ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গী শুভ ছিল রাবির শিবির ক্যাডার

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১৪ অক্টোবর ২০১৬

জঙ্গী শুভ ছিল রাবির শিবির ক্যাডার

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ টাঙ্গাইলে র‌্যাবের অভিযানে নিহত জঙ্গীদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ইংরেজী বিভাগের ছাত্র। তার নাম আহসান হাবিব ওরফে শুভ (২৪)। শুভ ২০১৪ সালের ৯ ডিসেম্বর রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে আকাশ আলী নামে এক পুলিশ সদস্যকে গুলি করে পালানোর চেষ্টা করেছিল। এ ঘটনায় ওই দিন শুভসহ হাসান আলী (২৭) নামে এক দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডারকে আটক করেছিল পুলিশ। এরপর জেল থেকে জামিন পেয়ে লাপাত্তা হয়ে যায় এবং শিবির ক্যাডার থেকে নব্য জঙ্গী হয়ে ওঠে শুভ। রাজশাহীর গোদাগাড়ী থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) মেহেদি হাসান জানান, ’১৪ সালের ৯ ডিসেম্বর বিকেলে রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কের কশাইপাড়া এলাকায় তিনি দু’জন কনস্টেবলকে সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেলের কাগজপত্র চেক করছিলেন। সন্ধ্যার একটু আগে শিবির ক্যাডার শুভ ও হাসান আলী একটি মোটরসাইকেলে রাজশাহীর দিকে যাচ্ছিল। মোটরসাইকেল চালাচ্ছিল শুভ। আর পেছনে বসেছিল হাসান। তাদের থামাতে সংকেত দেয় পুলিশ। কিন্তু তারা সংকেত অমান্য করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় কয়েকহাত সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ সদস্য আকাশ আলী তাদের মোটরসাইকেলের ওপর থেকেই ধরে ফেলার চেষ্টা করেন। এ সময় শুভ তার কোমর থেকে পিস্তল বের করে আকাশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। গুলিটি আকাশের পায়ের কিছু অংশ ভেদ করে চলে যায়। এ সময় পেছন থেকে আরেক পুলিশ সদস্য তাকে জাপটে ধরে। তাদের কাছ থেকে একটি পিস্তল, ৭ রাউন্ড গুলি ও দুটি ম্যাগজিন উদ্ধার করা হয়েছিল। এসআই মেহেদি আরও জানান, ওইদিন মোটরসাইকেলের পেছনে বসে থাকা হাসানের পায়ে অস্ত্রোপচার করা ছিল। এ কারণে সে পালাতে পারেনি। তাদের দু’জনকে আটক করে থানায় অস্ত্র আইনে একটি মামলা করা হয়। পরে তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়। হাসান আলী চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে গোলাপবাজার গ্রামের নাসির উদ্দীনের ছেলে। আর শুভ নওগাঁর রানীনগর উপজেলার রাজাপুর গ্রামের আলতাফ হোসেনের ছেলে। এই শুভসহ আরেক জঙ্গী গত শনিবার টাঙ্গাইলের কাগমারা মির্জামাঠ এলাকায় র‌্যাবের অভিযানে নিহত হয়। এই দুই জঙ্গী নিহত হওয়ার পর তাদের আস্তানা থেকে উদ্ধার হওয়া জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে র‌্যাব প্রথমে জানিয়েছিল, তাদের দু’জনের বাড়িই রাজশাহীর চারঘাট উপজেলায়। কিন্তু চারঘাটে তাদের কোন ঠিকানা পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে র‌্যাব জানায়, জঙ্গী আস্তানা থেকে উদ্ধার হওয়া জাতীয় পরিচয়পত্র দুটি ছিল ভুয়া। তারপর অনুসন্ধান করে র‌্যাব জানতে পারে এই দুই জঙ্গীর আসল ঠিকানা। জানা গেছে, নিহত জঙ্গী আহসান হাবিব শুভ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী বিভাগের ছাত্র ছিল। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে অস্ত্রসহ আটক হওয়ার সময় সে ¯œাতক তৃতীয় বর্ষে পড়াশোনা করত। আটক হওয়ার পর ২০১৫ সালের মে মাস পর্যন্ত রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী ছিল। পরে জামিনে মুক্ত হওয়ার পর থেকেই সে নিখোঁজ হয়ে যায়। ২০১৫ সালের ৭ জুলাই তার বাবা আলতাফ হোসেন রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। যার নম্বর ৩৬৫। বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি শাহাদত হোসেন খান বলেন, শুভকে খুঁজে পেতে বিভিন্ন স্থানে তার ছবিসহ বার্তা পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তার কোন হদিস মেলেনি। রাবির ইংরেজী বিভাগের সভাপতি মাসুদ আখতার বলেন, গণমাধ্যমে শুভর ছবি দেখে তারা নিশ্চিত হয়েছেন, এই শুভই তাদের নিখোঁজ শিক্ষার্থী। অস্ত্রসহ আটক হওয়ার পর শুভ জামিন পেলেও আর ক্যাম্পাসে ফেরেনি। তার পরিবারের লোকজন অনেক খুঁজেও তাকে পাননি। যোগাযোগ করা হলে নওগাঁর রানীনগর থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, শুভর বাবা একজন দলিল লেখক। শুভ নওগাঁর কেডি স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও নওগাঁ সরকারী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে। এরপর ইংরেজী বিভাগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। সেখান থেকেই প্রথমে শিবির ও পরে নব্য জেএমবিতে যোগ দিয়ে জঙ্গী কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়ে। রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইফতে খায়ের আলম বলেন, শুভ নিখোঁজ হয়ে জঙ্গী কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়েছে, এমন আশঙ্কা পুলিশেরও ছিল। তার ব্যাপারে ব্যাপক অনুসন্ধান চালানো হয়েছিল। কিন্তু তার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। প্রসঙ্গত, গত শনিবার টাঙ্গাইলে শুভ ও অপর এক জঙ্গী র‌্যাবের অভিযানে নিহত হওয়ার পর টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ মর্গে শুভর বাবা আলতাফ হোসেন ছেলের লাশ শনাক্ত করেন।
×