ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মানসম্মত শিক্ষা

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ১৪ অক্টোবর ২০১৬

মানসম্মত শিক্ষা

উচ্চশিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য দেশে পর্যাপ্ত সংখ্যক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নিÑ এটা বাস্তবতা। ফলে এক পর্যায়ে দেশে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সূচনা হয় এবং কালে কালে তা বিপুল বিস্তার লাভ করে। এমনই বিস্তার যে ঢাকার একটি আবাসিক এলাকার প্রধান একটি সড়কে কয়েক শ’ গজ পর পর একেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেখা মেলে। এ নিয়ে রঙ্গ-পরিহাসও কম হয়নি। কথা হচ্ছে আমাদের সন্তানদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পথ করে দিতে হবে এবং সেই শিক্ষা হতে হবে অবশ্যই মানসম্মত। বেশিরভাগ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ও মান যে আশাব্যঞ্জক নয়, তা সুবিদিত। তবে সরকারী অর্থে পরিচালিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চিত্রও যে খুব একটা ভিন্ন নয়, সেটাও বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান আর আগের মতো নেই। আমাদের উচ্চশিক্ষার সামগ্রিক মান সম্পর্কে সচেতন মহলের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নতুন নয়। সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারক মহলও যে এ ব্যাপারে সচেতন তার অন্যতম প্রমাণ হলো তাদের পক্ষ থেকেও প্রায়ই উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়নের কথা বলা হয়। বিশ্বময় প্রতিযোগিতা তীব্র হতে তীব্রতর হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণের পাশাপাশি এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে আমাদের উচ্চশিক্ষার মান যে যথেষ্ট উন্নত করতে হবে তা নিয়েও দ্বিমত নেই। সম্প্রতি দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নজরদারি বৃদ্ধি ও উচ্চশিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে এ্যাক্রেডিটেশন (স্বীকৃত) কাউন্সিল আইন ২০১৬-এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। আইনটি চূড়ান্ত হলে দেশের সব সরকারী ও বেসরকারী উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এই কাউন্সিলের অনুমতি নিতে হবে। দেশের ৩৮টি পাবলিক ও ৯৬টি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়কেই কাউন্সিলের স্বীকৃতি পেতে হবে। কাউন্সিল প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম যাচাই করে এ বিষয়ে স্বীকৃতি দেবে। বিষয়টি ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে বলে আশা করা যায়। উল্লেখ্য, শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষা প্রদানকারী সরকারী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের মাননির্ণয় এবং তার ভিত্তিতে প্রতিবছর এগুলোর র‌্যাঙ্কিং নির্ধারণ করা ও উন্নয়নের পরামর্শ দান করা হবে। উপযুক্ত দায়িত্ব পালন করার জন্য যথাযথ ক্ষমতা ও দক্ষতাসম্পন্ন একটি এ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করা হবে।’ সনদ বাতিলের বিষয়ে আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, কোন বিশ্ববিদ্যালয় আইনের শর্ত ভাঙলে তাদের সনদ বাতিল হবে। এ্যাক্রেডিটেশন (স্বীকৃত) সনদ ছাড়া কোন প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞপ্তি বা তথ্য-নির্দেশিকা প্রকাশ করতে পারবে না। কোন সনদও দিতে পারবে না। কাউন্সিলের সদস্যরা কোন প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনকালে কোন তথ্য গোপন করা যাবে না। ব্যবস্থা নেয়া হবে ভুল তথ্য দিলেও। সনদ বাতিল হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান অবশ্য রিভিউ আবেদন করতে পারবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে একটি কমিটি গঠন করে আবেদনটি বিবেচনা করে দেখবে কাউন্সিল। বলাবাহুল্য, কাউন্সিল যথাযথভাবে কাজ করলে দেশে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে যেসব নেতিবাচক কথা শোনা যায় তা অনেকাংশে দূরীভূত হবে। পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হবেÑ এটা সাধারণভাবে আশা করা যায়। তবে মনে রাখতে হবে, শিক্ষা পরিকল্পনাকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন কৌশলের অংশ হিসেবে দেখার কোন বিকল্প নেই। কারণ, দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সবচেয়ে বড় চালিকাশক্তি হলো মানবসম্পদ উন্নয়ন। পাশাপাশি, উচ্চশিক্ষায় বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থীরা কতটুকু নিজেদের তুলে ধরতে পারবে তা নির্ভর করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে লেখাপড়ার মানের ওপর। জরুরী হচ্ছে মানসম্পন্ন উচ্চশিক্ষা, সেটি নিশ্চিত করতে হলে সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ গ্রহণের কোন বিকল্প নেই। প্রতিষ্ঠানের মান নিরূপণ বা তদারকি জরুরী বটে, তবে সবার আগে প্রয়োজন মানসম্মত প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এবং তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা।
×