ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

৩০ নবেম্বরের মধ্যে ট্রাকের অবৈধ বাম্পার, এ্যাঙ্গেল, হুক খুলে ফেলতে হবে

দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাসে প্রাইম মুভার ধর্মঘট পুরোপুরি প্রত্যাহার

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১৪ অক্টোবর ২০১৬

দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাসে প্রাইম মুভার ধর্মঘট পুরোপুরি প্রত্যাহার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাসে চট্টগ্রাম বন্দর গাড়ি প্রাইম মুভার মালিক-শ্রমিকরা (কন্টেনার পরিবহনের জন্য বিশেষ যান) তাদের সাময়িক স্থগিত রাখা ধর্মঘট পুরোপুরি প্রত্যাহার করেছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে মহাসড়কে মোটরযানের অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারকে নিয়ে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটির সভা হয়। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এই বৈঠক থেকে ধর্মঘট প্রত্যাহরের ঘোষণা দেন প্রাইম মুভার মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ছাড়াও অনুষ্ঠানে নৌ-মন্ত্রী শাজাহান খান, খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ, সড়ক পরিবহন সচিব এম এ এন সিদ্দিক, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির, সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহার, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, বিআরটিএ চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তা ও শ্রমিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কন্টেনার ও ভারি পণ্য পরিবহনকারী যান প্রাইম মুভার মালিক-শ্রমিকরা সাত দফা দাবিতে ধর্মঘট পালন করছিলেন। তবে গত ৩০ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) তারা দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাসে সাময়িক ধর্মঘট স্থগিত করেন। বৈঠকের পর মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক বলেন, সাত দফা দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাসে ধর্মঘট প্রত্যাহার করছি। এবার আশা করছি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হবে। সড়ক পরিবহনমন্ত্রী জানান, চার এক্সেল বা চৌদ্দ চাকা কন্টেনার বহনকারী দীর্ঘযান বা প্রাইম মুভারগুলো (সর্বোচ্চ ৩২ টন পর্যন্ত ওজন) পরিবহনে আইনগত কোন বাধা নেই। চার এক্সেলের প্রাইম মুভারে একটি অতিরিক্ত এক্সেল স্থাপন করে পাঁচ এক্সেলে রূপান্তরের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৪২ টন পর্যন্ত ওজন পরিবহন করতে পারবে। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত একটি এক্সেল বা চারটি চাকা সংযোজনে প্রাইম মুভার মালিকদের ছয় মাস সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। মন্ত্রী আরও জানান, খাদ্য এবং সার পরিবহনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ওজনসীমা এক্সেললোড নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে পুনঃনির্ধারণ করা হবে। এ লক্ষ্যে আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে খাদ্য মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করবে। তিনি বলেন, আগামী ৩০ নবেম্বরের মধ্যে যে সকল ট্রাকে অবৈধভাবে বাম্পার, এঙ্গেল, হুক স্থাপন করা হয়েছে তা খুলে ফেলতে হবে। মন্ত্রী আরও জানান, দুই এক্সেল বা ছয় চাকার পরিবহনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ওজনসীমা নির্ধারণে এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গার নেতৃত্বে একটি কমিটি কাজ করছে। শীঘ্রই কমিটি প্রতিবেদন জমা দেবে। প্রতিবেদনের সুপারিশের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। মন্ত্রী মহাসড়কের স্থায়িত্ব রক্ষায় যানবাহনের অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণে সরকারের উদ্যোগে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোকে অব্যাহত সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান। সভার শুরুতে সড়ক মহাসড়কে চলাচলকারী পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের পরিবহনের আকার ও ধরন, অতিরিক্ত ওজন, এক্সেল লোড বিষয়ক নীতিমালা, অতিরিক্ত ওজন পরিবহনে সড়কের ক্ষয়ক্ষতি, দুর্ঘটনা এবং পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের সড়কে চলাচলকারী পরিবহনের ওজনসীমা ইত্যাদি বিষয়ে সুপারিশমালাসহ একটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন বুয়েট অধ্যাপক ড. শামসুল হক। সংগঠনের সদস্য সচিব আবু বক্কর ছিদ্দিক সাংবাদিকদের বলেন, সাত দফা দাবি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছি। আজ বৃহস্পতিবার মিটিংয়ে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী, নৌমন্ত্রী, চট্টগ্রামের মেয়র, বিজিএমইএ’র সভাপতি- ওনারা এই সাত দফার সমাধান করে দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। সেজন্য ধর্মঘট কর্মসূচী প্রত্যাহার করে নিলাম। নির্ধারিত পরিমাণের অতিরিক্ত ওজন বহনে জরিমানার নিয়ম বাতিলসহ সাত দফা দাবিতে গত ২৬ সেপ্টেম্বর প্রাইম মুভার-ট্রেলার মালিক-শ্রমিকরা ধর্মঘটে যায়। তাদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপ এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন সব ধরনের যান চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেয়। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ধর্মঘট স্থগিত করে প্রাইম মুভার মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। মহাসড়কে পণ্যবাহী গাড়ির অতিরিক্ত চাপ কমাতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ গত ১৬ আগস্ট গাড়ি ভেদে পণ্য পরিবহনের ওজন নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। তাতে ১৪ চাকার প্রাইম মুভারকে সর্বোচ্চ ৩৩ টন পর্যন্ত মাল বহনের সীমা বেঁধে দেয়া হয়। প্রাইম মুভার-ট্রেলার মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের অভিযোগ, আকস্মিক এই সিদ্ধান্তের কারণে দাউদকান্দি মেঘনা-গোমতী সেতুতে তাদের যান আটকে জরিমানা করা হচ্ছিল। সেখানে তাদের মারধরও করা হয়। তারা বলছেন, কন্টেনারের ওজনের বিষয়ে তাদের কিছু করার না থাকলেও প্রাইম মুভারে ৩৩ টনের পর প্রতি টনের জন্য তাদের দুই হাজার টাকা করে জরিমানা গুনতে হচ্ছে।
×