ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিজ্ঞানে নোবেল ২০১৬

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ১৪ অক্টোবর ২০১৬

বিজ্ঞানে নোবেল ২০১৬

এ বছর পদার্থে নোবেল পেয়েছেন তিন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী। রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস মঙ্গলবার এই পুরস্কারের জন্য ডেভিড জে ফাউলেস, এফ ডানকেন হোলডেইন ও জে মাইকেল হসট্রলিজের নাম ঘোষণা করে। তত্ত্বের মধ্য দিয়ে পদার্থের টপোলজিক্যাল দশার দিশা উন্মোচন অবদান রাখার কারণে তাদের এ সম্মানে ভূষিত করা হয়। নোবেল কমিটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই তিন বিজ্ঞানী ‘এক অজানা জগতের দুয়ার উন্মোচন’ করেছেন, যেখানে পদার্থ বিচিত্র দশায় বদলে যেতে পারে। এই গবেষণায় তারা সুপার কন্ডাক্টর, সুপার ফ্লুইড ও পালতা ম্যাগনেটিক ফিল্মের আচরণ বুঝতে উচ্চতর গাণিতিক পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। তাদের এই পথ দেখানো গবেষণার ফলে ইলেক্ট্রনিক্সে নতুন সম্ভাবনার আশা তৈরি হয়েছে। গত শতকের সত্তরের দশকের শুরুতে সুপার কন্ডাক্টর (খুবই নিম্ন তাপমাত্রায় যেসব বস্তু বিদ্যুত পরিবহন করে) বা সুপার ফ্লুইডের সরু স্তরে বিদ্যুত পরিবহন সম্ভব না বলে চলমান তত্ত্বের বিপরীতে কাজ করেন হসট্রলিজ ও ফাইলেস। গবেষণায় খুবই নিম্ন তাপমাত্রায় সুপার কন্ডাক্টরের সরু স্তরেও ইলেকট্রনের প্রবাহ বা বিদ্যুত পরিবহন সম্ভব দেখিয়ে তারা তার কৌশল ও অবস্থার পরিবর্তন (উচ্চ তাপমাত্রায় পরিবাহিতা বিলোপ) ব্যাখ্যা করেন। হসট্রলিজ ও ফাইলেস মসৃণ আকৃতির সমতলীয় বা সরু স্তরের ভেতরের বস্তুকে দ্বিমাত্রিক বিবেচনা করে টপোলজির মাধ্যমে পদার্থের অবস্থা বা দশার পরিবর্তনগুলো দেখান। টপোলজি হচ্ছে জ্যামিতির এমন একটি আধুনিক শাখা বা রূপ, যার সাহায্যে বস্তুর বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করা যায়। টপোলজি অনুযায়ী, কোন বস্তুর প্রসারণ বা মোচড় বা আকৃতির পরিবর্তন হলেও সেই বস্তুর বৈশিষ্ট্যের কোন পরিবর্তন হয় না। বস্তুর বৈশিষ্ট্য কেবল কতগুলো পূর্ণ ধাপেই পরিবর্তিত হবে। এক্ষেত্রে বস্তুকে ছিঁড়ে ফেলা বা খণ্ডিত করা হলে তার বৈশিষ্ট্যও পরিবর্তিত হয়ে যাবে। পরবর্তীতে হোলডেইন টপোলজির ধারণার মাধ্যমে আরও সরু, যাকে প্রায় একমাত্রিক ধরা যেতে পারে, এমন বস্তুর বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করেন। নতুন প্রজন্মের ইলেকট্রনিক্স ও সুপারকন্ডাক্টর বা ভবিষ্যতে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ক্ষেত্রে টপোলজিক্যাল বস্তু ব্যবহারযোগ্য হতে পারে এখন আশা জেগেছে। এই টপোলজিক্যাল অবস্থার পরিবর্তনের তাত্ত্বিক আবিষ্কার করাই এবার তিন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী এ পুরস্কার পেলেন। ডেভিড ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক। ডানকান হ্যালডেন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক। মাইকেল হসট্রলিজের বর্তমানে তিনি ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত। আগামী ১০ ডিসেম্বর স্টকহোমে তিন বিজ্ঞানীর হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হবে। পুরস্কারের ৮০ লাখ সুইডিশ ক্রোনারের অর্ধেক পাবেন থুলেস। বাকিটা হোলডেইন ও হসট্রলিজ ভাগ করে নেবেন। অন্যদিকে মলিকিউলার মেশিন বা ন্যানোমেশিন উদ্ভাবনের গবেষণার স্বীকৃতি হিসেবে তিন বিজ্ঞানী রসায়নের নোবেল জিতে নিয়েছেন। রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্স বুধবার এ পুরস্কারের জন্য ফ্রান্সের জ্যঁ পিয়েরে সোভাজ, যুক্তরাজ্যের ফ্রেজার স্টুডার্ট এবং নেদারল্যান্ডসের বার্নার্ড এল ফেরিঙ্গার নাম ঘোষণা করে। তাদের বিশ্বের ক্ষুদ্রতম যন্ত্রের উদ্ভাবক হিসেবে বর্ণনা করে নোবেল কমিটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তাদের গবেষণা রসায়ন শাস্ত্রকে নতুন মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে। আগামী ১০ ডিসেম্বর স্টকহোমে তিন বিজ্ঞানীর হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হবে। পুরস্কারের ৮০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার তারা ভাগ করে নেবেন। জীবন্ত কোষ কী করে তার ক্ষতিগ্রস্ত ডিএনএ মেরামত করে, আর কেমন করে জিনে থাকা তথ্যের সুরক্ষা দেওয়া হয়- সেই প্রশ্নের ব্যাখ্যা দিয়ে গত বছর রসায়নের নোবেল পান সুইডেনের টোমাস লিন্ডল, যুক্তরাষ্ট্রের পল মডরিচ ও তুরস্কের আজিজ সানজার। চিকিৎসাশাস্ত্রে চলতি বছর নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন জাপানের বিজ্ঞানী ইয়োশিনোরি ওশুমি। নোবেল কমিটির বরাত দিয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, জীবদেহের কোষ নিয়ে এবং কোষের বিকার নিয়ে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ইয়োশিনোরিকে এ সম্মান দেয়া হয়েছে। ইয়োশিনোরি ওশুমি বিভিন্ন শারীরিক প্রক্রিয়ায় ‘অটোফ্যাগি’র গুরুত্ব বোঝার উপায়ের ব্যাপারে আলোচনা করেছেন, যা বিষয়টি নিয়ে জানার বিভিন্ন পথ খুলে দিয়েছে। ইয়োশিনোরির মূল কাজ অটোফ্যাগি নিয়ে। জীববিজ্ঞানের ভাষায় অটোফ্যাগি মানে হচ্ছে অকেজো জিন আপনা-আপনি ধ্বংস হওয়া। বিবৃতিতে বলা হয়, অটোফ্যাগি বিকৃতি রোগ তৈরি করতে পারে। অটোফ্যাগি প্রক্রিয়া ক্যান্সার ও স্নায়ুর বিভিন্ন রোগের কারণ হতে পারে। ইয়োশিনোরি ওশুমি ১৯৪৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি জাপানের ফুকুওয়াকায় জন্মগ্রহণ করেন। টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর শেষ করে নিউইয়র্কের রকফেলার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকে পোস্ট ডক্টরাল শেষ করে ফিরে যান নিজ দেশে। ১৯৭৭ সালে টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা সহকারী হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮৬ সালে ওই প্রতিষ্ঠানে লেকচারার হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮৮ সালেই তিনি সহযোগী অধ্যাপক হয়ে যান। ২০০৪ সালে তিনি জাপানের হায়ামার দ্য গ্র্যাজুয়েট ইউনিভার্সিটি ফর এ্যাডভান্সড স্টাডিজে অধ্যাপক পদে যোগ দেন।
×