ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে বৃষ্টির আশঙ্কা

বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড সিরিজ নির্ধারণী লড়াই আজ

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ১২ অক্টোবর ২০১৬

বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড সিরিজ নির্ধারণী লড়াই আজ

মিথুন আশরাফ ॥ প্রথম ওয়ানডে হেরেছে বাংলাদেশ ২১ রানে। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জিতেছে ৩৪ রানে। সিরিজে তাই এখন ১-১ সমতা। বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে আজ অনুষ্ঠিত হবে। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দুপুর আড়াইটায় শুরু হবে ম্যাচটি। যে জিতবে সিরিজ তারই হয়ে যাবে। ম্যাচটি শুরু হওয়ার আগে সবার মনে একটি প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে, বাংলাদেশ না ইংল্যান্ড, সিরিজ কার? প্রথম ওয়ানডেতে জয়ের আশা জাগিয়েও পারেনি বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ইংল্যান্ডকে শক্তি দেখিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশকে যে কোনভাবেই দুর্বল ভাবার সুযোগ নেই, সেটি বুঝিয়ে দিয়েছে। এখন তৃতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সেই শক্তি ফিরে আসলেই হয়ে যায়। সিরিজ জয় বাংলাদেশই করবে। কিন্তু কোনরকমে সেরাটা দিতে না পারলেই বিপদ আসবে। দেশের মাটিতে টানা সপ্তম সিরিজ জয়ের যে আশা, তা ভেস্তে যেতে পারে। তবে এমনও হতে পারে, দুই দলেরই সিরিজ জয়ের যে আশা আছে; তা কারোরই পূরণ নাও হতে পারে। বৃষ্টি যে চোখ রাঙাচ্ছে। বৃষ্টির জন্য এমনও হতে পারে, খেলা হলোই না। আর আজ খেলা না হওয়া মানে, সিরিজ ড্র হয়ে যাবে। ‘রিজার্ভ ডে’ যে এই সিরিজে নেই। বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা অবশ্য আশাবাদী। তিনি বলেছেন, ‘আমরা জিততে অবশ্যই মরিয়া থাকব।’ তবে ম্যাচে যেন দুই দলের ক্রিকেটাররাই জিদ নিয়ে খেলবেন। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে যে মাঠের ভেতর বাংলাদেশ দলের উল্লাস করা নিয়ে জস বাটলার খেপেছিলেন, এরপর ম্যাচ শেষে তামিম-স্টোকস তর্কাতর্কি হয়েছে; তা ম্যাচে প্রভাব ফেলতে পারে। মাশরাফি বললেন, ‘আমরা এখানে খেলতেই এসেছি। আমাদেরও চেষ্টা থাকবে জেতা। তবে যদি বাইরের কিছু নিয়ে কেউ জিততে চায়, আমি বলব স্রেফ অপ্রয়োজনীয় চাপ নেয়া হবে। আমি মনে করি আমাদের খেলাটা নরম্যাল খেলতে পারলেই হবে। অন্য কিছু ভাবছি না।’ বৃষ্টি নিয়ে চিন্তিত মাশরাফি, ‘বৃষ্টি তো অবশ্যই চিন্তার ব্যাপার। কালকে (আজ) আবহাওয়া কেমন থাকবে বা কি হবে, সেটা ভাবতে হবে। তবে এখনই বোঝা বা সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন। মাঠের পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে।’ বারবার ঘুরে ফিরে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলোই সামনে চলে আসছে। মঙ্গলবার ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনেও মাশরাফির কাছে বারবার সেই সংক্রান্ত প্রশ্নই ছুটে গেছে। মাশরাফিও বলেছেন, ‘আমাদের দল পুরোপুরি স্বাভাবিক আছে। শতভাগ নিশ্চিত যে আমাদের দল ওটা নিয়ে ভাবছেও না। আমরা ভাবছি খেলা কিভাবে ভাল খেলা যায়। আমি নিশ্চিত আমাদের ছেলেরা সবাই চেষ্টা করবে সুস্থির থাকতে এবং সেরা খেলাটা খেলতে।’ প্রথম ওয়ানডের আগে নিজেদের ফেবারিট ভাবেননি মাশরাফি। দ্বিতীয় ওয়ানডে জিতে এখন সিরিজ জেতার সম্ভাবনা আছে বাংলাদেশের। এজন্য আজ জিতলেই হবে। এখনও নিজেদের ফেবারিট ভাবতে নারাজ বাংলাদেশ অধিনায়ক। বলেছেন, ‘সিরিজ শুরুর আগেই বলেছিলাম যে ইংল্যান্ড ভাল খেলছে। গত দুই ম্যাচেও ইংল্যান্ড ভাল খেলেছে। আমরা বরং আপ টু দি মার্ক ছিলাম না। পরের ম্যাচ আমাদের জন্য বড় ম্যাচ। চেষ্টা করব সেরাটা দিতে। তবে আমরা নিজেদের ফেবারিট ভাবছি না।’ চট্টগ্রামে সবসময়ই বাংলাদেশ ভাল খেলে। এ ভেন্যুকে ‘লাকি’ ভেন্যুও বলা হয়ে থাকে। এখানে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১১ সালের বিশ্বকাপেও জিতেছে বাংলাদেশ। এবারও কী জয় মিলবে? মাশরাফি বললেন, ‘এই মাঠে আমাদের রেকর্ড অবশ্যই ভাল। তবে সেটা ধরে নিয়ে তো ম্যাচ খেলতে নামা যায় না। প্রতিটি ম্যাচ নতুন শুরু। আমরা যেভাবে খেলছি, সেভাবে খেলতে চাই। এবং দুটো ম্যাচের ভুলগুলো শোধরাতে চাই।’ আজকের ম্যাচে টস গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে বলেও মনে করছেন মাশরাফি, ‘বৃষ্টি হলে টস একটা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়। খেলা চলার সময় বৃষ্টি হতে থাকলে আবার বন্ধ হলে, নানা ক্যালকুলেশন করতে হয়। এটা দুই দলের জন্যই বিরক্তির। এখনও আমরা সমতায় আছি। যদি এরকম চলতে থাকে, ঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়, গুরুত্বপূর্ণ সময়ে যারা ঠিক সিদ্ধান্ত নেবে, ম্যাচ হয়ত তাদের দিকে হেলে পড়বে।’ ম্যাচের আগেরদিন দলের অধিনায়ককেই সংবাদ সম্মেলনে আসতে হয়। কিন্তু দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মাঠে বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের উল্লাস করায় যে ক্ষেপেছেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক বাটলার, তাই বোধহয় তৃতীয় ওয়ানডের আগে সংবাদ সম্মেলনেও আসেননি। স্পিন অলরাউন্ডার মঈন আলীকে পাঠিয়ে দিয়েছেন। মঈন সিরিজ জয়ের আশাই প্রকাশ করেছেন। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে যা হয়েছে তা সামনে রেখে সিরিজ জয়ের স্বপ্নও দেখছেন মঈন। বলেছেন, ‘আমার মনে হয়, দুই দলই এখন জেতার জন্য মরিয়া হয়ে আছে। বাংলাদেশ সর্বশেষ ছয় সিরিজে হারেনি। আমরা যে কোনভাবেই জিততে চাই। কিছু ক্রিকেটার, বিশেষ করে অধিনায়ক এ ম্যাচেই জেতার জন্য মরিয়া হয়ে আছে।’ এখন দেখা যাক, কোন দল শেষ পর্যন্ত জিতে সিরিজ জয় করে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৮ ওয়ানডে ম্যাচ খেলে ১৪টিতে হারার বিপরীতে ৪টি জিতেছে। টানা ১২ ম্যাচ হারের পর জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। ২০১০ সালে ব্রিস্টলে যে ইংল্যান্ডকে প্রথমবার হারায় বাংলাদেশ, এরপর সর্বশেষ ৫ ম্যাচের তিনটিতেই জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। তবে সিরিজ জেতার সুবর্ণ সুযোগ এবার ভালভাবেই পেয়েছে। ২০০৩ ও ২০১০ সালে দুটি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে বাংলাদেশ। ২০১০ সালেই একটি তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ১-১ সমতা এনে তৃতীয় ম্যাচে হেরে সিরিজ হারে বাংলাদেশ। তবে সেইবার সিরিজ জয়ের মতো ভীত বাংলাদেশের ছিল না। এবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যখন চতুর্থ ওয়ানডে সিরিজ খেলছে বাংলাদেশ, এ সিরিজ জয়ের সম্ভাবনা আছে। এমনকি এবার সিরিজ জেতার মতো ভীতও আছে বাংলাদেশের। তাই সবাই এবার প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের স্বপ্নও দেখতে শুরু করে দিয়েছেন। পারবে বাংলাদেশ সিরিজ জিতে নিতে? নাকি ইংল্যান্ড আবার বাজিমাত করে ফেলবে।
×