ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি দল যুক্তরাজ্য যাচ্ছে খতিয়ে দেখতে

সোনালী ব্যাংক ইউকে শাখাকে ৩৩ লাখ পাউন্ড জরিমানা

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৪ অক্টোবর ২০১৬

সোনালী ব্যাংক ইউকে শাখাকে ৩৩ লাখ পাউন্ড জরিমানা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সোনালী ব্যাংক ইউকে শাখাকে ৩৩ লাখ পাউন্ড জরিমানা করার পর ব্যাংকটির বৈদেশিক কার্যক্রম ও এক্সচেঞ্জ হাউসের বিষয়ে জানতে আগামী মাসে যুক্তরাজ্য যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধে ব্যর্থ হওয়ায় যুক্তরাজ্যের ফিন্যান্সিয়াল কনডাক্ট অথরিটি (এফসিএ) এ জরিমানা করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র জানান, যুক্তরাজ্যে সোনালী ব্যাংকের জরিমানার বিষয়ে আমরা অবহিত নই। আগামী মাসেই আমাদের একটি প্রতিনিধি দল পরিদর্শনে ইউকে যাবে। এর বেশি আপাতত বলা যাচ্ছে না। গত বুধবার বিবিসির এক খবরে বলা হয়, বাংলাদেশের সোনালী ব্যাংক ইউকে শাখাকে ৩৩ লাখ পাউন্ড জরিমানা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আগামী ২৪ সপ্তাহের জন্য নতুন গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত গ্রহণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এফসিএর শীর্ষ এ্যান্টি মানিলন্ডারিং কর্মকর্তা স্টিভেন স্মিথ জানান, সোনালী ব্যাংক ইউকে শাখাকে নতুন গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত গ্রহণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তবে প্রবাসী আয় বা বাংলাদেশে রেমিটেন্স পাঠানোর কার্যক্রম চালু থাকবে। বর্তমানে যুক্তরাজ্যে ৩টি শাখা রয়েছে সোনালী ব্যাংকের। এগুলো লন্ডন, বার্মিংহাম ও ব্র্যাডফোর্ডে অবস্থিত। প্রবাসীদের সেবা দিতে ২০০১ সালে দেশটিতে কার্যক্রম শুরু করে সোনালী ব্যাংক। এতে সরকারের শেয়ার রয়েছে ৫১ ভাগ। জানা যায়, সম্ভাব্য মুদ্রা পাচার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার জন্যই যুক্তরাজ্যে ৩৩ লাখ পাউন্ড জরিমানা গুনতে হচ্ছে বাংলাদেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক সোনালী ব্যাংককে। জরিমানার এই অঙ্ক বাংলাদেশী মুদ্রায় ৩৩ কোটি টাকার বেশি। এফসিএর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ কার্যক্রমের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে সোনালী ব্যাংকের পদ্ধতিগত ‘গুরুত্বপূর্ণ দুর্বলতা’ ধরা পড়েছে। মুদ্রা পাচারের বড় ধরনের ঘটনা ঘটার পর বিশ্বের নানা দেশ গত কয়েক বছরে ব্যাংকগুলোর মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদারের তাগিদ দিয়ে আসছে। বিবিসি জানিয়েছে, যুক্তরাজ্য সোনালী ব্যাংককে জরিমানার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির মুদ্রা পাচার নিয়ন্ত্রণ বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা স্টিভেন স্মিথকে ব্যাংক খাতের এ ধরনের চাকরিতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। স্মিথকে ব্যক্তিগতভাবে ১৮ হাজার পাউন্ড জরিমানাও করা হয়েছে। তবে এই সিদ্ধান্তের ফলে সোনালী ব্যাংকের রেমিটেন্স পাঠানোর স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘিœত হচ্ছে না। সম্ভাব্য মুদ্রা পাচার ঠেকাতে পদ্ধতি উন্নত করতে সোনালী ব্যাংককে ২০১০ সালে সতর্ক করেছিল এফসিএ। কিন্তু চার বছরেও ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাতে ব্যর্থ হওয়ায় এই জরিমানা করা হয়েছে। বিবিসি বলছে, এক গ্রাহকের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগের বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের কাছে তথ্য চেয়েছিল এফসিএ, কিন্তু সাত সপ্তাহেও সেই তথ্য পাওয়া যায়নি। এফসিএর তদন্তে উঠে এসেছে, ওই গ্রাহকের বছরে আয় ২৮ হাজার পাউন্ড, অথচ তিনি গত ১৮ মাসে বাংলাদেশে পাঠিয়েছেন ২৫ হাজার পাউন্ড, যা সন্দেহজনক। কিন্তু সোনালী ব্যাংক এর কোন তদন্ত করেনি। এফসিএর নির্দেশে গত ছয় মাস ধরে বন্ধ রয়েছে সোনালী ব্যাংকে নতুন হিসাব খোলা। