ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

৫৮ নাটকের পরিবেশনায় জাতীয় নাট্যোৎসব শেষ

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১২ অক্টোবর ২০১৬

৫৮ নাটকের পরিবেশনায় জাতীয় নাট্যোৎসব শেষ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নাট্যানুরাগীদের স্বতঃস্ফূর্ততায় শেষ হলো টানা ১৮ দিনের উৎসব। এক আয়োজনে রাজধানীর চারটি মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হলো সারাদেশের নির্বাচিত নাট্যদলের ৫৮টি নাটক। পরিবেশিত হয় ঢাকার বাইরের ৮ বিভাগের ২৬টি এবং শিল্পকলা একাডেমিসহ ঢাকা মহনগরের বিভিন্ন নাট্যদলের ৩২টি প্রযোজনা। ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া জাতীয় নাট্যোৎসবের সমাপনী দিন ছিল মঙ্গলবার। এদিন সন্ধ্যায় তিন মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় চারটি নাটক। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে বন্দুকযুদ্ধ ও গাধার হাট নামের দুটি নাটক পরিবেশন করে নাট্যকেন্দ্র। নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হয় বরিশালের শব্দাবলী থিয়েটারের নাটক সাহেব চান্দের ঈদ ভোজন। বেইলী রোডের মহিলা সমিতি মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় নাট্যদল বহুবচনের নাটক দেবী। নাট্য পরিবেশনার আগে ছিল সমাপনী আনুষ্ঠানিকতা। ‘এ মাটি নয় জঙ্গীবাদের, এ মাটি মানবতার’ সেøাগানে যৌথভাবে এ উৎসবের আয়োজন করে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। সহযোগিতায় ছিল সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মাধ্যমে শুরু হয় সমাপনী আনুষ্ঠানিকতা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ এবং নাট্য গবেষক ও অনুবাদক অধ্যাপক আবদুস সেলিম। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতিম-লীর দুই সদস্য ঝুনা চৌধুরী ও সৈয়দ দুলাল। সভাপতিত্ব করেন ফেডারেশনের চেয়ারম্যান ও শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করবেন ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল আকতারুজ্জামান। অধ্যাপক আবদুস সেলিম বলেন, উৎসবে মঞ্চস্থ সবগুলো নাটক মানের বিচারে উৎকৃষ্ট ছিল না। তবে এখানে বড় বিষয় হচ্ছে শিল্প সৃষ্টির প্রয়াস। এছাড়া রাজধানীর দর্শকদের সাধারণত ঢাকার বাইরের নাটকগুলো দেখার সুযোগ হয় না। এ উৎসব সে সুযোগটি সৃষ্টি করেছে। এক আয়োজনে দর্শকরা দেখতে পেরেছেন সারাদেশের নাটক। ফলে বাংলাদেশের বর্তমান নাট্যচর্চার গতিধারাটিও উপলব্ধি করা গেছে এ উৎসবের মাধ্যমে। মিসরের বিখ্যাত নাট্যকার আলফ্রেড ফারাগের ‘দ্য ট্র্যাপ’ অবলম্বনে বিন্যস্ত হয়েছে বন্দুকযুদ্ধ নাটকের কাহিনী। মিসরের আরেক নাট্যকার তৌফিক আল হাকিমের ‘দ্য ডঙ্কি মার্কেট’ অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে গাধার হাট নাটক। প্রযোজনা দুটি রূপান্তরের পাশাপাশি নির্দেশনা দিয়েছেন তারিক আনাম খান। অন্ধকার সময় আর বিশ্বাসঘাতকতার গল্প উঠে এসেছে বন্দুকযদ্ধ নাটকে। প্রযোজনাটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন- আরিক, ইমন, নির্যাশ প্রমুখ। অন্যদিকে গতানুগতিক ধারার সঙ্গে যুক্তি-বুদ্ধি ও মুক্তচিন্তার দ্বন্দ্ব ও সংঘাতকে উপজীব্য করে এগিয়েছে গাধার হাট নাটকের কাহিনী। নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন- সাইফ আহমেদ, সংগীতা চৌধুরী, নোমান আহমেদ প্রমুখ। নাটক দুটির আলোক পরিকল্পনা করেছেন নাসিরুল হক খোকন এবং পোশাক পরিকল্পনা করেছেন খন্দকার সাজিয়া আফরিন লুবনা। বরিশালের শব্দাবলী থিয়েটারের সাহেব চান্দের ঈদ ভোজন নাটকটি দেবাশীষ ঘোষের নাট্যরূপ থেকে নির্দেশনা দিয়েছেন ফজলুর রহমান পলাশ। নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ‘দেবী’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে বহুবচনের নাটক দেবী। মোঃ ইকবাল হোসেনের নাট্যরূপ থেকে নির্দেশনা দিয়েছেন আরহাম আলো। হুমায়ূন আহমেদের মিসির আলী সিরিজের একটি গল্প উঠে এসেছে প্রযোজনাটিতে। নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র রানু। গল্পটি শুরু হয় এক মাঝরাতের বর্ণনা থেকে। রানু কিছু অস্বাভাবিক অস্তিত্বের উপস্থিতি টের পায়, যার অস্তিত্ব নেই এ ভুবনে। রানুর স্বামী আনিস ব্যাপারটি নিয়ে বেশ বিচলিত বোধ করেন। রানুর এ অস্বাভাবিকতাকে অসুস্থতা ধরে নিয়ে আনিস সমস্যা সমাধানের জন্য মিসির আলীর শরণাপন্ন হয়। মিসির আলী রানুর বিশেষ ক্ষমতা টের পেয়ে তার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠে। এভাবেই এগিয়ে যায় গল্প। রানুর প্রাণান্ত বাঁচার লড়াইয়ের প্রশ্নে দেবীসত্তাকে আঁকড়ে ধরা আর রহস্যভেদী মিসির আলীর বাস্তবতা অন্বেষণের টানাপোড়েনের নাটক দেবী। