ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পদ পেয়েও নিষ্ক্রিয়

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১২ অক্টোবর ২০১৬

পদ পেয়েও নিষ্ক্রিয়

শরীফুল ইসলাম ॥ বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পেয়েও অনেক নেতা দলীয় কর্মকা-ে সক্রিয় হচ্ছেন না। এ নিয়ে দলীয় হাইকমান্ড ক্ষুব্ধ। এত বড় একটি কমিটি গঠনের পরও দলীয় কর্মকা-ে কেন কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতি আশানুরূপ হচ্ছে না তার কারণ খুঁজে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া কোন কোন নেতা এখনও দলীয় কর্মকা-ে সক্রিয় হচ্ছেন না তাদের একটি তালিকাও তৈরি করা হচ্ছে। সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া দলীয় কর্মকা-ে সক্রিয় না থাকলে পরবর্তীতে এসব নেতার ব্যাপারে সতর্ক থাকবে বিএনপি। সূত্র মতে, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির আকার বড় করার মূল কারণ ছিল দলীয় কর্মকা- চাঙ্গা করা। কিন্তু ৫৯১ সদস্যের ঢাউস কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করার পরও বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচীতে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতি বাড়েনি। জতীয় কাউন্সিলের পর কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেতে অবিরাম দৌড়ঝাপ চালালেও পদ পাওয়ার পর অনেকেরই গতি থেমে গেছে। যে কারণে তাদের আর দলীয় কর্মসূচীতে দেখা যায় না। আর এ বিষয়টি আঁচ করতে পেরে দলীয় হাইকমান্ড ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে জানা গেছে। জাতীয় কাউন্সিলের সাড়ে ৪ মাস পর ৬ আগস্ট বিএনপির ৫৯১ সদস্যের জাতীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয়। এ কমিটি ঘোষণার পর বিএনপি হাইকমান্ড ধরে নিয়েছিল কেন্দ্রীয় কমিটির পদ পাওয়া নেতারা দলে সক্রিয় থাকবেন এবং দ্রুত দলকে গতিশীল করা যাবে। কিন্তু বাস্তবে ঢাউস কমিটির সুফল পায়নি দলটি। পদ পাওয়ার পর অনেক নেতা দলীয় কর্মকা- থেকে দূরত্ব বজায় রাখায় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ঝিমিয়ে পড়া দল বিএনপি আর সে অবস্থান থেকে নড়তে পারেনি। জানা যায়, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাওয়া অধিকাংশ নেতা বিভিন্ন ধরনের ব্যক্তিগত ব্যবসাবাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও দলীয় কর্মকা-ে সময় দিতে চাচ্ছেন না। আবার কোন কোন নেতা পরোক্ষভাবে সরকারী দলের লোকদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে ব্যবসাবাণিজ্যসহ বিভিন্নভাবে আর্থিক লাভবান হওয়াকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। আর এ কারণেই এত বড় একটি কমিটি গঠনের পরও বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচীতে কেন্দ্রীয় নেতাদের তেমন উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান বলেন, দুর্দিনে সবাই দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয় থাকতে চায় না। তবে এটাও ঠিক বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মসূচীতে সক্রিয় থাকলে সরকারী দলের রোষানলে পড়তে হয়। তবুও একটি রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকলে দলীয় কর্মসূচীতে অংশ নিতে হয়। তাই কেউ কেন্দ্রীয় কমিটির পদে থেকে সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া দলীয় কর্মকা-ে সক্রিয় ন থাকলে পরবর্তীতে নিশ্চই তাকে আর মূল্যায়ন করা হবে না। বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে নতুন কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক আলী ফালু পদত্যাগ করেন। তিনি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত হওয়ার পরও কেন পদত্যাগ করলেন তাঁর কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, ব্যবসাবাণিজ্যে প্রভাব পড়তে পারে এমন আশঙ্কা থেকেই তিনি আপাতত বিএনপি থেকে দূরত্ব বজায় রাখার কৌশল নিয়েছেন। একই কারণে বিএনপির আরও অনেক নেতা দলীয় কর্মকা- থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছেন বলে জানা গেছে। এদিকে ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত বিএনপির ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে সবাইকে যথোপযুক্ত পদ দিয়ে নতুন নির্বাহী কমিটি করার কথা বলা হলেও শেষ পর্যন্ত নতুন কমিটিতে সংস্কারপন্থীদের কোণঠাসা করা হয়। সাবেক সেনা প্রধান ও আগের কমিটির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমানের নাম আগের কমিটিতে ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার ও তরিকুল ইসলামের নামের ওপরে থাকলেও এবার স্থায়ী কমিটিতে তাদের পরে তাঁর নাম দেয়া হয়েছে। এ কারণে তিনি বিএনপির কর্মসূচীতে খুব বেশি যান না। এ ছাড়া স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার ও তরিকুল ইসলামকেও আগের মতো দলীয় কর্মসূচীতে অংশ নিতে দেখা যায় না। বিএনপির আগের কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমানকে