ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশালে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচী

তদন্ত শেষ না হতেই ফের দুর্নীতি

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ১৪ অক্টোবর ২০১৬

তদন্ত শেষ না হতেই  ফের দুর্নীতি

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমানের বিরুদ্ধে মৌলিক প্রশিক্ষণ কোর্সের ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের তদন্তের শেষ হতে না হতেই ফের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এবার ৮৯২ জন বেকার শিক্ষিত যুবক ও যুবতীর কাছ থেকে স্ট্যাম্প ক্রয় ও ভাতা প্রদানে অফিস খরচের নামে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে তিন লাখ এক হাজার ৬৪০ টাকা। ইতোমধ্যে চার দফায় দুর্নীতির তদন্ত হয়েছে। ঘটনাটি জেলার গৌরনদী উপজেলার। ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচী প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা জানান, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়াধীন যুব উন্নয়ন অধিদফতরের উদ্যোগে শিক্ষিত বেকার যুবক ও যুব মহিলাদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচীর আওতায় গৌরনদী উপজেলায় ৯১৯ জন শিক্ষিত বেকার যুবক ও যুব মহিলাকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। তাদের মধ্যে ৮৯২ জনকে প্রশিক্ষণ শেষে বিভিন্ন দফতর ও প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থানে যুক্ত করা হয়েছে। যুব উন্নয়ন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কর্মসংস্থানে যুক্ত হওয়া বেকার যুব মহিলা ও যুবকদের প্রতিমাসে ভাতার টাকা পরিশোধ করার কথা থাকলেও বরাদ্দ সাপেক্ষে প্রদান করা হয়। ৮৯২ জনের সকলকেই জুন মাসে ভাতা পরিশোধ করা হয়েছে। সর্বশেষ গত ২৬ সেপ্টেম্বর ৭৫০ জনকে জুলাই ও আগস্ট মাসের ভাতা পরিশোধ করা হয়েছে। বরাদ্দ না থাকায় ১৪২ জনকে জুলাই ও আগস্ট মাসের ভাতা দেয়া হয়নি। সুবিধাভোগীরা জানান, প্রকল্পের শর্ত অনুযায়ী প্রত্যেককেই তিনশত টাকার নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে হলফনামা প্রদান বাধ্যতামূলক। যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান প্রত্যেকের কাছ থেকে স্ট্যাম্প ক্রয়বাবদ চারশত টাকা আদায় করেছেন। স্ট্যাম্প বিক্রেতারা জানান, তারা তিনশত টাকার স্ট্যাম্প তিনশত ত্রিশ টাকা বিক্রি করেন। সে হিসেবে ওই কর্মকর্তা ৬২ হাজার ৪৪০ টাকা অতিরিক্ত আদায় করেছেন। এছাড়া জুন মাসে ভাতা প্রদানের সময় ৮৯২ জনের কাছ থেকে অফিস খরচ বাবদ ৮৯ হাজার দুইশত টাকা ও জুলাই, আগস্ট মাসের ভাতা প্রদানের সময় ৭৫০ জনের কাছ থেকে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা আদায় করে মোট ২ লাখ ৩৯ হাজার দুইশত টাকা আত্মসাত করেছেন। সুবিধাভোগী যুব নারী রুনা আকতার, পাপিয়া আকতার, হেপী খানম, যুবক হাবিবুর রহমানসহ একাধিক যুব নারী ও পুরুষেরা বলেন, ভাতা নেয়ার সময় অফিস খরচের নামে আমাদের কাছ থেকে একশত টাকা করে রাখা হয়েছে। এছাড়া স্ট্যাম্পের নামে আমাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয়। মোঃ মঞ্জুরুল আলম নামের এক যুবক বলেন, বর্তমানে আমি চাঁদশী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত আছি। আমার বাড়ির পাশে ধানডোবা কমিউনিটি সেন্টারে যেতে চাইলে সিদ্দিকুর রহমান আমার কাছে এক হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না দেয়ায় আমার বদলি হয়নি কিন্তু আমার দুই বন্ধু সিদ্দিকুর রহমানকে দুই হাজার টাকা দিয়ে তারা অন্যত্র চলে গেছে। খাদিজা আকতার, শাহনাজ পারভিন, সাইফুল ইসলাম বলেন, দায়িত্ব পালনের মাসিক প্রত্যয়নপত্র দেয়া সত্ত্বেও হাজিরায় অনুপস্থিতির ভয়ভীতি দেখিয়ে আমাদের কাছে টাকা দাবি করা হয়। দাবিকৃত টাকা না দিলে হয়রানি করা হচ্ছে। এ তথ্যের সত্যতা স্বীকার করে কয়েকজন প্রতিষ্ঠান প্রধান ও উপজেলার একাধিক কর্মকর্তারা জানান, তাদের অধীনে কর্মরত সুবিধাভোগীদের দায়িত্ব পালনের মাসিক প্রত্যয়নপত্র দেয়া হলেও যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা হাজিরা নিয়ে ঝামেলা করে থাকেন। অভিযোগের ব্যাপারে উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, অভিযোগের কোন সত্যতা নেই। তবে অফিসের নিম্নশ্রেণীর কর্মচারীরা কিছু রাখতে পারেন। যারা দায়িত্বে ফাঁকি দিয়ে থাকেন তারাই মিথ্যা অভিযোগ করেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। যুব উন্নয়ন অধিদফতরের একাধিক কর্মচারী জানান, কর্মকর্তার দুর্নীতির বিষয়টি বরিশাল উপ-পরিচালক দফতর তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছে কিন্তু তারা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে অফিসের গোপনীয়তা ফাঁস করার অপরাধে আমাদের বিরুদ্ধে শোকজ করেছে। এছাড়া একাধিক গোয়েন্দা সংস্থাও তদন্ত সম্পন্ন করেছে। তারা অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে বলেও একটি সূত্র জানিয়েছে। যুব উন্নয়ন অধিদফতরের বরিশালের উপ-পরিচালক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বিভাগীয় তদন্ত শেষ করে রিপোর্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠান হয়েছে। কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন। ন্যাশনাল সার্ভিসের প্রকল্প পরিচালক যুগ্মসচিব আবুল হাসান খান বলেন, অধিদপ্তরের প্রশাসন শাখাকে তদন্তপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়েছে। এটি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রকল্প, অনিয়ম দুর্নীতির ব্যাপারে জিরো টলারেন্স দেখান হবে। সেক্ষেত্রে তদন্ত রিপোর্ট পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন অভিযোগে মাঠ পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
×