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন- তৌফিকুর রহমান, রচনা, সালাউদ্দিন আহমেদ, কবিতা, হ্যাপী, মোহাম্মদউল্লাহ মাহমুদ, আশিক খান, আরহাম আলো প্রমুখ। চীনা প্রেসিডেন্টের সফর উপলক্ষে চীনা বইয়ের প্রদর্শনী ॥ আগামী ১৪ অক্টোবর ঢাকা সফরে আসছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তার আগমন উপলক্ষে মঙ্গলবার রাজধানীতে শুরু হলো সপ্তাহব্যাপী চীনা গ্রন্থের প্রদর্শনী। যৌথভাবে প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে চায়না ইন্টারন্যাশনাল বুক ট্রেডিং কর্পোরেশন ও বাংলাদেশ চায়না ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার। প্রদর্শনীর পৃষ্ঠপোষক ইন্টারন্যাশনাল অফিস অব স্টেট কাউন্সিল অব পিপলস রিপাবলিক অব চায়না ও ঢাকার চীনা দূতাবাস। সহ-আয়োজক চীনা ইন্টারন্যাশনাল পাবলিশিং গ্রুপ। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার তৃতীয় তলায় মঙ্গলবার বিকেলে শুরু হলো চীনা বইয়ের প্রদর্শনী। বিকেলে ছিল এ প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চীনা কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রকাশনা বিভাগের প্রতিমন্ত্রী থুও চেন। আরও উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত মা মিং ছিয়াং, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এইচএম আশিকুর রহমান এমপি প্রমুখ। থুও চেন বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে একত্রে চীনের বাণিজ্য, স্বাস্থ্য, শিল্প-সংস্কৃতিতে কাজ করার অনেকে সুযোগ রয়েছে। এ প্রদশর্র্নীর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও চীনের বন্ধুত্ব আরও দীর্ঘস্থায়ী হবে। দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের সবচেয়ে ভাল বন্ধু বাংলাদেশ। সপ্তাহব্যাপী এ বই প্রদর্শনীতে ঠাঁই পেয়েছে চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের লেখা ‘দ্য গবর্নেন্স অব চায়না’ বইটির ইংরেজী ও চীনা সংস্করণ। এছাড়াও প্রদর্শনীতে রয়েছে চীনের ভাষা, রাজনীতি, শিল্প-সংস্কৃতি, ইতিহাসসহ রকমারি বিষয়েয় চীনা ও ইংরেজী ভাষার বই। শুভজনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও সংবর্ধনা ॥ সাংস্কৃতিক সংগঠন শুভজন। সংগঠনটির পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার সংবর্ধনা ও গুণীজন সম্মাননা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ বছর শুভজন পদক পেয়েছেন কবি ও সাংসদ কাজী রোজী। এছাড়াও ১১ নাগরিক পেয়েছেন গুণীজন সম্মাননা। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সঙ্গীত, আবৃত্তি ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে সন্ধ্যায় ছিল এ আয়োজন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গত বছরের শুভজন পদক অর্জনকারী বিশিষ্ট সাংবাদিক কামাল লোহানী। গুণীজন সংবর্ধনা পেয়েছেন কবি ও গীতিকার কেজি মোস্তফা, অভিনেতা আবুল হায়াত, ছড়াকার রফিকুল হক দাদুভাই, সঙ্গীত পরিচালক শেখ সাদী খান, ভাস্কর মৃণাল হক, লেখক মঈনুদ্দিন কাজল, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ নূরল হক, লেখক হিরন্ময় আজাদ, সমাজসেবক নাজমুল হুদা, মোঃ আলমগীর হোসেন ও নাজমুল হক খোকা। সাংস্কৃতিক পর্বে ছিল পুরনো দিনের চলচ্চিত্র ও আধুনিক গানের পরিবেশনা। এছাড়াও ছিল আবৃত্তি। গান পরিবেশন করেন- হৃদয়, নিঝুম মতীন, জাহিদ হোসেন, মল্লিকা, তামান্না জেসমিন, শায়লা রহমান, আজহার ও শেফু। আবৃত্তি করেন- শাহাদাত হোসেন নিপু, তরুণ রাসেল, রুবেল রানা প্রমুখ।
×