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ সোনালী ব্যাংক ইউকের পরিচালনা পর্ষদ এবং ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সমালোচনাও করেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর যুক্তরাজ্যে সোনালী ব্যাংকের যাত্রা শুরু হলেও নানা অনিয়মের কারণে ১৯৯৯ সালে এর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এরপর মানি এক্সচেঞ্জে সীমাবদ্ধ ছিল ব্যাংকের কার্যক্রম। ২০০১ সালে সোনালী ব্যাংক ইউকে নামে নতুন করে যাত্রা শুরু হয়। ব্যাংকটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সারোয়ার হোসেন বলেন, এই ধাক্কা সামলে উঠার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। প্রায় বছর খানেক আগে বাংলাদেশ থেকে নিয়োগ নিয়ে লন্ডনে এসে সোনালী ব্যাংক ইউকেতে যোগ দেন সারোয়ার। সোনালী ব্যাংককে নিয়ে এই পদক্ষেপে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাঙালীদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা চলছে। অনেকে বলছেন, ব্যাংকের মধ্যে কর্মকর্তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল আর দলাদলির ফল হলো এটা। আর এতে দেশের ভাবমূর্তিই ক্ষতির মুখে পড়েছে। সারোয়ার বলেন, এই পরিস্থিতির জন্য একক কোন ব্যক্তি দায়ী নন। তবে ব্যবস্থাপনার বিশেষ করে ‘আইটি ক্ষেত্রে’ ঘাটতি রয়েছে। কয়েক মাস ধরে নতুন হিসাব খুলতে না পারাটা কী প্রভাব ফেলছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের ডিপোজিটর কম থাকায় তেমন প্রভাব পড়ছে না। এখানে এ্যাকাউন্ট খুলতে কম লোকই আসে।’ জরিমানা দিতে হবে-অর্থমন্ত্রী ॥ যুক্তরাজ্যে সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের শাখাকে যে অর্থ জরিমানা করা হয়েছে তা দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, মুদ্রা পাচার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় বাংলাদেশের সোনালী ব্যাংক যুক্তরাজ্য (ইউকে) শাখাকে ৩৩ লাখ পাউন্ড জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার এ অর্থ অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে। কারণ তারা যে অভিযোগে এ জরিমানা করেছে তাতে আমাদের কিছু করার নেই। বৃহস্পতিবার বিকেলে সচিবালয়ে নিজ কার্যালয় থেকে বের হওয়ার সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে বুধবার সোনালী ব্যাংক যুক্তরাজ্য শাখা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়েছে বলে জানায় যুক্তরাজ্যের ফিন্যান্সিয়াল কনডাক্ট অথরিটি (এফসিএ)। এ জন্য ব্যাংকটিকে ৩৩ লাখ পাউন্ড বা প্রায় ৩২ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তা ছাড়া এ শাখাকে নতুন গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত গ্রহণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এদিকে, যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের সেবা দেয়া এবং রেমিট্যান্স পাঠানোর লক্ষ্যে সোনালী ব্যাংক ইউকে প্রতিষ্ঠা করা হয়। ব্যাংকের ৫১ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা বাংলাদেশ সরকারের। জরিমানা করলেও ব্যাংকের রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে কোন প্রভাব ফেলবে না বলে সংবাদ সংস্থা বিবিসি জানিয়েছে। তবে ব্যাংকটি নতুন কোন গ্রাহকের সঙ্গে কোন ধরনের লেনদেন করতে পারবে না। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি পত্রিকার মাধ্যমে ঘটনাটি জানতে পেরেছি। এমন ঘটনা দুঃখজনক। বিষয়টি আমি ভালভাবে খোঁজ নিয়ে দেখব। এর আগে তারা কোর্টে গেছে সেখান থেকে ফলপ্রসূ কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। জরিমানার টাকা দিতেই হবে। যুক্তরাজ্য শাখা সোনালী ব্যাংকে যে বোর্ড আছে সেখানে ওই দেশের লোকও আছে। সুতরাং দায় শুধু আমাদের একার নয়। গুরুতর অনিয়মের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেটি আমাদের বিষয়। অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাদের লোকদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছে। আগে পুরো ঘটনাটি জানতে হবে। তারপর ব্যবস্থা নেব। চীনের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর চীনের কোন প্রেসিডেন্ট এই প্রথম বাংলাদেশে সফরে আসছেন। এর আগে তিনি যখন চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন তখন একবার সফরে এসেছিলেন। তার আগে পাকিস্তান আমলে চৌ এন লাই সফর করেছেন। তিনি বলেন, চীনের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর অবশ্যই আমাদের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষ করে তার সফর আমাদের অর্থনীতিতে একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। চীনের প্রেসিডেন্টের সফরকালে কি পরিমাণ বিনিয়োগ প্রস্তাব পাওয়া যেতে পারে বা বাংলাদেশ সরকার কি পরিমাণ অর্থ চাইতে পারে। এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, চাওয়া-পাওয়ার বিষয় নয়। আমি একটি তালিকা করেছি তাতে প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হতে পারে। এ ছাড়া আরও একটি তালিকা হয়েছে আমি জানি তার জন্য ২০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে। তবে কতটা পাওয়া যাবে তা এ মৃহূর্তে বলা যাচ্ছে না। তবে বেশ কয়টি এমওইউ স্বাক্ষর হবে। দেখা যাক কি হয়।
×