ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সাহিত্যে নোবেল পেলেন মার্কিন সঙ্গীতশিল্পী বব ডিলান

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৪ অক্টোবর ২০১৬

সাহিত্যে নোবেল পেলেন মার্কিন সঙ্গীতশিল্পী বব ডিলান

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ সাহিত্যে এবারের নোবেল পুরস্কার পেলেন যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতিমান সঙ্গীতশিল্পী ও গীতিকার বব ডিলান। বৃহস্পতিবার স্টকহোমের সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস সাহিত্যে নোবেলজয়ী হিসেবে ডিলানের নাম ঘোষণা করে। খবর এএফপি’র। সঙ্গীতে নতুন কাব্যিক ধারা সৃষ্টির স্বীকৃতি হিসেবে ডিলানকে এই পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে বলে সুইডিশ একাডেমি জানিয়েছে। ডিলানের বয়স এখন ৭৫ বছর। ১৯৫৯ সাল থেকে তার শিল্পী জীবন শুরু হয়। তিনি মিনেসোটার বিভিন্ন কফি হাউসে গাইতেন । ষাটের দশকেই সঙ্গীত জগতে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন ডিলান। তাঁর বিখ্যাত গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘ব্লো ইন দ্য উয়িন্ড’, ‘মাস্টার্স অব ওয়ার’, ‘এ হার্ট রেইনস এ গোনা ফল’, ‘লাইক এ রোলিং স্টোন’ ইত্যাদি। গানগুলো যুদ্ধবিরোধী ও নাগরিক অধিকার আন্দোলনের কর্মীদের কাছে খুব প্রিয়। প্রায় ৫০ বছর ধরে সঙ্গীত জগতে সক্রিয় আছেন ডিলান। এখনও তিনি গান লেখেন ও সঙ্গীত পরিবেশনায় অংশ নেন। পুরস্কার ঘোষণার জন্য আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, নোবেল কমিটির সদস্যদের সর্বসম্মতিক্রমে ডিলান এ পুরস্কার পেয়েছেন বলে নোবেল একাডেমির সেক্রেটারি সারা দানিয়াস জানিয়েছেন। একজন লোকশিল্পী নোবেল পুরস্কার পেতে পারেন বলে গত বছর থেকে গুঞ্জরণ শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু তাদের উল্লেখযোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ডিলানের নাম শোনা যায়নি। গতবার বেলারুশের সাহিত্যিক সভেৎলানা আলেক্সিয়াভিচ গত বছর এই পুরস্কার পান। সাহিত্য পুরস্কারের মাধ্যমে এবার বিভিন্ন বিষয়ে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা শেষ হলো। আগামী ১০ ডিসেম্বর স্টকহোমে ডিলানের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে এই পুরস্কার তুলে দেয়া হবে। প্রত্যেক বিজয়ী পুরস্কার হিসেবে ৮০ লাখ ক্রোনার পাবেন। বব ডিলানের জন্ম ১৯৪১ সালের মে ২৪। গায়ক, গীতিকার, লেখক, সুরকার, কবি এবং ডিস্ক জকি হিসেবে পাঁচ দশক ধরে তিনি নিজের জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পেরেছেন। ডিলানের শ্রেষ্ঠ কাজের মধ্যে অনেকগুলো ১৯৬০ দশকে রচিত। তিনি এ সময় আমেরিকান অস্থিরতার প্রতীক বিবেচিত হতেন। তার কিছু গান, যেমন ‘ব্লো ইন দ্য উয়িন্ড’, ‘মাস্টার্স অব ওয়ার’, ‘এ হার্ট রেইনস এ গোনা ফল’, ‘লাইক এ রোলিং স্টোন’ যুদ্ধবিরোধী সঙ্গীত হিসেবে জনপ্রিয়তা পায়। তার সর্বশেষ এ্যালবাম, ক্রিসমাস ইন দি হার্ট (২০০৯), রোলিং স্টোন ম্যাগাজিন একে পরবর্তীকালে বর্ষসেরা এ্যালবাম হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ১৯৫৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ডিলান ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটাতে ভর্তি হন এবং মিনিয়াপোলিসে বসবাস শুরু করেন। রক এ্যান্ড রোলে তার প্রথমদিককার উৎসাহ থেকে তিনি আমেরিকান ফোক সঙ্গীতে, বিশেষত যেসব সঙ্গীতে এ্যাকুস্টিক গিটারের প্রতি আকৃষ্ট হন। তিনি বলেন, ‘যে প্রথম বিষয় আমাকে ফোক সঙ্গীতে আকৃষ্ট করেছে তা হচ্ছে এন ওডেটা। আমি একটি দোকানে তার রেকর্ড শুনি। এরপর সেখান থেকেই আমি আমার ইলেকট্রিক গিটার ও এ্যাম্পলিফায়ার বদলে এ্যাকুস্টিক গিটার আনি, একটি ফ্লাট-টপ গিবসন।’ ডিলানের প্রথমদিককার গানের কথা ছিল মূলত রাজনীতি, সমাজ, দর্শন ও সাহিত্যিক প্রভাবিত। এগুলো তখনকার জনপ্রিয় ধারার কথিত নিয়ম বহির্ভূত ছিল এবং প্রথাবিরোধী হিসেবে পরিচিত। তিনি আমেরিকান লোকগীতি ও কান্টিব্লুজ থেকে রক এ্যান্ড রোল, ইংরেজ, স্কটিশ, আইরিশ লোকগীতি, এমনকি জ্যাজ সঙ্গীত, সুইং, ব্রডওয়ে এবং গসপেলও গেয়েছেন। ডিলান সাধারণত গিটার, কিবোর্ড এবং হারমোনিকা বাজিয়ে থাকেন। ১৯৮০ দশক থেকে তিনি নিয়মিত বিভিন্ন সঙ্গীত ভ্রমণ করে থাকেন, এরই পটভূমিতে নেভার এন্ডিং ট্যুর রচিত। তিনি অনেক শিল্পীর সঙ্গে একত্রে কাজ করেছেন, যেমন, দ্য ব্যান্ড, টম পেটি, জোয়ান বাজি, জর্জ হ্যারিসন, দ্য গ্রেটফুল ডেড, জনি ক্যাশ, উইলি নেলসন, পল সিমন, এরিক ক্ল্যাপটন, প্যাটি স্মিথ, ইউ২, দ্য রোলিং স্টোনস, জনি মিচেল, জ্যাক হোয়াইট, মার্লে হ্যাগার্ড, নেইল ইয়ং, ভ্যান মরিসন, রিঙ্গো স্টার এবং স্টিভি নিকস। যদিও গায়ক হিসেবেই তিনি বেশি পরিচিত এবং সফল হয়েছেন, তবে গীতিকার হিসেবেই তার অবদানকে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হয়। টাইম প্রকাশিত বিশ শতকের শ্রেষ্ঠ ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় তার নাম এসেছে। ২০০৪ সালে রোলিং স্টোন ম্যাগাজিন প্রকাশিত শ্রেষ্ঠ ১০০ গায়কের তালিকায় দ্য বিটলসের পর দ্বিতীয় স্থানে আসে ডিলানের নাম। ইহুদী ধর্মের অনুসারী ডিলানের দাদা-দাদি জিগম্যান ও আনা জিমারম্যান ১৯০৫ সালের দিকে ইউক্রেনের ওডেসা থেকে অভিবাসী হিসেবে আমেরিকা এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তার মায়ের দাদা-দাদি বেঞ্জামিন ও লিব্বা এডেলস্টেইন ছিলেন লিথুয়ানিয়ার ইহুদী।
×