ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উইকেট শিকারে সবার ওপরে মাশরাফি

প্রকাশিত: ০৬:২১, ১৪ অক্টোবর ২০১৬

উইকেট শিকারে সবার ওপরে মাশরাফি

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে এমন অনুভূতি বেশ অচেনা মাশরাফি বিন মর্তুজার জন্য। কারণ দলের অধিনায়ক হিসেবে হার দেখেছেন খুব কম, আর দ্বিপাক্ষিক সিরিজ হার ক্যাপ্টেন্সির ক্যারিয়ারে এ নিয়ে সবেমাত্র দ্বিতীয়বার। টানা ৬ ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর অবশেষে বাংলাদেশ দল একটি সিরিজ পরাজয় দেখল। চট্টগ্রামে বুধবার ইংল্যান্ড তৃতীয় ওয়ানডেতে ৪ উইকেটে জিতে সিরিজটাও ২-১ ব্যবধানে জিতে নিয়েছে। তবে এই ম্যাচেও বল হাতে ঠিকই উজ্জ্বল ছিলেন মাশরাফি। অন্য বোলাররা ব্যর্থ হলেও মাশরাফি ৫১ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন। এর ফলে ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বকালের সেরা বোলার হয়ে গেছেন তিনি। ১৬৬ ম্যাচের ক্যারিয়ারে এখন মাশরাফির উইকেট ২১৬। এতদিন তার সামনে ছিলেন সতীর্থ সাকিব আল হাসান। তাকে পেছনে ফেলে এখন সবার ওপরে মাশরাফি। সাকিবের উইকেট ১৬৩ ম্যাচে ২১৫টি। একই দিনে অনন্য এক অর্জনে নিজেকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন বাঁহাতি ওপেনার তামিম ইকবাল। প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ৫ হাজার রান পূর্ণ করেছেন ওয়ানডেতে। নতুন এ মাইলফলক পেরোতে তিনি ১৫৯ ওয়ানডে খেলেছেন। এদিন তার ব্যাট থেকে আসে ৪৫ রান। সঠিক লাইন-লেন্থে বল ফেলা, ব্যাটসম্যানদের উইকেটে আটকে রাখার ক্ষমতা যেকোন বোলারকেই সাফল্য এনে দেয়। টানা দুটি ওয়ানডে সিরিজে যেন সেটারই প্রমাণ দিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে গত মাসে অনুষ্ঠিত তিন ম্যাচের সিরিজে দারুণ কিপটে বোলিং করেছেন, কিন্তু উইকেট নিতে পেরেছিলেন মাত্র ৪টি। কিন্তু ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠলেন ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’। বিশেষ করে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে একাই যেভাবে ইংলিশদের হেনস্তা করে পরাজয়ের গ্লানি উপহার দিয়েছেন, সেটা বিশ্ব ক্রিকেট দীর্ঘদিন মনে না রাখলেও রেকর্ডের পাতায় থেকে যাবে। আর ইংলিশরা সহজে ভুলতে পারবে না মাশরাফির সেই আগুনে রূপ, যে আগুনের আবির্ভাবে পুড়ে ভস্ম হতে হয়েছে। ব্যাট হাতে ২৯ বলে ৪৪ রানের টর্নেডো ইনিংস, এরপর বল হাতে মাত্র ২৯ রান দিয়ে তিনি শিকার করেন ৪ উইকেট। একাই ধসিয়ে দেন ইংল্যান্ডের শক্ত ব্যাটিং লাইনআপ। আর এভাবেই তিনি কাছাকাছি চলে আসেন সাকিবের। আফগানদের বিরুদ্ধে সিরিজেই মাশরাফিকে বেশ কিছুটা পেছনে ফেলে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বাঁহাতি আব্দুর রাজ্জাককে ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন সাকিব। মাশরাফির তখন ২০৮ আর সাকিবের ২১২! তবে ইংল্যান্ড সিরিজে নৈপুণ্যের উলট-পালট হয়ে গেছে। এ সিরিজে মাশরাফি নিলেন ৮ উইকেট আর সাকিব ৩ উইকেট। ফলে এবার সাকিবকে টপকে গেলেন নড়াইল এক্সপ্রেস! এখন তিনিই বাংলাদেশের সেরা ওয়ানডে বোলার। ৩০.