্যবহারের সম্ভাবনাকে নিশ্চিত করে যা মহাকাশ ভ্রমণ ব্যয় কমিয়ে আনবে, মহাকাশে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে মানুষের জন্য যেটি এলেন মাস্কের স্বপ্ন। এ ছাড়াও তার সাগরকেন্দ্রিক প্লাটফর্মে অবতরণ করতে সক্ষম হয়েছে ইতোমধ্যে। মাস্কের আরেকটি বড় সাফল্য তার কোম্পানি এখন সারা পৃথিবীতে রকেট মোটর তৈরির সর্ববৃহৎ ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। মহাকাশ বিজ্ঞানে এলেন মাস্কের সাফল্য ব্যর্থতা নিয়ে শেষ কথা বলার সময় এখনও আসেনি। কিন্তু এ কথা বলাই যায় শত বছর পরের প্রজন্ম তাকে মহাকাশ ভ্রমণ ও মহাবিশ্বে বসতি স্থাপনের কেবল একজন স্বপ্নদ্রষ্টা নয় বাস্তব প্রচেষ্টার নায়ক হিসেবেই গণ্য করবে- যিনি ২০১১ সালে স্বপ্ন দেখেছিলেন ২০৪০ এ মঙ্গলে ৮০ হাজার মানুষের বসতি স্থাপনের আর মহাকাশ ভ্রমণ ব্যয় সাধারণ মানুষের আয়ত্তের মধ্যে নিয়ে আসতে নিজ অর্থ বিনিয়োগে ঝুঁকি নিয়েছেনÑ অনিশ্চিত সম্ভাবনার আকাশে। চলবে...
×