ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পাঞ্জাবে আম আদমির বেহাল দশা

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ১২ অক্টোবর ২০১৬

পাঞ্জাবে আম আদমির বেহাল দশা

গত জানুয়ারিতে মাঘী মেলায় দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির এমপি প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে পাঞ্জাবের আজকের রুগ্নœ অবস্থার জন্য দায়ী দুর্নীতি, মাদক ও অন্যান্য অনাচার নির্মূল করে দেবেন। নাম ধরে বলেছিলেন যে রাজ্যবিধানসভার নির্বাচনে জয়ী হলে তিনি উপ মুখ্যমন্ত্রী সুখবীর বাদলের শ্যালক মন্ত্রী বিক্রম মাজিথিয়াকে কান ধরে টেনে জেলে পোরাতেন। জনতা তখন তুমুল করতালি দিয়ে তাকে সাধুবাদ জানিয়েছিল। এর ছয় মাস পর এএপি পাঞ্জাবে সংগঠন গড়ে তুলতে শুরু করলে দলটিকে রাজ্যের রাজনৈতিক অঙ্গনে নবোত্থিত শক্তির মতো দেখতে লাগে। কিন্তু সহসাই পরিস্থিতি বদলে যায়। এদের পর এক অতি গুরুতর ধরনের অভিযোগের মধ্যে অমৃতসর লোকসভার নির্বাচনী এলাকার এএপির দীর্ঘদিনের আঞ্চলিক প্রধান গুরিন্দর সিং বাজওয়া পদত্যাগ করেছেন। সেই সঙ্গে পদত্যাগ করেছেন আরও ৮৫ জন কর্মকর্তা। শোনা যাচ্ছে যে এএপির অমৃতসর-গুরুদাসপুর সীমান্ত অঞ্চলের মূল ক্যাডার শক্তির ৮০ ভাগও পদত্যাগ করেছে। গত ২৭ আগস্ট এএপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব পাঞ্জাব রাজ্যের আহ্বায়ক সুচা সিং ছোটেপুরকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর এই গণ পদত্যাগ ঘটল। প্রবীণ রাজনীতিক ও সাবেক আকালী এই নেতা পাঞ্জাবজুড়ে দলকে গড়ে তুলতে মুখ্য ভূমিকা রেখেছিলেন। তাকে বরখাস্ত করার পর টিভি কমিক অভিনেতা গুরপ্রীত সিং যু¹িকে তার স্থলাভিষিক্ত করা হলেও একদলীয় কর্মীর কাছ থেকে ২ লাখ রূপী নেয়ায় তাঁকেও দল থেকে অপসারণ করা হয়। সঞ্জয় সিং ও দুর্গেস্কা পাঠকের নেতৃত্বে পাঞ্জাব আম আদমি পার্টির ৫৪ নেতা ও পর্যবেক্ষকের একটি দল আছে। দলীয় ক্যাডাররা এদের বাহারওয়ালে ও ‘দিল্লীওয়ালে’ বলে থাকে। ছোটেপুর এই রাজ্যে দলীয় সংগঠন গড়তে গিয়ে সংগঠনের শিকড় যে সুগভীরে নিয়ে গিয়েছিলেন সে সম্পর্কে ওই নেতৃবৃন্দের কোন ধারণাই নেই। গত ৩০ আগস্ট তিনি দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর এএপির ১৩ জন আঞ্চলিক সমন্বয়ক কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উদ্দেশ্যে চরমপত্র দিয়ে পাঞ্জাব নেতৃত্ব থেকে সিং-পাঠককে প্রত্যাহার করে ছোটেপুরকে ওই পদে পুনর্প্রতিষ্ঠার দাবি জানান। সেই চরমপত্রের পরই এই গণ পদত্যাগ ঘটল। এর পাশাপাশি দলের পাঞ্জাব নেতাদের যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগও পাওয়া গেছে। বার্নালার এএপির একটি গ্রুপ সেই কেলেঙ্কারির অডিও রেকর্ডিং প্রকাশ করেন। দলের দিল্লীর এক বিধায়ক এসব ঘটনার