০৭ গড়ে ২১৬ উইকেট নিয়েছেন মাশরাফি; আর সাকিব ২৭.৯৩ গড়ে ২১৫ উইকেট নিয়েছেন। এতদিন তিন ফরমেটেই বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক উইকেটের মালিক ছিলেন সাকিব। এবার শ্রেষ্ঠত্ব খর্ব হলো ওয়ানডেতে। দুই সতীর্থের মধ্যে সেরা হওয়ার লড়াইটা বেশ জমজমাটই হয়ে উঠেছে। দারুণ এ নৈপুণ্যে আইসিসি ওয়ানডে বোলিং র‌্যাঙ্কিংয়ে ৯ নম্বরে উঠে এসেছেন মাশরাফি। ওয়ানডে অলরাউন্ডারের শীর্ষস্থান অটুট রাখা সাকিব বোলিংয়ে ২ ধাপ পিছিয়ে এখন ৬ নম্বরে। অবশ্য বাংলাদেশের জার্সিতে ১৬৪ ম্যাচ খেলে ২৯.৭১ গড়ে ২১৫ উইকেট নিয়ে এখনও সাকিবের সমান মাশরাফি। এশিয়া একাদশের হয়ে ২০০৭ সালের জুনে আফ্রিকা একাদশের বিরুদ্ধে দুই ম্যাচ খেলে ১ উইকেট নিয়েছিলেন। ওই ম্যাচ দুটিও আন্তর্জাতিক ওয়ানডের মর্যাদা পেয়েছে। তাই সার্বিকভাবে ক্যারিয়ারে সর্বাধিক উইকেট শিকারে সাকিবকে পেছনেই ফেলেছেন মাশরাফি। ইংলিশদের বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচে তামিমের প্রয়োজন ছিল মাত্র ৩৮ রানের; প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে মর্যাদার ৫ হাজারি রানের ক্লাবে যোগ দেয়ার জন্য। এই ক্লাবে তামিমের আগে বিশ্বের ৭৭ ব্যাটসম্যান যোগ দিয়েছেন। ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে ৭৮তম ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি এ ক্লাবের সদস্য হয়েছেন ৬৮ বলে ৫ চারে ৪৫ রান করার মাধ্যমে। গত ১ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১১ রান করে সর্বশেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে এই মাইলফলক স্পর্শ করেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক ইয়ন মরগান। তিনি ১৫৮ ইনিংস খেলেছিলেন, সমান ১৫৮ ইনিংস খেলেই মাইলফলকটা ছুঁলেন তামিম। মাত্র ১০১ ইনিংসে ৫ হাজার রান করে দ্রুততম দক্ষিণ আফ্রিকার হাশিম আমলা। তবে তামিমের পেছনে আছেন কুমার সাঙ্গাকারা (১৬২ ইনিংস), বীরেন্দর শেবাগ (১৬৬ ইনিংস), তিলকারতেœ দিলশান (১৭০), স্টিফেন ফ্লেমিং (১৮০), মাহেলা জয়াবর্ধনে (১৮২) সনাথ জয়াসুরিয়া (১৮৩) এবং ব্রেন্ডন ম্যাককুলামের (১৯১) মতো ওয়ানডে ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানরা। তামিমের চেয়ে কম ইনিংস ব্যাট করে এই ক্লাবের সদস্য হয়েছেন মোট ৪১ জন। বাংলাদেশের পক্ষে ৪ হাজার রান করে তামিমের পেছনেই আছেন সাকিব (৪৫৬৬ রান) ও মুশফিক (৪০৭৬ রান)। যদিও সাকিব প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে গত বিশ্বকাপে আফগানদের বিরুদ্ধে ৪ হাজার রান পূর্ণ করেছিলেন। কিন্তু তাকে পেছনে ফেললেন তামিম। কারণ মাত্র ২১ ইনিংসেই এই ১ হাজার রান করেছেন তিনি। ব্যাটিং র‌্যাঙ্কিংয়েও তাই একধাপ এগিয়ে এখন ২২ নম্বরে তিনি। তামিমের রান এখন ১৫৯ ম্যাচে ৩২.৩০ গড়ে ৫০০৭! অথচ ক্যারিয়ারের প্রথম ১ হাজার রান করতে তার লেগেছিল ৩৭ ইনিংস। ক্রমেই ব্যাট হাতে আরও ধারাবাহিক আর দুরন্ত হয়ে উঠছেন বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা এই ব্যাটসম্যান। টি২০ ও টেস্টেও তিনি বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক রানের মালিক।
×