ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভারতে হোয়াইটওয়াশ নিউজিল্যান্ড

প্রকাশিত: ০৬:১১, ১২ অক্টোবর ২০১৬

ভারতে হোয়াইটওয়াশ নিউজিল্যান্ড

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ এক সিরিজে ভারতের জন্য এরচেয়ে বেশি আর কিইবা পাওয়ার ছিল। প্রথমে কানপুরে নিজেদের ঐতিহাসিক ৫০০তম টেস্টে বড় জয়ে (১৯৭ রান) এগিয়ে যাওয়া, কলকাতায় ঘরের মাটিতে ২৫০তম টেস্ট জিতে (১৭৮ রান) এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিশ্চিত করার পাশাপাশি র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান পুনরুদ্ধার। ইন্দোরে আরও পূর্ণতা পেল সেটি। চারদিনেই তৃতীয় টেস্ট জিতে (৩২১ রান) নিউজিল্যান্ডকে ৩-০তে ‘হোয়াইটওয়াশ’ করল বিরাট কোহলির দল। অধিনায়কের ইতিহাসগড়া ডাবল সেঞ্চুরি (২১১) ও ম্যাচের নায়ক রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ১৩ উইকেট তাতে বাড়তি রং ছড়াল। ঘূর্ণিজাদুতে ব্যক্তিগত রেকর্ড গড়া দ্বৈরথে ২৭ শিকারে সিরিজসেরাও হয়েছেন তুখোড় এই অফস্পিনার। তিন টেস্টের সিরিজে কার্যত অতিথিদের নিয়ে ছেলেখেলাই করল ভারত! ধর্মশালায় রবিবার অনুষ্ঠিত হবে পাঁচ ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডে। ৪৭৫ রানের অসম্ভব লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে মঙ্গলবার চতুর্থদিন শেষ বেলায় ১৫৩ রানে অলআউট হয় নিউজিল্যান্ড। দ্বিতীয় ইনিংসে কিউইদের ইনিংসের আয়ু ছিল ৪৪.৫ ওভার। প্রথম ইনিংসে তাদের সংগ্রহ ২৯৯। ভারত ৫৫৭/৫ (ডিক্লেঃ) ও ২১৬/৩ (ডিক্লেঃ)। আগের দিনই ৬ উইকেট নিয়ে প্রতিপক্ষের প্রথম ইনিংস ধসিয়ে দিয়েছিলেন অশ্বিন। তাতেই ম্যাচের ভাগ্য লেখা হয়ে গিয়েছিল। চতুর্থদিনে উইকেট পেয়েছেন একটি বেশি, ৫৯ রান দিয়ে নিয়েছেন ৭ উইকেট। সব মিলিয়ে এই টেস্টে ১৩টি উইকেট। এর আগে প্রথম টেস্টেও নিয়েছেন ১০ উইকেট। এতে একটা কীর্তিও ছুঁয়ে ফেলেন ৩০ বছর বয়সী, একই সিরিজে দুই ম্যাচে ১০-বা তার বেশি উইকেট নেয়া দ্বিতীয় ভারতীয় বোলার তিনি। এর আগে দেশটির হয়ে এমন নজির ছিল কেবল হরভজন সিংয়ের। ২০০০-২০০১ সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কীর্তিটা গড়েছিলেন ভাজ্জি। মঙ্গলবার শেষ বেলায় প্রশ্ন ছিল ম্যাচ কি পঞ্চম দিনে গড়াবে? কারণ ৪৭৫ রানের লক্ষ্য নিয়ে খেলতে নেমে ১৩৮ রানেই ৯ উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। জয়-পরাজয়ের হিসেব মেলান ততক্ষণে শেষ। নবম ব্যাটসম্যান হেনরি যখন আউট হন, দিনে ওভার বাকি ১০.২টি। প্রশ্ন, এর মধ্যেই জিততে পারবে ভারত! আরও নির্দিষ্ট করে বললে, অশ্বিন পারবেন? এই টেস্টে নিজের দাপট বুঝিয়ে দিতেই হয়তো, নিজের বলেই নিউজিল্যান্ডের শেষ ব্যাটসম্যান ট্রেন্ট বোল্টের (৪) ক্যাচ নিয়ে ম্যাচের শেষটা টেনে দিয়েছেন অশ্বিনই! তৃতীয় দিনেই যেমন বোলিং করেছিলেন, চতুর্থদিনে স্পিনের স্বর্গ হয়ে ওঠা ইন্দোরের পিচে অশ্বিনকে সামলানো যে কঠিন হবে সেটি জানাই ছিল। তাই বলে এতটা? উমেশ যাদব দ্বিতীয় ওভারেই ফিরিয়ে দেন ওপেনার টম ল্যাথামকে (৬)। এরপরই শুরু অশ্বিন-ম্যাজিক। মার্টিন গাপটিলকে (২৯) দিয়ে শুরু, এরপর একে একে রস টেইলর (৩২), লুক রনকি (১৫), মিচেল স্যান্টনার (১৪), জিতেন প্যাটেল (০) আর ম্যাট হেনরি (০)Ñ যাওয়া আসার মিছিলে সবাই যেন অশ্বিন-জাদুতে মুগ্ধ! অশ্বিনের স্পিনের রহস্যটাই বুঝতে পারেননি কেউ, কারও ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে বল চলে গেছে স্ট্যাম্পে, আবার কেউ বা নিজেই মারতে গিয়ে বিলিয়ে দিয়েছেন উইকেট। অভিজ্ঞ টেইলর ওয়ানডে মেজাজের ৩২ রানের বাইরে বলার মতো রান বলতে গাপটিল-উইলিয়ামসনের দুটি বিশ পেরোন ইনিংস! অশ্বিন-আলোয় চেতেশ্বর পূজারার দারুণ সেঞ্চুরিটাও ম্লান। কাল দ্বিতীয় ইনিংসে ওয়ান-ডাউনে নেমে ১৪৮ বলে ১০১ রান করে অপরাজিত ছিলেন তিনি। এদিন দারুণ এক হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছেন দুই বছর পর ফেরা গৌতম গাম্ভীরও (৫৬ বলে ৫০)। প্রথম ইনিংসেই প্রথম ভারতীয় অধিনায়ক হিসেবে টেস্টে দুটি ডাবল সেঞ্চুরির অনন্য কীর্তি গড়েন ফর্মে ফেরা কোহলি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অশ্বিন-ঝলকে সবাই ম্লান! এটি নিয়ে নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে তিন বা ততোধিক ম্যাচের সিরিজে চতুর্থবারের মতো প্রতিপক্ষকে ‘হোয়াইটওয়াশের’ লজ্জায় ডোবাল ভারত। আগের তিনটি হলো ১৯৯২-১৯৯৩ (ইংল্যান্ড), ১৯৯৩-১৯৯৪ (শ্রীলঙ্কা) ও সর্বশেষ ২০১২-২০১৩ সালে (অস্ট্রেলিয়াকে)।
×