ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ফুটবলপ্রেমীদের বিক্ষোভ অব্যাহত

প্রকাশিত: ০৬:২২, ১৪ অক্টোবর ২০১৬

ফুটবলপ্রেমীদের বিক্ষোভ অব্যাহত

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ একটা সময় ছিল, যখন বছরের পর বছর প্রিমিয়ার ফুটবল লীগ অনুষ্ঠিত হতো না। তাছাড়া ফুটবল লীগ আয়োজনের জন্য বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামও পাওয়া যাচ্ছিল না। তখন লীগের জন্য, মাঠের জন্য ফুটবলাররা রাজপথে নেমে আন্দোলন করেছেন। তখনও বাংলাদেশ নেপাল-ভুটান-মালদ্বীপের মতো দলগুলোকে গোনায় ধরতো না, পাত্তাই দিতো না। অথচ আজ বেশ কয়েক বছর ধরেই প্রিমিয়ার ফুটবল লীগ নিয়মিত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিগত সময়ের ফুটবলারদের চেয়ে এখনকার ফুটবলাররা কয়েকগুণ বেশি পারিশ্রমিক পাচ্ছেন। সারা বছরই এখন ফুটবল হচ্ছে। তারপরও বাংলাদেশ দল এখন নেপাল-মালদ্বীপ-ভুটানের মতো দুর্বল দলগুলোর সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারে না। সর্বশেষ গত ১০ অক্টোবর এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের প্লে-অফ পর্বে ভুটানের কাছে ৩-১ গোলে হেরে যায়। বাংলাদেশের ফুটবলের এই অধঃপতনের দায়ভার কোনভাবেই এড়াতে পারে না বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। তাদের অদক্ষতা, দুর্নীতি এবং অদূরদর্শিতার কারণেই মূলত দেশের ফুটবলের এই অবস্থা। ঢাকার মাঠেই কোন দর্শক নেই। এখন প্রমাণিত হচ্ছে ঢাকার বাইরেও ফুটবলে দর্শক হয় না। প্রমাণ সিলেটে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের খেলায় দর্শকখরা। ভুটানের বিরুদ্ধে এতটাই বাজে খেলেছেন মামুনুলরা, তাদের সম্পর্কে একটাই কথা বলার আছে। এই মানের ফুটবলাররা ঘরোয়া আসরে লীগে কিভাবে ৫৫-৬০ লাখ টাকা পারিশ্রমিক পান? তারা কি এই পারিশ্রমিক পাওয়ার যোগ্য? যে দুর্বল ভুটানকে বাংলাদেশ দল এককালে বলে-কয়ে হারাতো, সেই ভুটানের কাছেই এবার তারা হারলো জঘন্যভাবে! ভুটান-চ্যালেঞ্জে হেরে আরও অধঃগতিতে চলে গেল বাংলাদেশের ফুটবল। এই হারের ফলে আগামী ২০১৯ সাল পর্যন্ত ফিফা ও এএফসির কোন ম্যাচ খেলতে পারবে না বাংলাদেশ। এ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া সংগঠন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেড। তারা একটি বিবৃতিতে লিখেছে, দেশের জনপ্রিয় খেলা ফুটবল বর্তমানে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। দেশের ফুটবলের বর্তমান চরম দুর্দশায় মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব অত্যন্ত উদ্বিগ্ন, ব্যথিত ও হতাশ। দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা বাফুফের বর্তমান কমিটি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের ফুটবলে বিপর্যয় শুরু হয়, যা ধারাবাহিকভাবে অব্যাহত রয়েছে। ভুটানের কাছে এই হার অনেক লজ্জাজনক। শুধু তাই নয়, ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা ফিফার র‌্যাঙ্কিংয়ের ইতিহাসে সর্বনিম্ন অবস্থানে বাংলাদেশ। কাজী মোঃ সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে বাফুফের বর্তমান কমিটি দেশের ফুটবলকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করার সব প্রক্রিয়াই সম্পন্ন করেছে। স্থানীয় পর্যায়ের ফুটবলের প্রতি তাদের চরম অবজ্ঞা ও অবহেলার