ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

চীনা প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফর

যোগাযোগ ব্যবস্থা ও বিদ্যুত-জ্বালানি খাত প্রাধান্য পাবে

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১২ অক্টোবর ২০১৬

যোগাযোগ ব্যবস্থা ও বিদ্যুত-জ্বালানি খাত প্রাধান্য পাবে

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের আসন্ন ঢাকা সফরে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও বিদ্যুত-জ্বালানি খাতের উন্নয়নই প্রাধান্য পাচ্ছে। চীন ইতোমধ্যেই ঢাকা সফরকে মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেছে। এদিকে চীনা প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরের ওপর নজর রাখছে যুক্তরাষ্ট্র। চীনা প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফর সামনে রেখে যে ২১টি উন্নয়ন প্রকল্প প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হয়েছে তারমধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও বিদ্যুত প্রকল্পই বেশি। এসব প্রকল্পের মধ্যে রেলখাত উন্নয়নে চারটি, সড়ক পরিবহনের চারটি, বিদ্যুতের চারটি, জীবনমান উন্নয়নে পাঁচটি, জ্বালানি ও তথ্য প্রযুক্তি খাতের একটি করে এবং শিল্প খাতের দুটি প্রকল্প রয়েছে। এর মধ্যে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের জন্য ২৫৭ কোটি ৫৭ লাখ ডলার, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল প্রকল্পে ৩০৩ কোটি ডলার, জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী সেকশনের উন্নয়ন প্রকল্পে ৭৫ কোটি ২৮ লাখ ডলার দিতে পারে চীন। এছাড়া চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীতে টানেল নির্মাণ প্রকল্পে ৭০ কোটি ৫৮ লাখ ডলার, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে ১৩৯ কোটি ৩৯ লাখ ডলার, সীতাকু-ু-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ এক্সপ্রেসওয়ে ও কোস্টাল সুরক্ষা প্রকল্পে ২৮৫ কোটি ৬৫ লাখ ডলার এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের জন্য ১৬০ কোটি ৩৩ লাখ ডলার দিতে পারে চীন। চীনের সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্তকরণে এখনও দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। শেষ মুহূর্তে ঠিক কতগুলো চুক্তি সই হবে, সেটা এখনও চূড়ান্ত নয়। এদিকে চীনা প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরের সময় ঢাকার পক্ষ থেকে অবকাঠামো উন্নয়নে ঋণের সুদ কমানোর আহ্বান জানানো হবে। বিভিন্ন প্রকল্পে বাংলাদেশকে বর্তমানে চীন দুই শতাংশ হারে ঋণ দিয়ে থাকে। তবে বাংলাদেশ এই ঋণের সুদ দেড় শতাংশে নামিয়ে আনতে চায়। ইতোমধ্যেই উভয়পক্ষের মধ্যে এ নিয়ে বেশ কয়েকবার আলোচনা হয়েছে। চীনা প্রেসিডেন্ট ঢাকা সফরকালে সুদের হার কমানোর বিষয়ে ঘোষণা দিতে পারেন। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ঢাকা সফরকে ইতোমধ্যেই মাইলফলক বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী কং জুয়ানইউ। সোমবার বেজিংয়ে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া ও ভারত মহাসাগর অঞ্চলে চীনের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। শি জিনপিংয়ের এই ঢাকা সফর বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কে একটি মাইলফলক। তিনি বলেছেন, শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া ও ভারত সফর একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক কার্যক্রমের অংশ। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে চীনের সম্পর্ক জোরদার করা। চীনের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেছেন, গত ৩০ বছরে এটি প্রথম চীনের প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফর। এর আগে ১৯৮৬ সালে চীনের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট লি শিয়াননিয়ান ঢাকা সফর করেন। শি জিনপিং ২০১৪ সালে শ্রীলঙ্কা এবং ২০১৫ সালে পাকিস্তান সফর করেন। এদিকে চীনা প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফর নিয়ে ইতোমধ্যেই অন্যান্য দেশের মধ্যেও আগ্রহ বেড়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনা প্রেসিডেন্টের সফরের ওপর নজর রাখছে। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট সাংবাদিকদের বলেছেন, চীনা প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফর একটি অনেক বড় ব্যাপার। এই সফরে কী ঘটতে যাচ্ছে তা জানতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র। এই সফরের ফলাফলের ওপরও তারা নজর রাখছেন বলে জানিয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। সূত্র জানায়, দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বিরোধ রয়েছে। এছাড়া চীনের মেরিটাইম সিল্ক রুট পুনরুদ্ধার ও বঙ্গোপসাগরে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের আগ্রহ নিয়েও দুশ্চিন্তায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সে কারণে চীনা প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর নিয়ে অত্যন্ত আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং কম্বোডিয়া থেকে ঢাকায় আসছেন। তিনি ১৩ অক্টোবর কম্বোডিয়া সফর করবেন। কম্বোডিয়ার রাজা নরোদম সিহামোনির আমন্ত্রণে দেশটি সফর করবেন শি জিনপিং। সেখান থেকে ঢাকায় আসবেন চীনা প্রেসিডেন্ট। ঢাকা থেকে ভারতের গোয়ায় ব্রিকস-বিমসটেক সম্মেলনে যোগ দেবেন তিনি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে তিনি সেদেশে যাচ্ছেন । চীনা প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে ঢাকা-বেজিং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও গতি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশেষ করে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও বাড়বে। ২০১৫ সালে ঢাকা-বেজিং কূটনৈতিক সম্পর্কের চল্লিশ বছর পূর্তি হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে ৪০ বছর কূটনৈতিক সম্পর্ক পূর্তি উপলক্ষে গত বছরই ঢাকায় আসার কথা ছিল চীনা প্রেসিডেন্টের। তবে বিভিন্ন কারণে চীনা প্রেসিডেন্টের সফর পিছিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত আগামী ১৪ অক্টোবর তিনি ঢাকায় আসছেন। শি জিনপিং এর আগে ২০১০ সালে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। তখন তিনি চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এদিকে ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফর করেন। সে সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনা প্রেসিডেন্টকে ঢাকা সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। ১৯৮৬ সালে চীনের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট লি জিয়ানিয়েন ঢাকা সফরে এসেছিলেন। এরপর প্রায় ত্রিশ বছর কোন চীনা প্রেসিডেন্ট ঢাকা সফরে আসেননি। তিন দশক পর চীনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ঢাকা সফরে আসছেন।
×