প্রতি কেজরিওয়ালের দৃষ্টি আকর্ষণ করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এসব সাংগঠনিক ও অনৈতিক ঘটনায় পাঞ্জাবের নির্বাচনে আম আদমি পার্টির সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এর মধ্যে আবার দলের ন্যাশনাল কাউন্সিলে পাঞ্জাবের সদস্য পবিত্তর সিংহ অভিযোগ করেছেন যে সিংহ পাঠক ফিল্লাউরের একটি টিকেটের জন্য ৫০ রূপী দাবি করেছেন। ছোটেপুরের এক সহকর্মী হরদীপ সিং কিংগ্রাও অভিযোগ করেছেন যে লুধিশালার আঞ্চলিক সমন্বয়ক অমব্রিশ ট্রিখা পাঠকের সঙ্গে বৈঠকের ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য ৫ লাখ রূপী চেয়েছিলেন। অমৃতসরের গুরুন্দর বাজওয়া জানান যে, আড়াই মাস আগে নগরীর জনৈক তহবিল সংগ্রাহকের কাছ থেকে নেয়া সাড়ে ২২ লাখ রূপী পাঠকের লোক কপিল আক্ষরিক অর্থে ছিনিয়ে দিল্লীতে নিয়ে যায়। পাঠক অবশ্য এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন বহিরাগত ইস্যুটি পাঞ্জাবের শাসক কংগ্রেসের একটা ষড়যন্ত্র। আকালী নেতৃত্ব বিষয়টিকে দিল্লী বনাম পাঞ্জাব ইস্যু, টুপিওয়ালা বনাম পাঞ্জাবী ইস্যুতে পরিণত করার চেষ্টা করছে। এএপির জাতীয় সাংগঠনিক প্রধান অবশ্য জোর দিয়ে বলেন যে এই অপকৌশল পাঞ্জাবী ভোটারদের ক্ষেত্রে কাজ দেবে না। এএপির পাঞ্জাব নেতারা বলেন যে, বর্তমানে যেসব অভিযোগ ও কেলেঙ্কারির কথা শোনা যাচ্ছে সেগুলো সাময়িক। গত আগস্টে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা শুরু হওয়ার পর থেকে এসব কথা উঠছে। দলীয় টিকেট যারা পায়নি তারাই এমন অভিযোগ তুলছে। এএপি ১১৭টি নির্বাচনী এলাকার ৩২টির ক্ষেত্রে প্রার্থী মনোনয়ন ঘোষণা করেছে। এই ৩২টি এলাকার অনেকগুলো থেকেই বর্তমান বিদ্রোহের উৎপত্তি। এএপির এক স্থানীয় নেতার ভাষায়, এই দলটি নেতাদের নয়, কর্মীদের দল। এখানে প্রত্যেকেই দলীয় মনোনয়ন চায় এবং না পেয়ে হতাশ হয়। অন্যান্য দলে ঝানু রাজনীতিকরা থাকেন। কিন্তু এই দলে নেতাকর্মীদের প্রায় সবাই সাধারণ নাগরিক। তাদের হতাশা ক্ষোভের আকারে প্রকাশ করার প্রবণতা থাকা স্বাভাবিক। এদিকে প্রাক্তন ক্রিকেটার ও এমপি নবোজিত সিং সিদু আম আদমি পার্টিতে যোগ দেয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তা থেকে সরে আসায় অনেকে হতাশ হয়েছেন। তারা এটাকে বিরাট বিপর্যয় বলে চিহ্নিত করছেন। এই অবস্থায় দলটি পাঞ্জাবে তার আগের যুদ্ধংদেহী ভাব থেকে সরে এসেছে। ছোটেপুরকে আবার দলে টেনে আনারও চেষ্টা চলছে। দলের অভ্যন্তরে এই নানামুখী টানাপোড়েনের মধ্যে অরবিন্দ কেজরিওয়াল ঘোষণা দিয়েছেন যে এখন থেকে তিনি নিজে পাঞ্জাবে প্রচারাভিযানের ব্যাপারটি দেখবেন। উল্লেখ করা যেতে পারে যে এই রাজ্যের মানুষদের এখনও কেজরিওয়ালের প্রতি যথেষ্ট ভক্তি-শ্রদ্ধা রয়েছে। চলমান ডেস্ক সূত্র : ইন্ডিয়া টুডে
×