বিষয়টি ইতোমধ্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে ক্লাবগুলোর ওপর। ফলে দেশের জনপ্রিয় ফুটবল ক্লাবগুলোও এখন খেলোয়াড় সঙ্কটে পড়েছে এবং ভালোমানের খেলোয়াড় না থাকায় দর্শকরাও ক্রমেই ফুটবলের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। যার প্রমাণ দর্শকশূন্য স্টেডিয়াম। অথচ বাফুফে প্রতিবছর ফুটবল উন্নয়নের নামে কোটি কোটি টাকা অপরিকল্পিতভাবে খরচ করছে, যে খরচ নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগও রয়েছে ক্রীড়াঙ্গনে। দেশের ফুটবলকে ধ্বংস করার জন্য সম্পূর্ণরূপে দায়ী বাফুফের বর্তমান অযোগ্য ও অদক্ষ নেতৃত্ব। তাদের আর দায়িত্বে থাকার কোন নৈতিক অধিকার নেই। তাদের অযোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে কোনভাবেই আর বাংলাদেশের ফুটবলকে বাঁচানো সম্ভব নয়। এ অবস্থায় মোহামেডান ক্লাব দেশের ফুটবলের বৃহত্তর স্বার্থে ব্যর্থতার সব দায়ভার মাথায় নিয়ে বাফুফের বর্তমান কমিটির সব কর্মকর্তার অবিলম্বে পদত্যাগ দাবি করছে। একই সঙ্গে দেশের ফুটবলকে বাঁচানোর জন্য ফুটবলপ্রেমী সকলকে ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছে এবং দেশের ফুটবলের স্বার্থরক্ষায় এ ব্যাপারে সরকারের শীর্ষ মহলের করণীয় হস্তক্ষেপ কামনা করছে। ফুটবল সাপোর্টার্স ফোরামের বিক্ষোভ ॥ বাফুফের বর্তমান কমিটির পদত্যাগ দাবি করে বৃহস্পতিবার বিকেলে বাফুফে ভবনের সামনে দেশের ফুটবল সমর্থকদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ ফুটবল সাপোর্টার্স ফোরাম’ এক বিক্ষোভ সমাবেশ করে। এই বিক্ষোভ সমাবেশে তারা কিছু দাবি মিডিয়ার সামনে তুলে ধরে, সেগুলো হচ্ছে ঃ বাফুফের ওপর প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ করা, বাফুফে সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিনসহ পুরো কমিটির পদত্যাগ করা, বাফুফেকর্তাদের বিরুদ্ধে পূর্বে আনীত দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত, বিচার দাবি ও দোষীদের শাস্তি কামনা, তৃণমূল পর্যায় থেকে ফুটবলার তুলে আনার জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন, ফুটবলের জন্য বার্ষিক ক্যালেন্ডার প্রণয়ন এবং বন্ধ থাকা বিভিন্ন জাতীয় পর্যায়ের বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্ট আবারও চালু করা, বন্ধ হওয়া ফুটবল একাডেমি চালু করা, অদক্ষ-অযোগ্য ও দেশপ্রেমহীন ফুটবলারদের শাস্তির আওতায় আনা, জাতীয় দলে বেতন কাঠামো চালু করা, খেলোয়াড়দের বীমা চালু করা, ক্লাবগুলোকে পেশাদার হিসেবে গড়ে তোলা ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ক্লাবগুলোর স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া, মহানগরী লীগ কমিটি ও ঢাকা পাইওনিয়ার লীগ কমিটিকে বাফুফে থেকে আলাদা করা, জাতীয় দলের ম্যানেজার হিসেবে ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত নয় এমন কাউকে নিয়োগ করা, দল গঠনের জন্য পেশাদার নির্বাচক কমিটির প্রচলন করা, দক্ষ খেলোয়াড় খুঁজতে পেশাদার স্কাউট নিয়োগ করা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে নিয়মিত লীগ আয়োজন করা, ডিএসএ-ডিএফএ’র মধ্যে সমন্বয় সাধন করা, স্কুল-কলেজ-বিশ^বিদ্যালয় পর্যায়ে নিয়মিত টুর্নামেন্ট করা, রেফারিদের বকেয়া পরিশোধ করা ও তাদের মানোন্নয়ন করা ... প্রভৃতি।
×