স্থায়ী কমিটির সদস্য করা হচ্ছে এমন আলোচনা দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মুখে মুখে থাকলেও এবারও তাঁকে একই পদে রাখা হয়েছে। অথচ তার চেয়ে অনেক জুনিয়র আগের কমিটির যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদকে এবার স্থায়ী কমিটির নতুন সদস্য করা হয়েছে। এ ছাড়া এবার বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে নতুন আরেকজন স্থান পেয়েছেন চট্টগ্রামের আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তাঁকে চট্টগ্রামে বিএনপির রাজনীতিতে নিয়ে এসেছিলেন আব্দুল্লাহ আল নোমান। কিন্তু তার স্থান এখন নোমানের অনেক ওপরে হওয়ায় দীর্ঘকাল ধরে রাজনীতি করা আব্দুল্লাহ আল নোমান চরম ক্ষব্ধ হয়েছেন। আর এ কারণেই তিনি এখন দলীয় কর্মকা-ে অংশ নেন না। আবার দলের স্থায়ী কমিটির পদ পেয়েও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী দলীয় অধিকাংশ কর্মকা-েই অনুপস্থিত থাকছেন। বিএনপির আরেক সংস্কারপন্থী নেতা ও আগের কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী ও চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ বর্তমান কমিটিতেও একই পদে আছেন। তবে তাদের দলীয় অধিকাংশ কর্মসূচীতেই অনুপস্থিত থাকতে দেখা যায়। এ ছাড়া ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, মীর নাছির, মেজর (অব) মাহমুদুল হাসান, এনাম আহমেদ চৌধুরী, ব্যারিস্টার আমিনুল হক, বিচারপতি টিএইচ খান, এম মোর্শেদ খান, হারুন আল রশিদ ও রাবেয়া চৌধুরীকে দলের কোন কর্মসূচীতে অংশ নিতে দেখা যায় না। তবে ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, ড. ওসমান ফারুক, মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম ও আব্দুল মান্নানকে মাঝেমধ্যে দলীয় কর্মসূচীতে দেখা যায়। বিএনপির আগের কমিটির অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকার সাবেক ডেপুটি মেয়র আব্দুস সালাম। তাকে এবারের কমিটিতেতে অপেক্ষাকৃত গুরুত্বহীন পদ চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য করা হয়েছে। সংস্কার পন্থী আরেক বিএনপি নেতা আগের কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক ডাকসু ভিপি আমানউল্লাহ আমানকে নতুন কমিটিতে উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য করা হয়েছে। তাই তারা এখন দলীয় কর্মকা-ে অংশ নেন না। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টাদের মধ্যে আরও যে ক’জন দলীয় কর্মকা-ে সক্রিয় নন তাদের মধ্যে রয়েছেন সরোয়ারী রহমান, হারুন অর রশীদ খান মুন্নু, মুশফিকুর রহমান, কবির হোসেন, উকিল আবদুস সাত্তার, লুৎফর রহমান খান আজাদ, আখতার হামিদ সিদ্দিকী, এ কে এম মোশাররফ হোসেন, কাজী মাজহারুল আনোয়ার, এ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান, অধ্যাপক মাজেদুল ইসলাম, জাফরুল হাসান, মনিরুল হক চৌধুরী, মেজর (অব.) সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম, হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, ফজলুল হক আসপিয়া, নুরুল হুদা, সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী, ব্যারিস্টার হায়দার আলী, ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমান খান, অধ্যাপিকা সাহিদা রফিক, তাহমিনা রুশদীর লুনা আফরোজা খান রীতা, মইনুল ইসলাম শান্ত প্রমুখ। বিএনপির আগের কমিটির কোষাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান সিনহাকে পুনরায় কোষাধ্যক্ষ পদ দেয়া হয়েছে। তিনি ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটালেও দলীয় কোন কর্মসূচীতে অংশ নেন না। এ ছাড়া যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, মজিবুর রহমান সারোয়ার ও হারুনুর রশিদ দলীয় কর্মকা-ে অংশগ্রহণ অনিয়মিত। সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে আসাদুল হাবিব দুলু, কর্নেল (অব.) আনোয়ারুল আজিম ও ডাঃ সাখাওয়াত হোসেন জীবন তেমন বেশি দলীয় কর্মসূচীতে অংশ নেন না। আর সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে আবদুল মোমিন তালুকদার খোকা, মাহবুবুল হক নান্নু, দিলদার হোসেন সেলিম, কলিম উদ্দিন মিলন, ওয়ারেস আলী মামুন ও আলী নেয়াজ মাহমুদ খৈয়ামকে দলীয় কর্মকা-ে প্রায়ই অংশ নিতে দেখা যায় না। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের মধ্যে আরও যাদের দলীয় কর্মকা-ে সচরাচর দেখা যায় না তাদের মধ্যে রয়েছেন, কর্মসংস্থান সম্পাদক জাকারিয়া সুমন, স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন, শিল্প সম্পাদক আবুল কালাম (চৈতি কামাল), বাণিজ্য সম্পাদক সালাউদ্দিন আহমেদ, ব্যাংকিং ও রাজস্ব লায়ন হারুন রশিদ, ধর্ম বিষয়ক বদরুজ্জামান খসরু, প্রান্তিক জনশক্তি বিষয়ক আব্দুল মালেক, স্বাস্থ্য বিষয়ক ডাঃ ফওয়াজ হোসেন শুভ ও পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক এ্যাডভোকেট গৌতম চক্রবর্তী। এর বাইরেও বিএনপির আরও বেশ ক’জন নেতাকে সচরাচর দলীয় কর্মকা-ে অংশ নিতে দেখা যায় না।
×